Skip to content

বহুরূপী : প্রশ্ন-উত্তর দশম শ্রেণী বাংলা

Barurupi-Class-10-Bengali-QA-Madhyamik

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

১. পুলিশ সেজে হরিদা কী করেছিল ? 

উত্তরঃ ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে হরিদা একবার পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানের ভিতরে স্কুলের চারটে ছেলেকে ধরেছিলেন । তারপর স্কুলের মাস্টারমশাই এসে ক্ষমা চেয়ে আট আনা ঘুষ দেওয়ায় নকল পুলিশ হরিদা তাদের ছেড়ে দেন ।

২. হরিদার জীবন এইরকম বহু রূপের খেলা দেখিয়েই একরকম চলে যাচ্ছে । কীরকম খেলা দেখিয়ে হরিদার জীবন চলে যাচ্ছে ? 

উত্তরঃ হরিদা পেশায় ছিলেন বহুরূপী । তিনি কখনও পাগল সাজতেন , কখনও বাউল , কখনও কাপালিক , আর কখনো – বা বোঁচকা কাঁধে কাবুলিওয়ালা । এইরকম বহুরূপীর খেলা দেখিয়ে হরিদার জীবন চলে যাচ্ছে । 

৩. ‘ সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস – সেই বস্তুটিকে দুর্লভ বলার কারণ কী ? 

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী গল্পের সন্ন্যাসী , জগদীশবাবু ছাড়া আর কাউকেই পায়ের ধুলো নিতে দেননি । তাই সেই বস্তুটিকে দুর্লভ বলা হয়েছে । 

৪. হরিদা কোথায় থাকেন ? 

উত্তরঃ ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের প্রধান চরিত্র হরিদা শহরের সবচেয়ে সরু গলির ভিতরে একটি ছোট্ট ঘরে থাকেন । 

৫. ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের হরিদা কোন সাজ সেজে সবচেয়ে বেশি আয় করেছিলেন ? 

উত্তরঃ ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের প্রধান চরিত্র হরিদা রূপসি বাইজি সেজে সবচেয়ে বেশি ; মোট আট টাকা দশ আনা রোজগার করেছিলেন । 

৬. ‘ সত্যিই যে বিশ্বাস করতে পারছি না ‘ কী বিশ্বাস করতে পারছে না ? 

উত্তরঃ ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগী – রূপী হরিদাকে দেখে লেখকের সত্যিই বিশ্বাস হয় না যে , এই ব্যক্তিটি আসলে হরিদা । 

৭. জগদীশবাবু তীর্থ ভ্রমণের জন্য কত টাকা বিরাগীকে দিতে চেয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের বহুরূপী গল্প অনুসারে জগদীশবাবু বিরাগী – রূপী হরিদাকে তীর্থ ভ্রমণের জন্য একশো এক টাকা দিতে চেয়েছিলেন ।

৮. হরিদার কাছে লেখক ও তাঁর বন্ধুরা কী গল্প করেছিলেন ? 

উত্তরঃ হিমালয়ের এক উঁচুদরের সন্ন্যাসী জগদীশবাবুর বাড়িতে সাত দিন ছিলেন । তাঁর বয়স হাজার বছরেরও বেশি । তিনি বছরে একটি মাত্র হরীতকী খান । সেই গল্পই লেখক ও তাঁর বন্ধুরা করেছিলেন । 

৯. ‘ গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা । – হরিদার গম্ভীর হওয়ার কারণ কী ? 

উত্তরঃ সর্বস্বত্যাগী সন্ন্যাসী সোনার বোল লাগানো কাঠের খড়ম ও একশো এক টাকা পেয়ে তৃপ্তির হাসি হাসেন । এ কথা শুনে হরিদার বিশ্বাস টলে যায় । তিনি গম্ভীর হয়ে যান । 

১০. চকের বাসস্ট্যান্ডে বহুরূপী হরিদা কী রূপে হাজির হয় ? 

উত্তরঃ কটকটে লাল চোখ , মুখ থেকে লালা ঝরছে , কোমরে ছেঁড়া কম্বল , গলায় টিনের কৌটোর মালা ঝোলানো এক পাগলের ছদ্মবেশে চকের বাসস্ট্যান্ডে হাজির হন হরিদা । 

১১. এবারের মতো মাপ করে দিন ওদের ।’- এ কথা কে , কাকে বলেছিলেন ? 

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী গল্পে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে যখন পুলিশের ছদ্মবেশে হরিদা স্কুলের চারটে ছেলেকে ধরেছিলেন , তখন স্কুলের মাস্টারমশাই এ কথা বলেছিলেন । 

১২. ‘ বড়ো চমৎকার আজকে এই সন্ধ্যার চেহারা । ‘ সন্ধ্যার চেহারাটির বর্ণনা দাও । 

উত্তরঃ সেই সন্ধ্যায় চাঁদের আলোর একটা স্নিগ্ধ ও শান্ত উজ্জ্বলতা ছদ্মবেশে চারদিকে ফুটে উঠেছিল । ফুরফুর করে বাতাস বইছিল । জগদীশবাবুর বাগানের গাছের পাতাগুলো ঝিরঝির শব্দ করছিল । 

১৩. ‘ চমকে উঠলেন জগদীশবাবু । ‘ – জগদীশবাবুর চমকে ওঠার কারণ কী ? 

উত্তরঃ আদুড় গায়ে , সাদা উত্তরীয় জড়ানো , ছোটো সাদা থান , মাথায় সাদা চুল , পায়ে ধুলো মাখা বিরাগীকে দেখে জগদীশবাবু চমকে উঠলেন । 

১৪. ‘ আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়ো ? ‘ কথাটি বক্তা কেন বলেছেন ? 

উত্তরঃ বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে এলে জগদীশবাবু বিরাগীকে দূর থেকে অভ্যর্থনা জানান । এর পরিপ্রেক্ষিতেই বিরাগী উক্ত মন্তব্যটি করেছেন । 

১৫. ‘ না না , হরিদা নয় । হতেই পারে না । ‘ বক্তা ও তার সঙ্গীদের এই বিশ্বাসের কারণ কী ? 

উত্তরঃ বিরাগীর গলার স্বর , মুখের ভাষা ও চোখের দৃষ্টির সঙ্গে হরিদার কোনো মিল না – থাকায় বিরাগীকে বক্তা ও তার বন্ধুদের হরিদা বলে মনে হয়নি । 

১৬. জগদীশবাবুকে বিরাগী কী উপদেশ দেন ? 

উত্তরঃ বিরাগী জগদীশবাবুকে বলেন , ধন – জন – যৌবন আসলে মোহময় বঞ্চনা । মন – প্রাণ দিয়ে একজনের আপন হতে চেষ্টা করলে সৃষ্টির সব ঐশ্বর্যই লাভ করা যায় | 

১৭. ” তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায় । ‘ বক্তা কোন প্রসঙ্গে উক্তিটি করেছেন ? 

উত্তরঃ এক্ষেত্রে বক্তা হলেন হরিদা । জগদীশবাবু বিরাগী বেশি হরিদাকে প্রণামী দিতে গেলে তিনি তা নেন না । কারণ সে বিরাগীর ছদ্মবেশে টাকা নিলে তাতে অভিনয়ের ঢং নষ্ট হয় । 

১৮. নইলে আমি শান্তি পাবো না – বক্তা কী না হলে শান্তি পাবেন না ? 

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী গল্পে জগদীশবাবু বিরাগীর বেশধারী হরিদাকে কিছু উপদেশ শুনিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করে বলেছিলেন যে , না হলে তিনি শাস্তি পাবেন না । 

১৯. ‘ কিন্তু সেটাই যে হরিদার জীবনের পেশা । ‘ হরিদার পেশা কী ছিল ? 

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের নায়ক হরিদা মাঝে মাঝে বহুরূপী সেজে সামান্য রোজগার করে ভাতের হাঁড়ির দাবি মিটিয়ে দিতে চেষ্টা করেন । এটাই তার পেশা । 

২০. ‘ চমৎকার পাগল সাজতে পেরেছে তো লোকটা । ‘ ‘ লোকটা ‘ কে ? 

উত্তরঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশে ‘ লোকটা ‘ বলতে সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের নায়ক হরিদাকে বোঝানো হয়েছে । 

  1. “ চমকে উঠলেন জগদীশবাবু ” – জগদীশবাবুর চমকে ওঠার কারণ কী ?

Ans: ‘ বহুরূপী ’ গল্পে আদুড় গা , তার উপর একটি ধবধবে সাদা উত্তরীয় এবং ছোটো বহরের সাদা থান পরিহিত এক সন্ন্যাসীকে হঠাৎ দেখে জগদীশবাবু চমকে উঠলেন ।

  1. বিরাগীর মতে ‘ পরমসুখ ‘ কী ?

Ans:  বিশিষ্ট গল্পকার সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে বিরাগীর মতে , ‘ পরমসুখ ‘ হলো সমস্ত সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া । 

  1. কোন ধরনের কাজ হরিদার পছন্দ ছিল না ?

Ans:  কোনো অফিসের কাজ কিংবা কোনো দোকানের বিক্রিওয়ালার কাজ হরিদার পছন্দ ছিল না ।

  1. “ হরিদার জীবন এইরকম বহুরূপের খেলা দেখিয়েই একরকম চলে যাচ্ছে ” —কীরকম খেলা দেখিয়ে হরিদার জীবন চলে যাচ্ছে ?

Ans:  ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে বিভিন্ন সময়ে পাগল , বাইজি , পুলিশ , বাউল , কাপালিক , ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেবের ছদ্মবেশ ধারণ করে খেলা দেখিয়েই হরিদার জীবন চলে যাচ্ছে । 

  1. তীর্থযাত্রা সম্পর্কে বিরাগীর অভিমত কী ?

Ans:  তীর্থযাত্রা সম্পর্কে বিরাগীর অভিমত হলো তার বুকের ভেতরেই যেহেতু সব তীর্থ , তাই ভ্রমণ করে দেখবার আর কোনো দরকার পড়ে না । 

  1. “ ছিল একদিন , সেটা পূর্বজন্মের কথা ” –বক্তা ছিল একদিন বলতে কী বুঝিয়েছেন ?

Ans: বক্তা হরিদা উদ্ধৃতাংশে রাগ নামক রিপুর কথা উল্লেখ করেছেন ।

  1. “ নইলে আমি শান্তি পাব না ” বক্তা কী না হলে শান্তি পাবেন না ?

Ans:  জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত জনৈক বিরাগী সন্ন্যাসী বস্তুা জগদীশবাবুকে কিছু উপদেশ না শুনিয়ে গেলে তিনি শাস্তি পাবেন না ।

  1. ” সন্ন্যাসী হাসলেন আর চলে গেলেন ” – সন্ন্যাসীর হাসির কারণ কী ?

Ans:  সন্ন্যাসীকে তার বাড়ি থেকে বিদায় দেবার সময় জগদীশবাবু একশো টাকার একটা নোট জোর করে তাঁর ঝোলার ভেতর ফেলে দিয়েছিলেন । এতেই সন্ন্যাসী হাসলেন আর চলে গেলেন ।

  1. “ কী অদ্ভুত কথা বললেন হরিদা । ” হরিদার কোন কথাকে অদ্ভুত বলে মনে হয়েছিল ?

Ans: একজন বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকা স্পর্শ করলে ঢং নষ্ট হয়ে যাবে ।

  1. ” আক্ষেপ করেন হরিদা ” – হরিদার আক্ষেপের কারণ কী ? 

Ans: বিরাগী সন্ন্যাসী জগদীশবাবুর বাড়ি থেকে চলে যাওয়ায় হরিদা আক্ষেপ করেন ।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

১. ‘ বাঃ , এ তো বেশ মজার ব্যাপার ! —কোন ঘটনাকে মজার ব্যাপার বলা হয়েছে ? ঘটনাটি মজার কেন ?

উত্তরঃ ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে জগদীশবাবুর বাড়িতে হিমালয় থেকে যে সন্ন্যাসী এসেছিলেন , তিনি এতই উঁচু দরের যে , কাউকে পদধূলি গ্রহণের ঘটনার পরিচয় অনুমতি পর্যন্ত দিতেন না । শেষপর্যন্ত জগদীশবাবু তাঁর কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে পায়ের সামনে ধরলে সন্ন্যাসী পা এগিয়ে দিয়েছিলেন । এভাবে একমাত্র জগদীশবাবুই তাঁর পদধূলি পেতে সক্ষম হয়েছিলেন । মুখ্য চরিত্র হরিদার মতে , ঘটনাটি মজার । কারণ , সর্বস্বত্যাগী হিমালয়বাসী সন্ন্যাসী ও সোনার আকর্ষণ অগ্রাহ্য করতে পারেননি । 

২. ঘটনাটি মজার কেন ‘ কিন্তু কাজ করতে হরিদার প্রাণের মধ্যেই যেন একটা বাধা আছে ? — কোন কাজের কথা বলা হয়েছে ? ‘ হরিদার প্রাণের মধ্যেই যেন একটা বাধা আছে ? —বাক্যটির অর্থ পরিস্ফুট করো ।

উত্তরঃ ‘ বহুরূপী ’ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশে ‘ কাজ ‘ বলতে যে – কোনো নিয়মমাফিক ঘড়িধরা সময়ের চাকরির কথা বলা হয়েছে । হরিদা নিজের খুশিমতো বহুরূপী সাজেন ; যখন ইচ্ছা , যেদিন ইচ্ছা । প্রশ্নোদৃত বাক্যের কিন্তু যে কাজে বাধ্যবাধকতা রয়েছে , সে – কাজ অর্থ পরিস্ফুটন করার মতো মানসিকতা তাঁর নেই । তিনি মুক্ত পুরুষ । সংসারে যেমন তাঁর কোনো বন্ধন নেই , তেমনি আর্থিক বন্ধনেও জড়িয়ে পড়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় । হরিদার শিল্পীস্বভাব এবং অন্তর্মনের বৈরাগ্যই এর প্রধান কারণ ।

৩. ‘ হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে ? —জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র্য বলতে কী বোঝ ? হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্যটি কী ?

উত্তরঃ ‘ নাটকীয় ‘ শব্দটির অর্থ হল যা নাটকের মতো , অর্থাৎ ঘটনাবহুল বৈচিত্র্যময় দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে মানুষের জীবনে । নাটকীয় বৈচিত্র্য নাটকীয়তা থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন । তবেই জীবন উপভোগ্য হয়ে ওঠে । এখানে সেই ব্যতিক্রমকেই নাটকীয় বৈচিত্র্য বলা হয়েছে । হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য ছিল তাঁর বৃত্তি অর্থাৎ বহুরূপী সেঙে মানুষকে চমকে দেওয়ার পেশা । এতে তাঁর রোজগার সামান্য হলেও তাঁর জীবনে বৈচিত্রা এনে দেয় এই পেশা ।

৪. ‘ হরিদার কাছে আমরাই গল্প করে বললাম , – হরিদা কে ? তাঁর কাছে বক্তা কী গল্প করেছিল ?

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের মুখ্য চরিত্র হল হরিদা । হরিদার পরিচয় তিনি পেশায় একজন বহুরূপী । তাঁর জীবনে অনেক অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজের পেশার প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল ছিল । বক্তা ও তাঁর বন্ধুরা হরিদাকে জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা সন্ন্যাসীর কথা জানিয়েছিলেন । হিমালয় থেকে আসা সেই সন্ন্যাসী সারাবছরে শুধু একটা হরীতকী খান । সন্ন্যাসী হলেও তিনি জগদীশবাবুর কাছ থেকে সোনার বোল লাগানো কাঠের খড়ম ও একশো এক টাকা দক্ষিণা গ্রহণ করেছিলেন । 

৫. ‘ খুব উঁচু দরের সন্ন্যাসী । — সন্ন্যাসীর পরিচয় দাও ।  

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে আমরা এক সন্ন্যাসীর পরিচয় পাই । পাড়ার ধনী ব্যক্তি জগদীশবাবুর বাড়িতে সেই সন্ন্যাসী সাত দিন ছিলেন । তিনি সন্ন্যাসীর পরিচয় হিমালয়ের গুহায় থাকতেন । তাঁর সারাবছরের খাদ্য একটি মাত্র হরীতকী , বয়স হাজারেরও বেশি । তাঁর পদধুলি দুর্লভ , জগদীশবাবু ছাড়া কেউ পাননি । তবে এহেন সর্বস্বত্যাগীর প্রকৃত স্বরূপ বোঝা যায় তখন , যখন জগদীশবাবুর দেওয়া সোনার বোল লাগানো কাঠের খড়ম ও একশো টাকার নোট সানন্দ চিত্তে গ্রহণ করেন ।

  1. “ গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা ” – হরিদা কে ছিলেন ? কোন গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন ? 

Ans: লেখক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘ বহুরূপী ‘ নামক গল্পের কেন্দ্রীয় পেশাদার বহুরূপী চরিত্র ছিলেন হরিদা । 

লেখক সহ অন্য বন্ধুরা হরিদাকে জানিয়েছিলেন যে , সাতদিন ধরে এক সন্ন্যাসী এসে জগদীশবাবুর বাড়িতে ছিলেন । খুব উঁচুদরের সন্ন্যাসী , হিমালয়ের গুহাতে থাকেন । সারাবছর শুধু একটি ‘ হরীতকী ‘ খান , এছাড়া আর কিছুই খান না । সন্ন্যাসীর বয়স হাজার বছরের বেশি বলে মনে করা হয় । সন্ন্যাসী কাউকেই পদধূলি দেন না । জগদীশবায়ু একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল  লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ে ধরলে বাধ্য হয়ে সন্ন্যাসী পা এগিয়ে দিলেন । এই নতুন খড়ম পরার ফাঁকেই জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন । 

  1. “এবার মারি তো হাতি , লুঠি তো ভাঙার ” –বক্তা কে ? তিনি কোন উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছেন ?

Ans: প্রখ্যাত লেখক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশের বক্তা হলেন বহুরূপী হরিদা ।

‘ বহুরূপী ’ সেজে হরিদা যে উপার্জন করতেন তা ছিল অত্যন্ত সামান্য । আর তাই যখন জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর খাতির – যত্নের কথা শোনের তখন সিদ্ধান্ত নেন সেখানেই বহুরূপী সেজে গিয়ে মোটা কিছু আদায় করে নেবেন । পুরোদিনটা ঘুরে বেড়িয়েও তার উপার্জন হয় সামান্যই । এজন্য কাঙালের মতো বকশিশ নেওয়া থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে একেবারে এমন উপার্জন করবেন যাতে তার সারাবছর চলে যায় – এই উদ্দেশ্যেই তিনি প্রশ্নোধৃত কথাটি বলেছেন ।

  1. “ তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায় । ” বক্তা কে ? ‘ ঢং ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? কীসে ঢং নষ্ট হয়ে যাবে ?

Ans: কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে আলোচ্য কথাগুলি গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা আলোচ্য উক্তিটির বক্তা । 

 গল্পে ‘ ঢং ‘ বলতে ‘ বহুরূপী ‘ সেজে হরিদা যে অভিনয় করতেন সেটাই বোঝানো হয়েছে । 

 হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হন বেশ কিছু উপার্জনের আশা নিয়ে । হরিদাকে প্রকৃত বিরাগী মনে করে জগদীশবাবু তাকে আতিথ্য গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন । হরিদা আতিথ্য প্রত্যাখ্যান করলে জগদীশবাবু হরিদাকে তীর্থ ভ্রমণের জন্য একশো এক টাকা প্রণামি দিতে চান । এই অর্থ গ্রহণ করলে হরিদার বহুরুপী পেশা নষ্ট হয়ে যাবে , তাই তিনি প্রকৃত সন্ন্যাসীর মতো এই অর্থ প্রত্যাখ্যান করেন । 

  1. “ আজ তোমাদের একটা জবর খেলা দেখাব । ” “ জবর খেলাটি সংক্ষেপে লেখো ।

  অথবা , “ আজ তোমাদের একটা জবর খেলা দেখাব । ” কথাটি কে , কাকে বলেছিলেন ? বক্তা কোন জবর খেলা দেখিয়েছিলেন ?

Ans:  কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে আলোচ্য কথাগুলি গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা কথক ও তার বন্ধুদের উদ্দেশে বলেছিলেন । 

বহুরূপী সেজে টাকা রোজগার করাই ছিল হরিদার নেশা এবং পেশা । তাই সন্ন্যাসীর গল্প শুনে তাদের একটি জবর খেলা দেখাবার আগ্রহ প্রকাশ করেন হরিদা । হরিদা একটা সাদা উত্তরীয় কাধে , ছোটো বহরের একটি থান পরে , একটি ঝোলা নিয়ে রীতিমতো বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে যান । জগদীশবাবু হরিদার চেহারা দেখে ও কথাবার্তা শুনে মুগ্ধ হন । হরিদাকে তিনি আতিথ্য গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন এবং তীর্থ ভ্রমণের জন্য প্রণামি হিসাবে একশো এক টাকা দিতে চান । কিন্তু হরিদা খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো এই দেখিয়েছিলেন । অর্থ প্রত্যাখ্যান করে বেরিয়ে আসেন । এরকম ছদ্মবেশ ধারণ করেই হরিদা জবর খেলা দেখিয়েছিলেন।

  1. “ ঠিক দুপুরবেলাতে একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল ” – কোথায় হল্লা বেজে উঠেছিল ? ‘ আতঙ্কের হল্লা ‘ বেজে ওঠার কারণ কী ?

Ans:গল্পকার সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে ‘ আতক্ষের হল্লা ‘ বেজে উঠেছিল ঠিক একদিন দুপুরবেলা চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে।

একদিন  দুপুরবেলাতে চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে । হঠাৎ – ই এক উন্মাদ পাগলের আবির্ভাব ঘটে । সেই বন্ধপাগলের মুখ থেকে লালা ঝরে পড়ছিল । তার চোখ দু’টে ছিল কটকটে লাল । আর কোমরে ছেঁড়া কম্বল ও গলায় ঝুলছিল টিনের কৌটার একট মালা । সেই বদ্ধপাগলটা আবার— “ একটা থান ইট হাতে তুলে নিয়ে বাসের উপরে বসা যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল । ” আর এসব দেখেই বাসের যাত্রীরা চেঁচিয়ে ওঠায় ‘ আতঙ্কের হল্লা ’ বেজে উঠেছিল ।

  1. “ এটা আমার প্রাণের অনুরোধ । ” অনুরোধটি কী ছিল ? এই অনুরোধের প্রতিক্রিয়ায় কী উত্তর শোনা গিয়েছিল ? 

Ans: গল্পকার সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে ধর্মভীরু জগদীশবাবুর ‘ প্রাণের অনুরোধ’ ছিল বিরাগীজি যেন তাঁর কাছে কয়েকটা দিন থাকেন । 

এই অনুরোধের প্রতিক্রিয়ায় বিরাগীজি বলেন যে বাইরে খোলা আকাশ ও ধরিত্রীর মাটিতে স্থান থাকতে তিনি কেন জগদীশবাবুর মতো একজন বিষয়ীর দালানবাড়ির ঘরে আশ্রয় নেবেন ।

  1. “ তবে কিছু উপদেশ দিয়ে যান ” –বক্তা কে ? তিনি কী উপদেশ দিতে বলেন ?

Ans: লেখক সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে উল্লিখিত অংশটির বক্তা হলেন জগদীশবাবু । বিরাগী তাঁকে উপদেশ দিয়েছিলেন — ধন – জন – যৌবন কিছুই নয় । ওসব হলো সুন্দর সুন্দর এক এক – একটি বঞ্চনা । মন – প্রাণের সব আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শুধু সেই একজনের আপন হতে চেষ্টা করতে হবে যাকে পেলে এই সৃষ্টির সব ঐশ্বর্য পাওয়া হয়ে যায় ।

  1. ” সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস ‘ — এখানে ‘ দুর্লভ জিনিস ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? তাকে দুর্লভ বলা হয়েছে কেন ? 

Ans: কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটিতে দুর্লভ জিনিস ‘ বলতে সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলোকে বোঝানো হয়েছে । 

জগদীশবাবুর বাড়িতে সাতদিন ধরে এক সন্ন্যাসী ছিলেন । তিনি ছিলেন খুব উঁচু দরের । কারণ তিনি হিমালয়ের গুহাতে থাকতেন এবং সারাবছরে শুধু একটি হরতুর্কি খেতেন । অনেকের মতে সন্ন্যাসীর বয়স হাজার বছরের বেশি । তাই এই সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নেওয়াকে দুর্লভ বলা হয়েছে ।

  1. ” তবে কিছু উপদেশ দিয়ে যান ” -ৰস্তা কে ? তিনি কী উপদেশ দিতে বলেন ?

Ans: লেখক সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে উল্লিখিত অংশটির বস্তা হলেন জগদীশবাবু । বিরাগী তাকে উপদেশ দিয়েছিলেন — ধন – জন – যৌবন কিছুই নয় । ওসব হলো সুন্দর সুন্দর এক এক – একটি বঞ্চনা । মন – প্রাণের সব আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শুধু সেই একজনের আপন হতে চেষ্টা করতে হবে যাকে পেলে এই সৃষ্টির সব ঐশ্বর্য পাওয়া হয়ে যায়।

  1. “ সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস ” -এখানে ‘ দুর্লভ জিনিস ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? তাকে দুর্লভ বলা হয়েছে কেন ?

Ans: কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটিতে ‘ দুর্লভ ‘ জিনিস ‘ বলতে সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলোকে বোঝানো হয়েছে ।

জগদীশবাবুর বাড়িতে সাতদিন ধরে এক সন্ন্যাসী ছিলেন । তিনি ছিলেন খুব উঁচু দরের । কারণ তিনি হিমালয়ের গুহাতে থাকতেন এবং সারাবছরে শুধু একটি হরতুকি খেতেন । অনেকের মতে সন্ন্যাসীর বয়স হাজার বছরের বেশি । তাই এই সন্ন্যাসীর পায়ের ধূলো নেওয়াকে দুর্লভ বলা হয়েছে ।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

১. ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে জগদীশবাবুর চরিত্রটি ব্যাখ্যা করো। 

উত্তরঃ ‘ সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের একটি পার্শ্বচরিত্র হল জগদীশবাবুর চরিত্রটি । চরিত্রটি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না । তার মধ্যেও যেটুকু জানা যায় , তা হল , জগদীশবাবু বয়স্ক মানুষ । তাঁর সাদা চুল , সাদা দাড়ি , সৌম্য , শান্ত চেহারা । তিনি ধনী হলেও কৃপণ । পাড়ার ছেলেদের নানা আবদারে চাঁদা দিয়ে থাকেন । জগদীশবাবুর দুর্বলতম স্থান হল তাঁর মনের অন্ধভক্তি । সুখ ও শান্তির সন্ধানে তিনি সন্ন্যাসী গোছের লোক দেখলেই তাকে খুশি করার চেষ্টা করেন ; তা সে কাঠের খড়মে সোনার বোল পরিয়েই হোক বা একশো টাকা প্রণামী দিয়েই হোক । তাঁর এই মানসিকতার জন্যই ভণ্ড সন্ন্যাসীর পাল্লায় পড়ে তাঁকে বোকা বনতেও হয় , যদিও তিনি নিজে তা বোঝেন না । এই স্বভাবটিকে ভরসা করেই হরি বহুরূপীও তাঁকে বিরাগী সন্ন্যাসীর দর্শন করিয়ে দেয় । ধনী হওয়া সত্ত্বেও সন্ন্যাসীর কাছে মাথা নত করেছেন জগদীশবাবু । প্রকৃত সত্য না জেনে হরির কাছে বোকা বনলেও জগদীশবাবুর শ্রদ্ধাভক্তি ছিল খাঁটি । 

২. আজ তোমাদের একট জবর খেলা দেখাব । বক্তার এই জবর খেলা দেখানোর উদ্দেশ্য কী ছিল ? শেষপর্যন্ত এই খেলার পরিণতিই বা কী হয়েছিল ? 

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প থেকে উপরের উদ্ধৃতিটি নেওয়া । পাঠ্য কাহিনি অনুসারে গ্রামের বিখ্যাত ধনী , জনৈক জগদীশবাবুর বাড়িতে হিমালয়ের গুহা থেকে এক উঁচু দরের সন্ন্যাসীর আগমন ঘটে । বহুরূপী হরিদা পাড়ার ছেলেদের কাছ থেকে তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন ঘটনা শুনে টের পান যে , তিনি প্রকৃত সন্ন্যাসী নন । সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর প্রকৃত স্বরূপ কেমন হওয়া উচিত তা বোঝাতেই , এরপর হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করেন । 

   বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদা সকলকে বিস্মিত করেছিলেন । জ্যোৎস্নালোকিত রাতের স্নিগ্ধ পরিবেশে তাঁর আদুড় গায়ের ওপর সাদা উত্তরীয় এবং পরনে ছোটো বহরের থান আর হাওয়ায় উড়তে থাকা চুল ও কাঁধে ঝোলার মধ্যে থাকা গীতা— সব মিলিয়ে মনে হয়েছিল যেন তিনি জগতের সীমার ওপার থেকে হেঁটে এসেছেন । হরিদার চোখের উদাত্ত উজ্জ্বল দৃষ্টি – কণ্ঠস্বর ও মুখের ভাষায় : জগদীশবাবুর হৃদয় করুণাময় সজল হয়ে উঠেছিল । তিনি এই সর্বত্যাগী বিরাগীকে তুষ্ট করতে তীর্থভ্রমণের অজুহাতে প্রণামী হিসেবে একশো এক টাকা নিবেদন করেন । কিন্তু বহুরূপী হরিদার অন্তরের বৈরাগ্য এবং নিজ শিল্পের প্রতি আন্তরিক সততার কারণে তিনি , সেই টাকার থলি হেলায় ফেলে দিয়ে চলে আসেন । তাতে যে তার ঢং নষ্ট হয়ে যেত । তবে সত্যিকারের বিরাগী সন্ন্যাসী দর্শন করানোর জন্য জগদীশবাবুর কাছ থেকে সামান্য বকশিশ আদায়ের দাবিটুকুকেই হরিদা , পাথেয় বলে স্থির করেছিলেন ।

৩. ‘ বহুরূপীর জীবনের যে মর্মান্তিক বেদনার কথা ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের মাধ্যমে বোঝাতে চাওয়া হয়েছে তা নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করো । অথবা , খাঁটি মানুষ তো নয় , এই বহুরূপীর জীবন এর বেশি কী আশা করতে পারে ? ‘ — বহুরূপী জীবনের এই ট্র্যাজেডি পাঠ্য ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অবলম্বনে আলোচনা করো । 

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পের প্রধান চরিত্র হরিদা এক আশ্চর্য মানুষ । তিনি গরিব হলেও কেবল পেটের দায়ে গতে বাঁধা কাজ করতে চান না । নির্লোভ , চিন্তাশীল , স্বাধীনচেতা ও শিল্পীমনের অধিকারী হরিদা , দৈনন্দিন অভাবের সঙ্গে অভ্যস্ত হলেও কাজ নামক দিনগত পাপক্ষয়ের থেকে শতহাত দূরে থাকতেই ভালোবাসেন । তাঁর জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য হল , তিনি বহুরূপের কারবারী । মাঝে মাঝে তাঁকে কেমন উপোস করে কাটাতে হয় , তেমনই হঠাৎ একদিন তিনি বিচিত্র ছদ্মবেশে অপরূপ হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন । কখনও পাগল সেজে হরিদা চকের বাস স্ট্যান্ডের কাছে আতঙ্কের হল্লা তোলেন , আবার কখনও সন্ধ্যার মায়াময় আলোয় রূপসি বাইজি সেজে উপস্থিত সকলকে স্তম্ভিত করে দেন । নিজের পেশায় হরিদা এতটাই পারদর্শী যে স্থানীয় স্কুলের মাস্টারমশাইও তাঁকে নকল – পুলিশ বলে চিনতেই পারেন না । এ হেন হরিদা পাড়ার ছেলেদের মুখে জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা ভণ্ড সন্ন্যাসীর গল্প শুনে , তাদের সত্যিকারের বিরাগী সন্ন্যাসী দর্শন করানোর কথা ভাবেন । সেই চন্দ্রালোকিত রাতে জগদীশবাবুর বাড়িতে হাজির হয় এক অন্য হরিদা । সে সাজহীন – অলংকারহীন এক সামান্য বিরাগী । তবে তাঁর আচরণ , মুখের ভাষা , তত্ত্বজ্ঞান এবং উদাত্ত – উজ্জ্বল চোখের দৃষ্টি সবাইকে মুগ্ধ ও উদ্বেল করে তোলে । প্রকৃত সন্ন্যাসীর মতোই জগদীশবাবুর দেওয়া একশো এক টাকা তিনি হেলায় ফেলে দিয়ে চলে আসেন । কারণ প্রকৃত বৈরাগ্যের অধিকারী হরিদার কাছে তখন শিল্প ও জীবন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় । আসলে তিনি শুধু নিছক বহুরূপের কারবারীমাত্র নন , সততা – শিল্পীস্বভাব ও জীবনদর্শনে একজন অসামান্য মানুষ । কিন্তু সমাজে সামান্য হরি বহুরূপীর মধ্যে লুকিয়ে থাকা এমন দেবতাসুলভ অসামান্যতা কোনোদিন তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা পায় না । জীবনের এই মর্মান্তিক বেদনা – যন্ত্রণা ও ট্র্যাজেডিকে মেনে নিয়েই , তাই নির্লিপ্তভাবে তিনি কেবল বকশিশটুকুই ন আশা করেন । 

৪. জগদীশবাবুর বাড়ি হরিদা বিরাগী সেজে যাওয়ার পর যে ঘটনা ঘটেছিল তা বর্ণনা করো । 

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প অনুসারে এক স্নিগ্ধ ও শাস্ত জ্যোৎস্নালোকিত উজ্জ্বল সন্ধ্যায় জগদীশবাবু বারান্দার চেয়ারে বসেছিলেন । হঠাৎ বারান্দার সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন । কারণ সিঁড়ির কাছে এমন একজন দাঁড়িয়েছিলেন যিনি জটাজুটধারী , হাতে কমণ্ডলু , চিমটে , মৃগচর্মের আসন – সহ গৈরিক বসন পরিহিত কোনো সন্ন্যাসী নয় , তিনি একজন বিরাগী , যার আদুড় গা , তার উপরে একটি ধবধবে সাদা উত্তরীয় । পরনে ছোটো বহরের থান । তার শীর্ণ শরীর দেখে মনে হচ্ছিল যেন অশরীরী এবং তাঁর চোখ থেকে ঝরে পড়ছিল উদাত্ত শান্ত এক উজ্জ্বল দৃষ্টি । ভক্তের সেবার ইচ্ছাকে মান্যতা দিয়ে গ্রহণ করেছেন মাত্র এক গ্লাস জল । থাকার ও দান গ্রহণের অনুরোধ সবই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করেছেন তিনি । জগদীশবাবু উপদেশ শুনতে চাইলে তিনি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই বলেছেন পরমেশ্বরের দেখা পেলেই সমস্ত ঐশ্বর্য পাওয়া যায় । তাঁকে তীর্থ ভ্রমণের অজুহাতে প্রণামী দিতে চাইলে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তিনি বলেন হৃদয়ের মধ্যেই তো সব তীর্থ । বিরাগী চরিত্রটি পূর্ণতা পায় তারই উক্তিতে , ” আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি , তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি । ” সত্যিই তা করতে জগদীশবাবুর দেওয়া প্রণামীর টাকার থলিটা সিঁড়িতে পড়ে থাকলেও সেদিকে না তাকিয়ে তিনি চলে যান ।

৫. “ চমকে উঠলেন জগদীশবাবু । – জগদীশবাবুর পরিচয় দাও । তার চমকে ওঠার কারণ আলোচনা করো । 

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে জগদীশবাবু একটি পার্শ্বচরিত্র । তিনি শিক্ষিত , মার্জিত ও ভদ্র , সৌম্য – শান্ত চেহারার অধিকারী , ধনী হলেও কৃপণ । তাঁর জীবনের দুর্বলতা হল তাঁর অন্ধভক্তি । সুখ – শান্তির আশায় সাধু – সন্ন্যাসী দেখলেই তাদের তিনি তুষ্ট করার চেষ্টা করতেন । এর জন্য অবশ্য তিনি মাঝেমধ্যেই ঠকেছেন । 

  এক স্নিগ্ধ ও শান্ত জ্যোৎস্নালোকিত উজ্জ্বল সন্ধ্যায় জগদীশবাবু বারান্দার চেয়ারে বসেছিলেন । হঠাৎ বারান্দার সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন । তাঁর চোখের পাতা পড়ছিল না । কারণ সিঁড়ির কাছে এমন একজন দাঁড়িয়েছিলেন যিনি জটাজুটধারী , হাতে কমণ্ডলু , চিমটে , মৃগচর্মের আসন – সহ গৈরিক বসন পরিহিত কোনো সন্ন্যাসী নয় , তিনি একজন বিরাগী , যার আদুড় গা , তার ওপরে একটি ধবধবে সাদা উত্তরীয় । পরনে ছোটো বহরের খান । তার মাথার শুকনো চুলগুলো বাতাসে উড়ছে , হাত পা ধুলো মাখা , কাঁধে একটা ঝোলা , যার মধ্যে একটি মাত্র বই গীতা । জগদীশবাবুর তাঁকে দেখে মনে হয়েছিল তিনি যেন জগতের সীমার ওপার থেকে হেঁটে চলে এসেছেন । তার শীর্ণশরীর দেখে মনে হচ্ছিল যেন অশরীরী এবং তাঁর চোখ থেকে ঝরে পড়ছিল উদাত্ত শান্ত এক উজ্জ্বল দৃষ্টি । 

৬. ‘ তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যাবে । – বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন ? এই উক্তির আলোকে বক্তার চরিত্র বিশ্লেষণ করো । 

উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প থেকে গৃহীত । বক্তা হলেন গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র বহুরূপী হরিদা । হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীর ছদ্মবেশে খেলা দেখাতে গিয়ে প্রণামীর টাকা না নিয়ে ফিরে এসেছিল । অবাক গল্পের কথক ও তার বন্ধু অনাদি , ভবতোষরা অভাবী হরিদাকে টাকা না নেওয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে , হরিদা অভিনয়ের প্রতি শ্রদ্ধা এবং একজন আদর্শ শিল্পীর মর্যাদার প্রসঙ্গ তুলে কথাটি বলেছেন ।

হরিদা শুধুমাত্র পেশাগত জীবনে বহুরূপী নয় , তার ব্যক্তিগত জীবনও নাটকীয় বৈচিত্র্যে ভরা । আপাতদৃষ্টিতে সমাজে অবহেলিত এই পেশায় নিযুক্ত মানুষের মধ্যেও যে সততা , নিষ্ঠা , শ্রদ্ধার মতো গুণগুলি বেঁচে আছে তা লেখক দেখাতে চেয়েছেন এই গল্পে । অভাব হরিদার নিত্যসঙ্গী । হরিদা কিন্তু সেই অভাবকে দূরে সরিয়ে দিতে গতে বাঁধা জীবনের পথে পা বাড়ায়নি । এসব সম্ভব হয় একমাত্র তার নির্লোভ ও সংযমী জীবনযাপনের জন্যই । তাই জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীর ছদ্মবেশে খেলা দেখাতে গিয়ে অভাবী হরিদা তার দেওয়া সমস্ত সুযোগ প্রত্যাখ্যান করে । কথক ও তার বন্ধুরা যখন অভাবী হরিদাকে প্রণামী না নেওয়ার জন্য কাঠগড়ায় তুলেছে , হরিদা তখন শিল্প ও শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নির্লিপ্তভাবে বলেছেন , ” তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যাবে । ” 

৭. ‘ আমি বিরাগী , রাগ নামে কোনো রিপু আমার নেই । -বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন ? এই উক্তির প্রেক্ষিতে বক্তার চরিত্র গল্পে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তা আলোচনা করো । 

উত্তরঃ প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে উদ্‌ধৃত অংশটির বক্তা হলেন ছদ্মবেশী বিরাগী । হরিদা যখন বিরাগীর ছদ্মবেশে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন , জগদীশবাবু তখন এগিয়ে এসে তাঁকে অভ্যর্থনা না জানালে বিরাগী রুষ্ট হন । ভয় পেয়ে জগদীশবাবু অপরাধ স্বীকার করে নেন এবং বিরাগীকে অনুরোধ করেন তার ওপর রাগ না করার জন্য । ছদ্মবেশী বিরাগী এই প্রসঙ্গেই উক্তিটি করেছেন । সন্ন্যাসীর চরিত্র প্রকৃতপক্ষে কেমন হওয়া উচিত এ কথা পাঠকদের বোঝাতেই লেখক যেন চরিত্রটি সৃষ্টি করেছেন । জগদীশবাবুর বাড়িতে হিমালয় থেকে আসা সন্ন্যাসীর পাশাপাশি বিরাগীর চরিত্রটি রাখলে তা সহজেই অনুমান করা যায় । বিরাগী প্রথমে জগদীশবাবুর অহংকারে আঘাত করেছেন , তাকে অপরাধ স্বীকার করিয়েছেন । আবার সত্যিকার বিরাগীর মতো তাকে ক্ষমাও করেছেন । ভক্তের সেবার ইচ্ছাকে মান্যতা দিয়ে গ্রহণ করেছেন মাত্র এক গ্লাস জল । থাকার ও দান গ্রহণের অনুরোধ সবই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করেছেন তিনি । জগদীশবাবু উপদেশ শুনতে চাইলে তিনি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই বলেছেন পরমেশ্বরের দেখা পেলেই সমস্ত ঐশ্বর্য পাওয়া যায় । তাঁকে তীর্থ ভ্রমণের অজুহাতে প্রণামী দিতে চাইলে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তিনি বলেন হৃদয়ের মধ্যেই তো সব তীর্থ । বিরাগী চরিত্রটি পূর্ণতা পায় তারই উক্তিতে , “ আমি যেমন আনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি , তেমনি সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি । ” সত্যিই তা করতে জগদীশবাবুর দেওয়া প্রণামীর টাকার থলিটা সিঁড়িতে পড়ে থাকলেও সেদিকে না তাকিয়ে তিনি চলে যান ।

  1. “ এই শহরের জীবনে মাঝে মাঝে বেশ চমৎকার ঘটনা সৃষ্টি করেন বহুরূপী হরিদা । ” যে চমৎকার ঘটনাগুলি হরিদা ঘটিয়েছিলেন তার উল্লেখ করো ।

Ans: বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে হরিদা বহুরূপীর বেশে শহরের জীবনে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ঘটনা ঘটাতেন । বাঁধাধরা জীবন পছন্দ নয় বলেই হরিদা বহুরূপীর জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন ।

    একদিন হরিদা উন্মাদ পাগলের সাজে চকের বাসস্ট্যান্ডে আতঙ্কের হল্লা তুলেছিলেন । তাঁর মুখ থেকে লালা ঝরে পড়ছিল , দু’চোখ ছিল কটকটে লাল । কোমরে তাঁর ছেঁড়া কম্বল জড়ানো , গলায় টিনের কৌটার মালা আর হাতে একটা থান ইট তুলে নিয়ে তিনি যাত্রীদের দিকে মাঝে মাঝে তেড়ে যাচ্ছিলেন । 

     আর এক কর্মব্যস্ত সন্ধ্যায়— ” হঠাৎ পথের উপর দিয়ে ঘুঙুরের মিষ্টি শব্দ রুমঝুম করে বেজে বেজে চলে যেতে থাকে । ” সবাই দেখে রূপসি বাইজি প্রায় নাচতে নাচতে রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে । রূপসি বাইজি মুচকি হেসে , চোখ টিপে তার ফুলসাজি দোকানদার দের দিকে এগিয়ে দেয় আর দোকানদারেরাও হাসিমুখে তাতে এক সিকি ফেলে দেয় । পরে এক দোকানদার চিনতে পারে যে এই বাইজি আসলে বহুরূপী হরিদা ।

   এখানেই শেষ নয় । দয়ালবাবুর লিচু বাগানে নকল পুলিশের সাজে মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে ঘুস ও প্রশংসা আদায় ছিল হরিদার বড়ো প্রাপ্তি ।

  1. “ হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে ” —উদ্ধৃতাংশটি কে থেকে নেওয়া হয়েছে ? বক্তার এরূপ উত্তির কারণ কী তা বিবৃত করো । 

Ans: উৎস : উদ্ধৃতাংশটি বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে । 

    বক্তার এরূপ উত্তির কারণ : গল্পকথক অর্থাৎ লেখক তার কাছের মানুষ হরিদা সম্পর্কে খুবই সংবেদনশীল ছিলেন । হরিদার কাছে এসে তিনি বেশ কিছুটা সময়ও কাটান সঙ্গে অবশ্য আরও দুই সঙ্গী ভবতোষ ও অনাদি থাকেন । চায়ের আড্ডাটা বসে হরিদার ঘরেই । 

   হরিদা কোনো নির্দিষ্ট কাজ করেন না । যদিও যোগ্যতা অনুযায়ী ইচ্ছে করলেই হরিদা অফিস বা কোনো দোকানে বিক্রিওয়ালার কাজ পেয়ে যেতেন । কিন্তু নির্দিষ্ট সময় বেরিয়ে নির্দিষ্ট কোনো কাজে হরিদার আপত্তি । অভাবের সংসারে হরিদার কোনো কোনো দিন হয়তো খাওয়াই হয় না । তার মধ্যেই হঠাৎ হঠাৎ বিচিত্র ছদ্মবেশে পথে বের হতেন হরিদা । কখনো বাসস্ট্যান্ডের কাছে উন্মাদের বেশে তাঁকে দেখা যেত , কখনো শহরের রাজপথে বাইজির বেশে ঘুঙুর বাজিয়ে চলে যেতেন । বহুরূপী সেজে হরিদা যে অনেক টাকা রোজগার করেন তাও নয় । কিন্তু এতেই হরিদা আনন্দ পান । কখনো বোচকা হাতে বুড়ো কাবুলিওয়ালা , কখনো হ্যাট – কোট – প্যান্টালুন পরা ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেবের রূপেও হরিদাকে দেখতে পাওয়া যায় ।

     তাঁর বিচিত্র সব সাজ আর চরিত্রের সাথে তাল মিলিয়ে যথাযথ আচরণে মানুষ কখনো হাসত , প্রশংসা করত আবার কখনো বা বিরক্ত হতো । আর হরিদার যা সামান্য বকশিশ জুটত— “ তাতেই তাঁর ভাতের হাঁড়ির দাবি মিটিয়ে দিতে চেষ্টা করেন ” , কিন্তু এই দারিদ্র্যের মধ্যেও হরিদার জীবনের এই বহুরুপী সেজে পথে বের হওয়াকেই লেখ নাটকীয় বৈচিত্র্য বলেছেন । 

  1. জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদা বিরাগী সেজে যাওয়ার পর যে ঘটনা ঘটেছিল তা বর্ণনা করো । 

Ans: প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে জগদীশবাবু হলেন বিত্তশালী মানুষ । জগদীশবাবুর বাড়িতে হিমালয়ের গুহা থেকে আগত এক সন্ন্যাসীর গল্প শুনে হরিদারও ইচ্ছা হয় বহুরুপী সেজে তার বাড়িতে গিয়ে মজা করে কিছু অর্থ উপার্জন করার । সেই কারণেই জগদীশবাবুর বাড়িতে তিনি বিরাগী সেজে হাজির হয়েছিলেন। হরিদার খালি খায়ে ছিল সাদা উত্তরীয় আর পরনে ছিল ছোটো বহরের একটি সাদা থান, গা ছিল ধুলো মাখা , মাথায় ফুরফুর করে উড়ছিল শুকনো সাদা চুল , হাতে ছিল একটি ঝোলা , আর তার ভিতরে ছিল শুধু একটা বই গীতা । তাঁর শীর্ণ শরীর দেখে মনে হচ্ছিল অশরীরী । জগদীশবাবুকে বিরাগী বলেন— “ আপনি বোধ হয় এগারো লক্ষ টাকার সম্পত্তির অহংকারে নিজেকে ভগবানের চেয়েও বড়ো বলে মনে করেন ।” এই কথা শুনে জগদীশবাবু সিঁড়ি ধরে নেমে এসে বিরাগীরূপী হরিদার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন এবং তাঁকে রাগ করতে নিষেধ করেন । তখন আগতুক বিরাগী বলেন— “ আমি বিরাগী , রাগ নামে কোনো রিপু আমার নেই । ” এরপর জগদীশবাবু বিরাগীকে তাঁর বাড়িতে থাকার জন্য অনুরোধ করলে বিরাগী তাঁকে বলেন যে ধরিত্রীর মাটিতেই তাঁর স্থান , তাই তিনি এই দালান বাড়িতে থাকবেন না । খাওয়ার কথা বলা হলে বিরাগী বলেন যে তিনি কোনো কিছু স্পর্শ না করে শুধু এক গ্লাস ঠান্ডা জল খাবেন । 

    বিরাগী জগদীশবাবুকে সবরকম মোহ থেকে মুক্ত হওয়ার কথা বলেন । তিনি বলেন — ধন জন যৌবন সবকিছুই হলো সুন্দর সুন্দর এক – একটি বঞ্ছনা যাকে পেলে সৃষ্টির সব ঐশ্বর্য পাওয়া যাবে । তার কাছাকাছি যাওয়ার উপদেশ দিয়ে বিরাগী চলে র গেলেন । তীর্থ ভ্রমণের জন্য জগদীশবাবু বিরাগীকে একশো এক টাকা দিতে চাইলে বিরাগী সেই টাকা না নিয়ে বলেন- “ আমার বুকের ভেতরেই যে সব তীর্থ ভ্রমণ করে দেখবার ততো কোনো দরকার হয় না । ” এরই সঙ্গে তিনি সোনাও অনায়াসে মাড়িয়ে যাওয়ার কথা র বলে জগদীশবাবুর বাড়ি থেকে চলে যান । এইসমস্ত দেখে জগদীশবাবু স্থির বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে রইলেন । 

  1. ‘ বহুরূপী ‘ গদ্যাংশে ‘ হরিদা ‘ – র চরিত্র আলোচনা করো ।

Ans: প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘ বহুরূপী ‘ গল্পটির কাহিনি বিকাশলাভ করেছে হরিদার চরিত্রকে কেন্দ্র করে । অত্যন্ত গরিব মানুষ ছিলেন এই হরিদা । অভাব তাঁর নিত্যসঙ্গী হলেও কাজের মধ্যে দিয়েই তিনি মুক্তি ও স্বাধীনতার আনন্দ খুঁজে নিতে চান বলেই বহুরূপীর পেশা গ্রহণ করেছিলেন হরিদা । 

   হরিদার চরিত্রের মধ্যে সামাজিকতার দিকটিও লক্ষণীয় । শহরের সবথেকে সরু গলিটার ভেতর হরিদার ছোট্ট ঘরটি ছিল কথক ও অন্য বন্ধুদের সকাল – সন্ধার আড্ডার ঘর । চা , চিনি , দুধ হরিদার বন্ধুরাই নিয়ে আসতেন আর হরিদা উনানের আচে জল ফুটিয়ে দিতেন । 

   কখনো বাসস্ট্যান্ডের পাগল , কখনো রাজপথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া বাইজি , কাপালিক , বাউল , বুড়ো কাবুলিওয়ালা , ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেব – এরকম অজস্র রূপে তাঁকে দেখা গেছে । শুধু সাজ নয় , চরিত্রের সাথে মানানসই ছিল তার আচরণ , কিন্তু দিন শেষে দারিদ্র্য্যই হয়েছে তাঁর সঙ্গী ।

   হরিদার চরিত্রটি পরিণতির শীর্ষ ছুঁয়েছে কাহিনির শেষে । বিরাগীর বেশে তিনি জগদীশবাবুকে মুগ্ধ করলেও তাঁর আতিথ্য গ্রহণের অনুরোধ কিংবা প্রণামি হরিদা প্রত্যাখ্যান করেন । এভাবেই পেশাগত সততায় হরিদা অর্থলোভকে ত্যাগ করে বন্ধুদের বলেন— ” শত হোক , একজন বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকাফাকা কী করে স্পর্শ করি বল ? তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায় । ” এছাড়াও হরিদা বলেন – বকশিশ ছাড়া বহুরূপীর জীবন আর কিছু আশা করতে পারে না । হরিদার একথা দীর্ঘশ্বাসের মতো শোনালেও তা আসলে তাঁকে সততার আলোয় আলোকিত করে ।

  1. ” কী অদ্ভুত কথাই বললেন হরিদা ” কী প্রসঙ্গে হরিদা অদ্ভুত কথ বলেছিলেন ? কথাটি অদ্ভুত কেন ? 

Ans: উৎস: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘ বহুরূপী ‘ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে । 

 হরিদার অদ্ভুত কথা বলার প্রসঙ্গ : বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িয়ে গিয়ে হরিদা সেখান থেকে পাওয়া প্রণামির একশো এক টাকা অবহেলায় প্রত্যাখান করে চলে আসেন । এই ঘটনা তাঁর বাড়িতে চায়ের আড্ডায় উপস্থিত কথক এবং তাঁর বন্ধুদের কাছে একটু বিস্ময়কর বলে মনে হয় । হরিদাকে তাঁরা বলেন— “ এটা কী কান্ড করলেন , হরিদা ? জগদীশবাবু তো অত টাকা সাধলেন , অথচ আপনি একেবারে খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো সব তুচ্ছ করে সরে পড়লেন ? ” হরিদা উত্তরে জানান যে একজন বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকা স্পর্শ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় । কারণ তাতে তাঁর ‘ ঢং ’ নষ্ট হয়ে যাবে — একথাকে কথকদের অদ্ভুত কথা বলে মনে হয় । 

 কথাটি অদ্ভুত মনে হওয়ার কারণ: কথাটি অদ্ভুত বলে মনে হওয়ার কারণ প্রথমত , হরিদা ছিলেন একজন পেশাদার বহুরূপী । পেশার টানেই ও মনোরঞ্জনের জন্য তাঁর এই বহুরুপী সাজ । তাই তাঁর পক্ষে সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে , সন্ন্যাসীর জীবন ভাবনায় ভাবিত হয়ে যাওয়াটা ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর । দ্বিতীয়ত , বহুরূপী হরিদার ছিল অভাবের জীবন । জগদীশবাবুর বাড়ি যাওয়ার আগেই হরিদা বলেছিলেন , “ এবার মারি তো হাতি , লুঠি তো ভাণ্ডার ” —তার সারাবছরের প্রয়োজনীয় অর্থ সন্ন্যাসী সেজে হাতিয়ে নেওয়াই ছিল লক্ষ্য । 

   যে মানুষটার দু’বেলা ভাত জোটে না তিনি যখন সন্ন্যাসীর ‘ চং ‘ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলেন তখন তা অদ্ভুত বলেই মনে হয় । কারণ এর ফলে সারাটা জীবন হরিদাকে শুধু অভাবের মধ্যে দিয়েই কাটাতে হবে ।

  1. “ খাঁটি মানুষ তো নয় , এই বহুরূপী জীবন এর বেশি কী আশা করতে পারে ” —বস্তা কে ? খাঁটি মানুষ নয় বলার তাৎপর্য কী ?

Ans: উৎস : প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি লেখক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘ বহুরূপী ’ শীর্ষক গল্প  থেকে নেওয়া হয়েছে ।

   বক্তা : বহুরুপী গল্পে প্রশ্নে উল্লিখিত অংশটির বক্তা হলেন বহুরূপী হরিদা । 

   খাটি মানুষ নয় বলার তাৎপর্য : হরিদা পেশায় ছিলেন বহুরূপী । জীবিকার প্রয়োজনে কখনো পাগল , বাইজি , কখনো নকল পুলিশ এবং আরও অনেক কিছু সেজে তিনি উপার্জন করতেন । যদিও সে উপার্জন ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত সামান্য । 

    এই হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি থেকে অনেক উপার্জনের আশা করেছিলেন । হরিদার ছদ্মবেশ বুঝতে না পারায় প্রণামি হিসেবে জগদীশবাবু অনেক টাকাই হরিদাকে দিতে চেয়েছিলেন । কিন্তু বহুরূপী হরিদা সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে নিজেকে এতটাই একাত্ম করে ফেলেছিলেন , উদাসীনভাবে প্রণামির অর্থ ফেলে চলে আসেন । কথক ও তাঁর সঙ্গীরা হরিদার এই আচরণ সমর্থন করতে পারেননি । তখন হরিদা জানান , “ শত হোক , একজন বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকা ফাকা কী করে স্পর্শ করি বল ? তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায় । এরপর হরিদা অবশ্য জানান বকশিশের জন্য তিনি অবশ্যই জগদীশবাবুর কাছে যাবেন । কারণ বহুরূপী হিসেবে মাত্র আট – দশ আনাকেই তিনি নিজের প্রাপ্য বলে মনে করেন । ‘ খাটি মানুষ ‘ অর্থাৎ যে নিজের জীবনাচরণ ও জীবনদর্শনকে সদভাবে অনুসরণ করেন তাঁর হয়তো অনেক পাওনা হতে পারে কিন্তু হরিদা নিজেকে বহুরূপী ভাবেন । পেশার আড়ালে তাঁর ভেতরের মানুষটা যে সমাজের কাছে হারিয়ে গিয়েছে – সেই বিষণ্ণতাই প্রকাশ পেয়েছে হরিদার উচ্চারণে ।

  1. “ আজ তোমাদের একটা জবর খেলা দেখাব । ” “ জবর খেলা – টি সংক্ষেপে লেখো । 

অথবা , “ আজ তোমাদের একটা জবর খেলা দেখাব । ” কথাটি কে , কাকে বলেছিলেন ? বক্তা কোন জবর খেলা দেখিয়েছিলেন । 

Ans: কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে আলোচ্য কথাগুলি গল্পের কেন্দ্রীয় চত্রিত্র হরিদা কথক ও তাঁর বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন । বহুরূপী সেজে টাকা রোজগার করাই ছিল হরিদার নেশ্য এবং পেশা । তাই সন্ন্যাসীর গল্প শুনে তাদের একটি জবর খেলা দেখাবার আগ্রহ প্রকাশ করেন হরিদা । হরিদা একটা সাদা উত্তরীয় কাঁধে , ছোটো বহরের একটি থান পরে , একটি ঝোলা নিয়ে রীতিমতো আর সেইজন্য বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে যান । জগদীশবাবু হরিদার চেহারা দেখে ও কথাবার্তা শুনে মুগ্ধ হন । হরিদাকে তিনি আতিথ্য গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন এবং তীর্থ ভ্রমণের জন্য প্রনামি হিসাবে একশো এক টাকা দিতে চান । কিন্তু হরিদা খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো এই অর্থ প্রত্যাখ্যান কবে বেরিয়ে আসেন এরকম ছদ্মবেশ ধারণ করেই হরিদা জবর খেলা দেখিয়েছিলেন ।

  1. “ আমার অপরাধ হয়েছে । আপনি রাগ করবেন না । ” বস্তা কে ? সে কী অপরাধ করেছে বলে তার মনে হয়েছে ? 

Ans: লেখক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে শহরের সম্পন্ন ব্যক্তি জগদীশবাবু উক্ত কথাটি বলেছেন । 

   ‘বহুরূপী ‘ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়ির বারান্দার নীচে এসে দাঁড়ান একজন বিরাগী সন্ন্যাসী । জগদীশবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বারান্দা থেকেই সন্ন্যাসীকে আসুন বলে আমন্ত্রণ জানান । তখন সন্ন্যাসী তার আচরণের সমালোচনা করে বলেন – “ আপনি বোধ হয় এগারো লক্ষ টাকার সম্পত্তির অহংকারে নিজেকে ভগবানের চেয়েও বড়ো বলে মনে করেন । ” আর সন্ন্যাসীর এই মন্তব্য শুনে জগদীশবাবু নিজের আচরণকে ‘ অপরাধ ‘ বলে মনে করেছেন । 

  1. “ তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি । ” — উক্তিটি কার ? কোন প্রসঙ্গে তাঁর এই মন্তব্য ? মন্তব্যের আলোকে বক্তার চরিত্রবৈশিষ্ট্য আলোচনা করো ।

Ans:  ছদ্মবেশী সন্ন্যাসী হরিদা আলোচ্য উক্তিটি করেছে । 

   হরিদা সন্ন্যাসী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হলে তিনি সন্ন্যাসীকে তীর্থ ভ্রমণের জন্য একশো টাকা দিতে চান এবং সন্ন্যাসীর কাছে ব্যাকুল স্বরে শান্তি প্রার্থনা করেন । সন্ন্যাসী হরিদার কাছে পার্থিব টাকা অতি তুচ্ছ , এ প্রসঙ্গেই তার প্রশ্নোধৃত মন্তব্য ।

     আলোচ্য উক্তিটিতে বক্তা হরিদার নির্লোভ মানসিকতা ফুটে উঠেছে । আর্থিক দিক থেকে হরিদা খুবই গরিব । অভাবের কারণে বেশিরভাগ সময়ই তার কপালে ভাত জোটেনি । ছদ্মবেশে হরিদা মানুষের মনোরঞ্জন করে দু – এক আনা উপার্জন করেছে . তাতে তার অন্নসংকুলান না হলেও কারো কাছে অভিযোগ করেনি । তাই দেখা যায় , তিনি সারা বছরের জন্য অর্থ সঞ্চয় করার উদ্দেশ্যে সন্ন্যাসীর রূপ ধরে জগদীশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হলে তিনি সন্ন্যাসীকে একশো টাকা দান হিসেবে দিয়েছেন । কিন্তু সন্ন্যাসী এই দান গ্রহণ করেনি , ফিরিয়ে দিয়েছেন পরিবর্তে ঠান্ডা জল চেয়েছে । আসলে নির্লোভ দরিদ্র হরিদা তার পেশাকে বিক্রি করতে চায়নি , সেই পেশার মধ্যেই সে মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করতে চেয়েছে ।

Loading

Leave a Reply

error: