Skip to content

আকাশে সাতটি তারা – নবম শ্ৰেণী বাংলা

Bengali Poem (Class 9): Akashe Satti Tara

ভিডিও টিউটোরিয়াল – Video Tutorial

কবিতার বিষয়বস্তু

কবি পরিচিতি:

বাংলা কবিতার ধারায় রবীন্দ্রনাথের পরবর্তী প্রজন্মের অন্যতম মহৎ কবি জীবনানন্দ দাশ। ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে (অধুনা বাংলাদেশে) জন্মগ্রহণ করেন জীবনানন্দ দাশ। তাঁর পিতা সত্যানন্দ দাশ বরিশালের ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তাছাড়াও সত্যানন্দ দাশ ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। জীবনানন্দ দাশের মাতা কুসুমকুমারী দেবী ছিলেন সেকালের অন্যতম লেখিকা।
১৯১৭ সালে শ্রী জীবনানন্দ ব্রজমোহন কলেজ থেকে আই.এ পাশ করেন এবং ১৯১৯ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বি.এ পাশ করেন। তাঁর কর্মজীবন খুব একটা স্থিতিশীল ছিল না। প্রথমে ১৯২২ সালে সিটি কলেজের চাকরি, তারপর সেখান থেকে বরখাস্ত হয়ে দিল্লির রামযশ কলেজে অধ্যাপনার কাজ পান। সেই চাকরিও থাকেনি বেশিদিন।
গৃহশিক্ষকতা আর চরম অনটনে কেটেছে তাঁর জীবন। ১৯৫২ সালে ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থের জন্য নিখিল বঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলন কর্তৃক পুরস্কৃত হন তিনি। যদিও তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ছিল ‘ঝরা পালক’ (১৯২৭)। অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ (১৯৩৬), ‘মহাপৃথিবী’ (১৯৪৪), ‘সাতটি তারার তিমির’ (১৯৪৮), ‘রূপসী বাংলা’ (১৯৫৭), ‘বেলা অবেলা কালবেলা’ (১৯৬১) ইত্যাদি। জীবৎকালে তাঁর খুব কম কবিতাই প্রকাশিত হয়েছে। মৃত্যুর এত বছর পরেও তাঁর বহু কবিতা এখনও অনাবিষ্কৃত। ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর ট্রামের ধাক্কায় আহত হয়ে শম্ভূনাথ পন্ডিত হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ২২ অক্টোবর সেখানেই মারা যান তিনি।

আকাশে সাতটি তারা কবিতার উৎস:

আলোচ্য কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের অংশ, ক্রমানুসারে 6 নং কবিতা। ‘রূপসী বাংলা’র সমস্ত কবিতাতেই ঘুরে ফিরে আসে বাংলার নদী-মাঠ-প্রকৃতির প্রতি কবির অন্তরের টান, বিচ্ছেদ বেদনায় কাতর কবি বাংলার রূপ ফিরে পেতে চান। দিল্লির রামযশ কলেজে থাকাকালীন এই কবিতাগুলি তিনি লিখেছিলেন। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ পেয়েছে কবির মৃত্যুর পরে এবং সকলের জ্ঞাতার্থে বলা যায় যে কাব্যগ্রন্থের এই ‘রূপসী বাংলা’ নামকরণ কবির নিজের নয়, নামকরণ করেছিলেন তাঁর ভাই অশোকানন্দ দাশ। জীবনানন্দ পাণ্ডুলিপিতে নাম দিয়েছিলেন ‘বাংলার ত্রস্ত নীলিমা’।

আকাশে সাতটি তারা কবিতার সারাংশ:

সনাতন পল্লী বাংলার এক শান্ত সমাহিত সন্ধ্যার চিত্রকল্প ফুটে উঠেছে এই কবিতায়। আকাশে সাতটি তারা আসলে সপ্তর্ষিমণ্ডল। বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে কবি বাংলার প্রকৃতিকে পৃথক করে দেখেন না, নিজেকেও মনে করেন ব্রহ্মাণ্ডের অংশ। সেই সাতটি তারা আকাশে ফুটে উঠলে কবি ঘাসের উপর বসে থাকেন। পল্লীবাংলার চিরন্তন সান্ধ্য-শোভা মন ভরে দেখতে থাকেন তিনি। পড়ন্ত গোধূলিবেলায় সূর্য অস্ত যায়, আকাশের মেঘ যেন লাল কামরাঙার মতো হয়ে উঠে গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে যায়। কবির মনে হয় যেন এক মৃত মনিয়ার রক্তে সাগরের জল লাল হয়ে উঠেছে। ধীরে ধীরে সূর্যের শেষ আভাটুকুও মিলিয়ে যায়, আলো-আঁধারিতে শান্ত নিস্তব্ধ নীল সন্ধ্যা নেমে আসে গ্রামবাংলায়।

কবির মনে হয় যেন আকাশে কোনো কেশবতী কন্যা এসেছে। আকাশের কালো রঙ আর কেশবতী কন্যার খোলা চুল চিত্রকল্পে একাকার হয়ে যায়। কবি তার স্পর্শ অনুভব করেন। কেশবতী কন্যার চুল তার মুখের ওপর, চোখের উপর ভাসে। আসলে এই কেশবতী কন্যা হলো গ্রামবাংলার সান্ধ্যকালীন রূপ। কবি এই স্নিগ্ধ রূপ যেভাবে অনুভব করেছেন, তা আর কোথাও অনুভব করেননি। বাংলার প্রকৃতি, হিজল-কাঁঠাল-জাম প্রভৃতি গাছের পাতাও এই কন্যার চুলের স্পর্শ থেকে বঞ্চিত হয়নি। কবি শুধু এই রূপসী কন্যার চুলের স্পর্শ অনুভব করেননি, তাঁকে মোহিত করেছে রূপসীর চুলের গন্ধও, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই।

ধানের নরম গন্ধ থেকে কলমি শাক, হাঁসের ভেজা পালক, শরের মৃদু গন্ধ, পুকুরের জলের সোঁদা গন্ধ, চাঁদা-সরপুঁটি প্রভৃতি মাছের আঁশটে গন্ধ, এমনকি কিশোরী মেয়ের চালধোয়া ভিজে ঠাণ্ডা হাতের গন্ধ তিনি অনুভব করেছেন। সন্ধ্যেবেলায় কিশোর যখন বাড়ি ফিরেছে ঘাসের উপর দিয়ে, সেই কিশোরের পায়ে দলা মুথা ঘাসের গন্ধ কবি টের পেয়েছেন। তিনি ব্যথিত হয়েছেন লাল লাল বটের ক্লান্ত নীরব গন্ধে। সৌন্দর্য ও মধুময় ঘ্রাণে মনকে মোহিত করার মতো একটা আমেজ তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে কবি খুঁজে পেয়েছেন বাংলার প্রাণকে।

এইভাবে কবি সহজ-সরল গ্রাম্য প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যেই তিনি তার রূপসী বাংলাকে খুঁজে পেয়েছেন, ভালোবেসেছেন তাঁর রূপসী বাংলাকে।

মূল বক্তব্য:

রূপসী বাংলার গুণমুগ্ধ কবির দৃষ্টিতে গ্রামীণ বাংলার বুকে ঘনায়মান সন্ধ্যার এক অপরূপ চিত্র ফুটে উঠেছে। বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা আর দ্রুত নগরায়ণের পরিস্থিতে ‘রূপসী বাংলা’র কবিতাগুলি হয়ে উঠেছিল প্রাচীন পল্লী বাংলার স্মৃতিচিত্র।
জীবনানন্দের এই কবিতাটিও বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য, সনাতন রূপ-লাবণ্য ফুটিয়ে তুলেছে নানা অনুষঙ্গ, উপমা এবং চিত্রকল্পে। কবি এক কিশোরী রূপসীর চুলের সোহাগ চুম্বন উপলব্ধি করেন। বাংলার বুকে শান্ত নিবিড় সন্ধ্যা নেমে আসলে বাংলার প্রকৃতির মহৎ রূপ কবির কাছে উন্মোচিত হয়। প্রতিটি তুচ্ছ ধুলিকণাও কবির পরম মমতায় জীবিত হয়ে ওঠে, বাংলার প্রতি কবির গভীর মমত্ববোধ এবং ভালোবাসা এই কবিতার প্রাণ। কেশবতী কন্যা যেন বাংলার প্রকৃতিরই প্রত্নপ্রতিমা। সব মিলিয়ে এই কবিতাটি বাংলার চিরন্তন পল্লী প্রকৃতির প্রতি কবির গভীরতর ভালোবাসার এক দৃষ্টান্ত।

‘আকাশে সাতটি তারা’ – নামকরণের সার্থকতা

যে-কোনো কবিতার নামকরণ তার বিষয়ের গভীর অর্থকে প্রকাশ করে। কখনও তা হয় রূপকধর্মী আবার কখনো তা হয় ব্যঞ্জনাধর্মী। কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের কোনো কবিতার নামকরণ করেননি। শ্রদ্ধেয় সংকলকগণ এই নামকরণ করেছেন। আমাদের আলোচ্য বিষয় ‘আকাশে সাতটি তারা’ নামকরণের সার্থকতা কতখানি বজায় আছে।

কবি এই কবিতায় প্রকৃতি চেতনার গভীরে ডুব দিয়েছেন। ঘাসের উপর বসে সন্ধ্যা সমাগমকে লক্ষ্য করেছেন। আকাশে যখন প্রথমবার সাতটি তারা ফুটে উঠেছে, কবি সন্ধ্যার আগমনকে বুঝতে পেরেছেন। সূর্যাস্ত পরবর্তী আকাশের কামরাঙা লাল মেঘ, তাঁকে মনে করিয়েছে মৃত মনিয়া বা গঙ্গা সাগরের জলের অতলে ডুবে যাওয়া বিসর্জিত কন্যাকে। পল্লীগ্রামে শান্ত-অনুগত নীল সন্ধ্যা নেমে আসে। এই চঞ্চলতা হীন, ধীর অথচ সপ্রতিভ অন্ধকার কবিমনে কেশবতী কন্যার চুলের কল্পনা ফুটে ওঠে। তাঁর চোখের উপর, মুখের উপর নেমে আসে অন্ধকার, কবি অনুভব করেন বাংলার অতি পরিচিত হিজল-কাঁঠাল-জাম গাছ সেই কেশবতী কল্পিত কন্যার চুলের স্পর্শে আচ্ছাদিত হয়। সন্ধ্যার স্নিগ্ধ গন্ধে কবি ডুব দেন। কবি নূতন করে খুঁজে পান গ্রাম বাংলার সাধারণ অথচ অসাধারণ গন্ধকে। কিশোরীর কিশোরীর ভিজে হাত, কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস, লাল লাল বটের ফলে ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা কবিকে পল্লী বাংলার সৌন্দর্যে অভিভূত করে। কবি বাংলার প্রাণকে খুঁজে পান। যখন ‘আকাশে সাতটি তারা’র ঔজ্জ্বল্য, নীল সন্ধ্যায় জেগে থাকে, কবি তা টের পান।

এই কবিতায় ‘আকাশে সাতটি তারা’ শব্দবন্ধ কবি দুই বার ব্যবহার করেছেন। সাতটি তারার প্রথম ফুটে ওঠা (যা সন্ধ্যার সূত্রপাত) এবং উজ্জ্বলভাবে জেগে থাকার (সন্ধ্যা শেষে রাত্রির আগমন) মধ্যে দিয়ে সম্ভবত কবি সন্ধ্যার সময়টুকু বোঝাতে চেয়েছেন।

এই কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই কবিতাটির মাধ্যে দিয়ে গ্রাম বাংলার সান্ধ্যকালীন স্নিগ্ধরূপ কবি ফুটিয়ে তুলেছেন। তাই বলা যায়, আকাশে সাতটি তারা নাম এই কবিতার জন্য একেবারেই যথার্থ।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা

VSAQ Part 1

  1. কবি কোথায় বসে সন্ধ্যার রূপ দেখেন?

উত্তর: ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ ঘাসের উপর বসে সন্ধ্যার রূপ দেখেন।

  1. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি বাংলার সন্ধ্যা সম্পর্কে কী কী বিশেষণ ব্যবহার করেছেন?

উত্তর: ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি বাংলার সন্ধ্যা সম্পর্কে ‘শান্ত’, ‘অনুগত’ ও ‘নীল’ — এই তিনটি বিশেষণ ব্যবহার করেছেন।

  1. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় সন্ধ্যার আকাশে কে এসেছে বলে কবির মনে হয়েছে?

উত্তর: ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় বাংলার সন্ধ্যার আকাশে এক কেশবতী কন্যা এসেছে বলে কবি জীবনানন্দ দাশের মনে হয়েছে।

  1. কামরাঙা-লাল মেঘের ডুবে যাওয়াকে কবি কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?

উত্তর: কামরাঙা-লাল মেঘের সাগরজলে ডুবে যাওয়াকে কবি মৃত মনিয়া পাখির সঙ্গে তুলনা করেছেন।

  1. পৃথিবীর কোনো পথ কাকে দেখেনি বলে কবির মনে হয়? 

উত্তর: বাংলার সন্ধ্যার আকাশের কেশবতী কন্যাকে পৃথিবীর কোনো পথ দেখেনি বলে কবির মনে হয়।

  1. কবির ‘চোখের’ পরে’, ‘মুখের’ পরে’ কী ভাসে?

উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশের ‘চোখের’ পরে’, ‘মুখের’ পরে’ বাংলার নীল সন্ধ্যার চেহারায় আসা কেশবতী কন্যার চুল ভাসে।

  1. কী রঙের বট ফলের উল্লেখ রয়েছে কবিতায়?

উত্তর: জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় লাল রঙের বট ফলের উল্লেখ করেছেন।

VSAQ Part 2

  1. “বাংলার নীল সন্ধ্যা” – কেমনভাবে আসে কবির কাছে?

উত্তর: বাংলা নীল সন্ধ্যা কবির কল্পনায় ‘কেশবতী কন্যার’ মত আসে।’

  1. কবির ‘চোখের’ পরে’ , ‘মুখের’ পরে’ কী ভাসে?

উত্তর: কবির ‘চোখের’ পরে’ , ‘মুখের’ পরে’ কেশবতী কন্যার চুল অর্থাৎ বাংলার নীল সন্ধ্যার ছবি ফুটে ওঠে।

  1. কিশোরীর চালধোয়া হাত কেমন ছিল?

উত্তর: কিশোরীর চালধোয়া হাত ছিল ভিজে এবং শীতল।

  1. কামরাঙা – লাল মেঘ কোথায় ডুবে গেছে?

উত্তর: কামরাঙা- লাল মেঘ মৃত মনিয়ার মতো গঙ্গা সাগরে ডুবে গেছে।

  1. কবি কী টের পান?

উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশ টের পান সমাগত সন্ধ্যায় তাঁর পল্লি প্রকৃতিতে লুকিয়ে থাকা বাংলার প্রাণশক্তি।

  1. কলমি কী ?

উত্তর: পুকুরের ধারে বা কোন জলাশয়ের ধারে জন্মায় এমন এক ধরনের শাক যা বাঙালির খাদ্যতালিকায় স্থান পায় ।

  1. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি কোন মাছ দুটিৱ উল্লেখ করেছেন?

উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশ ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিত চাঁদা ও সরপুঁটি এই দুটি মাছের কথা উল্লেখ করেছেন।

  1. সন্ধ্যার সঙ্গে কবি কিসের ঘ্রাণ পান?

উত্তর: সন্ধ্যার আগমণের সঙ্গে কবি নরম ধান, কলমি, শর, পুকুরের জল, চাঁদা ও সরপুঁটি মাছের আঁশটে গন্ধ,পায়ে দলিত মুথা ঘাস ইত্যাদির ঘ্রাণ অনুভব করেন।

  1. কিশোরীর হাত ভিজে কেনো?

উত্তর: কিশোরী সন্ধ্যাবেলায় চাল দিচ্ছিল, তাই তার হাট ভিজে।

  1. কবি কখন বাংলার প্রাণকে খুঁজে পান?

উত্তর: আকাশে যখন সাতটি তারা ফুটে ওঠে তখন কবি বাংলার প্রাণকে খুঁজে পান।

  1. ‘আকাশে সাতটি তাৱা কবিতায় বটফল ব্যথিত কেন?

উত্তর: লাল লাল বটফল গাছের তলায় পড়ে থাকে, নিতান্ত অবহেলায়—এই ফল কেউ আদর করে তুলে নেয় না। তাই সে ব্যথিত।

  1. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কাদেৱ মৃদু ঘ্রাণের কথা বলা হয়েছে ?

উত্তর: পুকুরের জল থেকে ভেসে আসছে চাঁদা ও সরপুঁটি মাছের মৃদু ঘ্রাণ।

  1. ‘… মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতো/ গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে’ – মেঘের রং কী?

উত্তর: মেঘের রঙ কামরাঙা ফলের মতো লাল।

  1. বাংলার সন্ধ্যাকে কবি ‘শান্ত অনুগত’ বলেছেন কেন?

উত্তর: প্রকৃতির শান্ত – স্নিগ্ধ রূপ বোঝানের জন্য কবি ‘শান্ত অনুগত’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন।

  1. ‘আকাশে সাতটি তারা’ – কবিতায় কোন্‌ কোন্‌ গাছের কথা উল্লেখ রয়েছে?

উত্তর: ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় ‘হিজল, কাঁঠাল এবং জাম’ গাছের উল্লেখ আছে।

  1. কবি ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কিশোরীর কথা কিভাবে উল্লেখ করেছেন?

উত্তর: কবি কিশোরীর চাল ধোয়া ভিজে হাতের কথা উল্লেখ করেছেন।

  1. কিশোর পায়ে কি দলছে?

উত্তর: কিশোর পায়ে মুথাঘাস দলছে।

  1. কবি সন্ধ্যাকে কি বলেছেন?

উত্তর: কবি সন্ধ্যাকে শান্ত অনুগত সন্ধ্যা বলে উল্লেখ করেছেন।

  1. আকাশের সাতটি তারা কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?

উত্তর: আকাশের সাতটি তারা কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের লেখা রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

  1. বাংলার নীল সন্ধ্যা কেমন ও কবি তাকে কীরূপে কল্পনা করেছেন?

উত্তর: বাংলার নীল সন্ধ্যা শান্ত অনুগত এবং কবি তাকে কেশবতী কন্যারূপে কল্পনা করেছেন।

  1. কবি ঘাসে বসে থেকে আকাশে কী দেখেন?

উত্তর: কবি ঘাসে বসে থেকে আসন্ন সন্ধ্যার দৃশ্যপটে আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠতে দেখেন।

  1. আকাশে সাতটি তারা বলতে কোন তারাদের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: আকাশে সাতটি তারা বলতে আকাশের সপ্তর্ষিমন্ডলের কথা বলা হয়েছে।

  1. কবি কামরাঙা–লাল মেঘের গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে যাওয়ার ঘটনাকে কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?

উত্তর: কবি আকাশের লাল মেঘের  গঙ্গাসাগরে ডুবে যাওয়ার ঘটনাকে মৃত মনিয়া পাখির সাগরের জলে ডুবে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

  1. আকাশে সাতটি তারা ওঠার সময় কবি কোথায় বসে  ?

উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশ আকাশে সাতটি তারা উঠলে ঘাসের উপর বসে সন্ধ্যার রূপ দেখেন।

  1. ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতায় সন্ধ্যার আকাশে কে এসেছে বলে কবির মনে হয়েছে?

উত্তর: ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতায় বাংলার সন্ধ্যার আকাশে এক কেশবতী কন্যা এসেছে বলে কবি জীবনানন্দ দাশের মনে হয়েছে৷

  1. কবির ‘চোখের পরে‘, ‘মুখের ‘পরে কী ভাসে?

উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশের ‘চোখের পরে’, ‘মুখের পরে’ বাংলার নীল সন্ধ্যার চেহারায় আসা কেশবতী কন্যার চুল ভাসে।

  1. কেশবতী কন্যার চুলের.চুমা কোথায় ঝরে?

উত্তর: কেশবতী কন্যার চুলের চুমা হিজলে-কাঠালে-জামে অবিরত ঝরে পড়ে। 

  1. কবি বাংলার সন্ধ্যা সম্পর্কে কী কী বিশেষণ ব্যবহার করেছেন?

উত্তর: কবি বাংলার সন্ধ্যা সম্পর্কে শান্ত, অনুগত ও নীল এই তিনটি বিশেষণ ব্যবহার করেছেন।

  1. পৃথিবীর কোন পথ কাকে দেখেনি বলে কবির মনে হয়?

উত্তর: পৃথিবীর কোন পথ বাংলার সন্ধ্যারুপী কেশবতী কন্যাকে দেখেনি বলে কবির মনে হয়।

  1. ‘অজস্র চুলের চুমা’ বলতে কবি কি বুঝিয়েছেন?

উত্তর: প্রকৃতির বুকে অন্ধকারের নিবিড়তাকে বোঝাতে তিনি ‘অজস্র চুলের চুমা’ কথাটি ব্যবহার করেছেন।

~+~

Video Credit: Tutopia

SAQ Part 1

  1. “কামরাঙা-লাল মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতো গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে”— পঙক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন

উত্তর: উদ্ধৃতাংশটি জীবনানন্দ দাশের “আকাশে সাতটি তারা” কবিতার অংশ। 

জীবনানন্দ এই কবিতায় বাংলায় সূর্যাস্তের একটি সুন্দর ছবি এঁকেছেন। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আকাশের মেঘগুলো সূর্যের বিবর্ণ আলো থেকে বিভিন্ন বর্ণ ধারণ করে। কবি পাকা কামরাঙ্গার সঙ্গে লাল মেঘের তুলনা করেছেন। যখন দিগন্তের মেঘও জলে মিলিয়ে যায় তখন কবির মনে হয় মৃত মনিয়া পাখির রক্ত সাগরে ছড়িয়ে দিয়ে ডুবে গেছে ।

  1. “আসিয়াছে শান্ত অনুগত বাংলার নীল সন্ধ্যা”—কবি বাংলার সন্ধ্যাকে ‘শান্ত’, ‘অনুগত’, ‘নীল’ কেন বলেছেন?

উত্তর: উদ্ধৃতাংশটি জীবনানন্দ দাশের “আকাশে সাতটি তারা” কবিতার অংশ।

গ্রামের থেকে শহরের কোলাহল বেশি তাই গ্রামের জীবনযাত্রা শান্ত। অর্থাৎ গ্রামবাংলার সন্ধ্যাও শান্তভাবে নেমে আসে। 

গ্রামের পরিবেশ অনুসারী হলো পল্লীবাংলার সন্ধ্যা। তাই সেই সন্ধ্যা অনুগত। 

কবিতার ছন্দ কবির বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিতে আলোকপাত করে। দিনের আলো আর সন্ধ্যার অন্ধকার মিশে যে আবছায়ার সৃষ্টি হয় তার সাথে গাছের সবুজ মিশলে সন্ধ্যা নীল হয়। 

  1. “কেশবতী কন্যা যেন এসেছে আকাশে”—পঙক্তিটি ব্যাখ্যা করো। 

উত্তর: উদ্ধৃতাংশটি জীবনানন্দ দাশের “আকাশে সাতটি তারা” কবিতার অংশ। 

এখানে কবি নিজের মতো করে পল্লীবঙ্গের সন্ধ্যাকে বর্ণনা করেছেন। সূর্যাস্তের পর অন্ধকার হয়ে এলে কবির মনে হয় আকাশে কোনো কেশবতী কন্যা এসেছে। তার কালো চুলের মতোই ধীরে ধীরে মাটিকে ঢেকে দেয় কালো অন্ধকার। কবির চোখে এরকম কাব্যিক রূপেই ধরা দেয় পল্লীবাংলার সন্ধ্যা।

  1. “আমার চোখের ‘পরে আমার মুখের ‘পরে চুল তার ভাসে”—পঙক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উদ্ধৃতাংশটি জীবনানন্দ দাশের “আকাশে সাতটি তারা” কবিতার অংশ।

সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে আকাশে তারা বেরিয়ে আসে, সেই মুহূর্তে কবি ঘাসে বসে তার ঘ্রাণ, বর্ণ এবং স্পর্শের মাধ্যমে পল্লীবাংলার সন্ধ্যার বাতাস গ্রহণ করেন। তিনি মনে করেন সূর্যাস্তের সময় এলোকেশী একটি মেয়ে আকাশের সন্ধ্যায় দেখা দেয় । তার লম্বা কালো চুলের মতোই ধীরে ধীরে আঁধার ঘনিয়ে আসে । তিনি সেই কাল্পনিক মেয়ের চুল চোখ ও মুখে অনুভব করেন অর্থাৎ অন্ধকারের স্পর্শ অনুভব করেন।

  1. “পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো”— কবির বক্তব্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: উদ্ধৃতাংশটি জীবনানন্দ দাশের “আকাশে সাতটি তারা” কবিতার অংশ।

কবি ঘাসের উপর বসে পল্লীবাংলার দিনরাত্রির মাঝের সন্ধ্যাকে পুরোপুরি অনুভব করেন। তিনি কল্পনা করেন যে সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় একটি এলোকেশী মেয়ে বাংলার আকাশে  আবির্ভূত হয়।  তার ছড়ানো চুল দিয়েই অন্ধকার নামে।  কবির এই কাল্পনিক কন্যা হল পল্লীবঙ্গের সান্ধ্য প্রকৃতি। রূপসী বাংলার সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোথাও নেই তাই এই মেয়েটিকে আর কেউ দেখেনি।

  1. “অজস্র চুলের চুমা হিজলে কাঁঠালে জামে ঝরে অবিরত” -পঙক্তিটি মধ্যে দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর: উদ্ধৃতাংশটি জীবনানন্দ দাশের “আকাশে সাতটি তারা” কবিতার অংশ।

জীবনানন্দের দৃষ্টিতে পল্লীবাংলার সন্ধ্যার সৌন্দর্য ধরা পড়েছে । সূর্য ডুবে গেলে এক কাল্পনিক এলোকেশী মেয়ে বাঙালির আকাশে দেখা যায় । আকাশ থেকে তার ছড়ানো কালো চুলকে ছুঁয়ে নেমে আসে অন্ধকার । হিজল-কাঁঠাল-জামের পাতায় অন্ধকারের স্পর্শ যেন মনে হয় রূপসীর চুল চুম্বন করেছে।

  1. “এরই মাঝে বাংলার প্রাণ”—পঙক্তিটি তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: উদ্ধৃতাংশটি জীবনানন্দ দাশের “আকাশে সাতটি তারা” কবিতার অংশ।

জীবনানন্দের কাছে বাংলা হলো এক প্রাণময়ী মূর্তি। শব্দ, ঘ্রাণ, রঙ এবং স্পর্শের দ্বারা কবি বাংলাকে অনুভব করেন । তিনি এই কবিতাটিতে সন্ধ্যার অপূর্ব রূপ বর্ণনা করেছেন। বাংলার ধানগাছ, কাঁঠাল গাছ, বটগাছ, কলমি শাক, মুথা ঘাস, পুকুর, মাছ, কিশোর-কিশোরী, এই সব কিছু নিয়েই হলো বাংলার পরিপূর্ণ প্রকৃতি । কবি এই প্রাকৃতিক জগতে বাংলার জীবন্ত সত্তাকে উপলব্ধি করেন ।

SAQ Part 2

  1. ‘পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখেনি কো’ কবির বক্তব্য বিশ্লেষণ কর।

উত্তর: কবি বঙ্গভুমিকে পৃথিবীর সব থেকে রুপসী নারী রূপে গণ্য করেন। রূপসী বাংলার মতো সুর্য  পৃথিবীর আর কোথাও নেই। তাই সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে সেখানে যে সন্ধ্যা নামে সে যেন কোনো এক কেশবতী কন্যার খোলার চুলের রাশি। তার চুল যেভাবে আকাশে ছড়িয়ে অন্ধকার ঘনিয়ে তোলে তা আর পৃথিবীর কোথাও দেখা যায় না। কবির কল্পনার সেই মানসী আসলে সন্ধ্যাকালীন বাংলার প্রকৃতি।

  1. ‘অজস্র চুলের চুমা হিজলে কাঁঠালে, জামে ঝরে অবিরত’ – অজস্র চুমা বলতে কি বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: কল্পনাপ্রবণ কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশের সাতটি তারা’ কবিতাটিতে পল্লীবাংলার সন্ধ্যা এক মানসী রূপে আবির্ভূত হয়েছে। সূর্যাস্তের পর সেই মানসী তার কালো চুল ছড়িয়ে দেয় বাংলার আকাশে। আকাশে ছড়িয়ে পড়া তার কালো চুল ধীরে ধীরে অন্ধকারের স্পর্শ নিয়ে আসে প্রকৃতির বুকে। হিজল, কাঁঠাল ও জাম গাছের পাতায় নেমে আসে সেই অন্ধকার যেন সেই রূপসীর চুলের চুম্বন।

3.’এরই মাঝে বাংলার প্রাণ; —পঙক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

উত্তর: উধৃত পঙক্তিটি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ জীবনানন্দের কাছে শুধু এক ভূখণ্ড নয়, প্রাণময়ী মূর্তি। শব্দ-গন্ধ- বর্ণ-স্পর্শ দিয়ে কবি তাকে অনুভব করেন। আলোচ্য কবিতাটিতে তিনি বাংলার সন্ধ্যাকালীন প্রকৃতির এক অপূর্ব বর্ণনা দিয়েছেন। হিজল, কাঠাল, বট প্রভৃতি বৃক্ষ, ধান গাছ, কলমি শাক, মুথা ঘাস, পুকুর, মাছ, কিশোর- কিশোরী অর্থাৎ মানুষ—এই সব নিয়েই বাংলার পরিপূর্ণ প্রকৃতি৷ এই প্রকৃতির মধ্যেই কবি বাংলার জীবন্ত সত্তাকে উপলব্ধি করেছেন ।

4.“লাল লাল বর্টের ফলের/ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা”—তাৎপর্য– ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি পল্লিপ্রকৃতির মধ্যে বাংলার প্রাণ’-কে খুঁজে পেয়েছিলেন। গাছ থেকে খসে পড়া বট ফলের মধ্যে রয়েছে এক নীরব ক্লান্তি | বাংলার শান্ত নিস্তরঙ্গ প্রকৃতির মধ্যে থাকা বিষাদময়তাকেই যেন কবি এখানে প্রত্যক্ষ করেন৷ গাছ থেকে খসে পড়া বট ফলের মধ্যে রয়েছে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেদনা।

  1. ‘আমি এই ঘাসে বসে থাকি’ – কোন্‌ সময়ে কবি ঘাসে বসে থাকেন? তখন প্রকৃতির কেমন রূপ তাঁর চোখে ধরা পড়ে? 

উত্তর: আকাশে যখন সপ্তর্ষিমণ্ডল ফুটে ওঠে, তখন কবি ঘাসে বসে থাকেন। তিনি সন্ধ্যা নেমে আসাকে অনুভব করেন। নীল সন্ধ্যার আবেশ তাঁর মনকে স্পর্শ করে। তাঁর মনে হয় কোনো এক কেশবতী কন্যা, কেশরাজি বিস্তার করে পৃথিবীর বুকে সন্ধ্যার অন্ধকারকে নামিয়ে আনছে। তাঁর সেই চুলের স্পর্শ যেন কবি অনুভব করেন তাঁর চোখে মুখে।

  1. ‘পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো’ – উদ্ধৃতাংশে কোন্‌ কন্যার কথা বলা হয়েছে? পৃথিবীর কোনো পথ তাকে দেখেনি কেন?

উত্তর: উদ্ধৃতাংশে ‘কেশবতী কন্যা’র কথা বলা হয়েছে।

সন্ধ্যের অন্ধকারকে ধীরে ধীরে গ্রামবাংলার প্রকৃতির বুকে নেমে আসতে দেখছেন কবি । অন্ধকার নেমে আসছে হিজল, কাঁঠাল, জাম গাছের উপরে। কবি কল্পনা করছেন আকাশে আছে এক রূপসী কেশবতী কন্যা, সেই রমণীর আলুলায়িত কেশ যেন স্পর্শ করছে এই গাছের মাথাকে। কবি তাঁর মাথার উপরে এই রূপসী কন্যার চুলের স্পর্শ অনুভব করেছেন। এই কন্যা কবির কল্পনা। তাই বাস্তব পৃথিবীর পথে এই কন্যাকে কোনো দিন দেখতে পাওয়া যায় না। সে শুধুমাত্র কবির কল্পনাতে মূর্ত হয়ে আছে।

  1. “আসিয়াছে শান্ত অনুগত বাংলার নীল সন্ধ্যা” – সন্ধ্যাকে নীল বলার যুক্তি কোথায়?

উত্তর: ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি বলেছেন- রক্তিম সূর্য অস্ত গেছে। আকাশের রক্তাভ আভা মিলিয়ে গিয়ে আকাশ এখন নীল। এখন দিন ও রাত্রির সন্ধিক্ষণ। সূর্যের রক্তিম ছটাও যেমন নেই, তেমনি রাত্রির গাঢ় অন্ধকারও এখনো নেমে আসেনি, আকাশে সপ্তর্ষিমণ্ডল এখন জ্বলজ্বল করেছে। আকাশ এখন মেঘমুক্ত ঝকঝকে নীল, তাই কবি সন্ধ্যাকে নীল বলেছেন।

  1. “আমি এই ঘাসে বসে থাকি” – আমি কে? তিনি এই ঘাসে বসে থাকেন কেন?

উত্তর: আমি বলতে এখানে কবি জীবনানন্দ দাশকে বোঝানো হয়েছে।

কবি প্রকৃতি প্রেমী। গ্রাম বাংলার রূপের সঙ্গে তাঁর মনের নিবিড় যোগাযোগ গড়ে

উঠেছে। গ্রামবাংলা যেন তারই সত্ত্বার আরেক রূপ। সূর্যে অস্ত গেছে ‘নীল সন্ধ্যা’ নেমে আসছে, আকাশে সপ্তর্ষিমণ্ডল ফুটে উঠেছে। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে আসছে, তিনি ঘাসের উপর বসে পৃথিবীর বুকে এই সন্ধ্যে নেমে আসার ক্ষণটাকে অনুভব করছেন।

  1. ‘কামরাঙা লাল মেঘ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর: কামরাঙা আমাদের বাংলার একটা ফল। কাঁচা অবস্থায় এই ফলটির রং সবুজ হলেও পরিপক্ক অবস্থায় এটি সিঁদুরে লাল রঙে পরিণত হয়। সূর্য যখন অস্তমিত হতে চলেছে, তখন সূর্যের লাল রঙের আভায় আকাশের মেঘও রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। যা কবিকে লাল কামরাঙার লাল রঙের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। তাই কবি বলেছেন- ‘কামরাঙা লাল মেঘ’ ।

  1. ‘কামরাঙ্গা লাল মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতো গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে’-  পঙক্তিটির মধ্যে দিয়ে কবি কি বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশ ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় সন্ধ্যার আগমনের আগে বাংলার আকাশে সূর্যাস্তের আলোয় রাঙা মেঘের ছবি এঁকেছো। সূর্যের লাল আভায় মেঘগুলি যেন পাকা কামরাঙার মতো লাল হয়ে উঠেছে। মেঘের এই লাল রং খুবই ক্ষণস্থায়ী। লাল রং মুছে গেলে মেঘকে মনে হয় মৃত মুনিয়ার মতো ম্লান, বিবর্ণ। গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে তা অবলুপ্ত হয়। কামরাঙার রঙের সঙ্গে, মৃত মুনিয়ার সঙ্গে মেঘের তুলনা করা হয়েছে।

  1. ‘আসিয়াছে শান্ত অনুগত বাংলার নীল সন্ধ্যা——বাংলাৱ সন্ধ্যাকে শান্ত, অনুগত ও নীল বিশেষণে ভূষিত কৱাৱ কারণ কী? 

উত্তর: আলোচ্য উদ্ধৃতিটি কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতা থেকে গৃহীত। বাংলার গ্রামে শহরের মতো কোলাহল নেই, দিনশেষে সেখানে সমস্ত কাজের বিশ্রাম ঘটে।তাই সন্ধ্যা শান্তভাবে দিনের বিরতির ঘোষনা নিয়ে আসে। পল্লী বাংলার সন্ধ্যায় সারি সারি গ্যাস লাইট জ্বলে ওঠে না,তাই এক চাকচিক্যহীন সন্ধ্যা প্রতিদিন নিয়ম করে নেমে আসে।তাই সন্ধ্যা অনুগত।সন্ধ্যার অন্ধকার ও দিনের আলো মিশে যে আবছায়া তৈরী করে তার সঙ্গে গাছপালার সবুজ আভা মিশে সন্ধ্যাকে নীল করে।

  1. “কেশবতী কন্যা যেন এসেছে আকাশে;”—পঙক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: উধৃত পঙক্তিটি কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।এই কবিতায় জীবনানন্দ তার একান্ত নিজস্ব ভঙিতে পল্লিবাংলার সন্ধ্যাকে বর্ণনা করেছেন। গ্রাম বাংলার সন্ধ্যাকে তিনি এক মানবী রূপে কল্পনা করেছেন। সূর্য ডুবে গেলে যখন দিনের আলো ফিকে হয়ে আসে, কবির মনে হয় যেন এক কেশবতী কন্যা এসেছে সন্ধ্যার আকাশে। তার ছড়িয়ে পড়া কালো চুলে ঘনিয়ে আসে রাতের অন্ধকার। কবির চোখে এভাবেই কাব্যিকরূপে ধরা দেয় পল্লিবাংলার সন্ধ্যা।

  1. ‘আমার চোখের পরে, আমার মুখের পরে চুল তার ভাসে’ – বক্তব্যটি ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: সবে যখন সুর্য অস্ত গেছে,আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠেছে সেই সময় কবি ঘাসের উপর বসে স্পর্শ, গন্ধ ও বর্ণ দিয়ে পল্লীবাংলার সন্ধ্যাকে অনুভব করে। তার মনে হয় যেন এক এলোকেশী মেয়ে দেখা দিয়েছে সন্ধ্যার আকাশে। তার ছড়িয়ে পরা কালো চুলের মতো ধীরে ধীরে অন্ধকার নামে।কবি তার চোখে মুখে সেই অন্ধকারের স্পর্শ অনুভব করেন।

LAQ Part 1

  1. “আকাশে সাতটি তারা” কবিতায় কবির দেখা বাংলার রূপ নিজের ভাষায় বর্ণনা করো। 

উত্তর: প্রকৃতিপ্রেমী কবি জীবনানন্দ তাঁর “আকাশে সাতটি তারা” কবিতায় রূপসী বাংলার সন্ধ্যাবেলার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছেন ।

ঠিক যখন সূর্য অস্ত যায় তখনকার মেঘ কামরাঙ্গা ফলের মতো লাল হয়ে ওঠে। আবার কিছুক্ষণ পরে সেই মেঘ ধীরে ধীরে দিগন্তরেখায় বিলীন হয়ে যায় এবং আকাশে সাতটি তারা ফুটে ওঠে। এখানে কবি যে সাতটি তারার কথা বলেছে তা আসলে সপ্তর্ষিমণ্ডল। দিনরাত্রির এই সন্ধিক্ষণে সৃষ্ট সান্ধ্যকালীন  সৌন্দর্য পৃথিবী আর অন্য কোথাও দেখা যায় না। কবি অনুভব করেন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আকাশে এক এলোকেশী কন্যার দেখা মেলে। সেই মেয়েটির ছড়িয়ে পড়া কালো চুলের মতই সন্ধ্যার আকাশে ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসে।  আর সেই অন্ধকার যখন হিজল কাঁঠাল জাম ইত্যাদি গাছের পাতা ছুঁয়ে নেমে আসে তখন যেন মনে হয় তা রূপসীর চুলের সোহাগ চুম্বন। 

কবি প্রকৃতিকে গন্ধ, বর্ণ ও স্পর্শের দ্বারা অনুভব করেন। আর তাই বাংলার সন্ধ্যার রূপকে তিনি শুধুমাত্র চোখেই দেখেননি গন্ধেও তা অনুভব করেছেন। ধান গাছ, কাঁঠাল গাছ, কলমি শাক, মুথা ঘাস, ভেজা হাঁসের পালক – সবকিছুর গন্ধ মিলেই বাংলার গন্ধ তৈরি হয়। 

কবি এই ভাবেই তাঁর রূপসী বাংলাকে খুঁজে পেয়েছিলেন। 

2. “পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো” এখানে কোন্ কন্যার কথা বলা হয়েছে? পৃথিবীর কোনো পথ তাকে দেখেনি কেন? অথবা, ‘এ কন্যা’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? কবির এরূপ ভাবনার কারণ কী?

উত্তর: জীবনানন্দ দাশ ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় বাংলার সন্ধ্যার রূপ বর্ণনা করতে গিয়ে যে কাল্পনিক এলোকেশী কন্যার অনুভব করেছেন, এখানে তার কথাই বলা হয়েছে। 

জীবনানন্দ শুধুমাত্র চোখ দিয়েই বাংলার সৌন্দর্যকে দেখেননি, বর্ণ এবং স্পর্শের দ্বারা অনুভব করেছেন। 

কবি যখন সূর্যাস্তের পরে আকাশে সপ্তর্ষিমণ্ডল দেখতে পান ঠিক তখনই এক কাল্পনিক এলোকেশী কন্যার অনুভব করেন। সেই কাল্পনিক কন্যার কালো চুলের মত রাতের আকাশ ধীরে ধীরে অন্ধকারে ঢেকে যায়। অন্ধকার যখন হিজল-কাঁঠাল- জামের পাতা ছুঁয়ে নেমে আসে তখন যেন মনে হয় তা সেই সুন্দরী কন্যার চুলের সোহাগ চুম্বন ।

এই কাল্পনিক কন্যার চুলের যে গন্ধ রয়েছে তা কবিকে মুগ্ধ করে আসলে এই গন্ধ হলো ধান গাছ, কাঁঠাল গাছ, কলমি শাক, মুথা ঘাস, ভেজা হাঁসের পালক, মাছ, মানুষ – এর মিলিত গন্ধ অর্থাৎ বাংলার সান্ধ্যকালীন গন্ধ।

কবি বাংলার এই সন্ধ্যার অপরূপ রূপ বোঝাতে গিয়ে এক কাল্পনিক কন্যাকে আবির্ভাব করেছেন। আসলে সেই কন্যায় হলো জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, যা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না।

3. পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো — এখানে কোন্ কন্যার কথা বলা হয়েছে? পৃথিবীর কোনো পথ তাকে দেখেনি কেন?
অথবা, পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো – এ কন্যা বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? কবির এরূপ ভাবনার কারণ কী

উত্তর:
কন্যার পরিচয় –
 জীবনানন্দ দাশের আকাশে সাতটি তারা কবিতার উদ্ধৃত অংশে কবির কল্পনায় বাংলার সান্ধ্য – প্রকৃতি যে এলোকেশী মেয়ে দেখা দেয় তার কথা বলা হয়েছে।
পৃথিবীর কোনো পথের এই কন্যাকে না দেখার কারণ – জীবনানন্দ বাংলার সৌন্দর্যকে শুধু চোখ দিয়ে দেখেননি, সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়েও তাকে অনুভব করেছেন। সূর্যাস্তের ঠিক পরে ঘাসের উপর বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে সদ্য-ফোটা সপ্তর্ষিমণ্ডলের পাশে কবি কল্পনায় এক এলোকেশী কন্যাকে দেখতে পান। কবি তাঁর চোখে-মুখে সেই রূপসির চুলের অর্থাৎ অন্ধকারের স্পর্শ অনুভব করেন। হিজল – কাঁঠাল – জাম গাছের পাতা ছুঁয়ে নেমে আসা অন্ধকার যেন সেই সুন্দরীর চুলের আদরের চুম্বন।

সন্ধ্যাকালীন গন্ধ – সেই এলোকেশীর চুলের মধুর গন্ধ কবিকে মুগ্ধ করে। এই গন্ধ আসলে পল্লিবাংলার প্রকৃতির সন্ধ্যাকালীন গন্ধ। ধান গাছ, কলমি শাক, শর, ঘাস, বট ফল, হাঁসের পালক, পুকুর, মাছ, মানুষ—সকলের গন্ধ মিশে তৈরি হয় এই বিশেষ গন্ধ।

এলোকেশী কন্যা – বুঝতে অসুবিধা হয় না, কবির কল্পনার এই এলোকেশী কন্যা আসলে পল্লিবাংলার সান্ধ্য-প্রকৃতি। গাছপালা, মানুষ, মনুষ্যেতর জীব — সবাইকে নিয়েই এই প্রকৃতির পরিপূর্ণতা। জীবনানন্দের চোখে রূপসি বাংলা অনন্যা — এমন মোহময়ী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না।

4. এরই মাঝে বাংলার প্রাণ – এই পঙ্ক্তিটির মধ্য দিয়ে কবির যে গভীর অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
অথবা, কবি কোথায় কীভাবে বাংলার প্রাণকে অনুভব করেছেন, আলোচনা করো।

উত্তর:
কবির অনুভূতি-
 আকাশে সাতটি তারা কবিতাটিতে সন্ধ্যাবেলায় পল্লিবাংলার যে রূপ ফুটে ওঠে তা-ই কবি জীবনানন্দ দাশ অপূর্ব ভাষায় বর্ণনা করেছেন।

কামরাঙা-রঙের মেঘ – সূর্য অস্ত যাওয়ার পর গোধূলির লাল আভায় আকাশের মেঘ পাকা কামরাঙা ফলের মতো লাল হয়ে ওঠে। সেই লাল মেঘও যখন দিগন্তরেখায় মিশে যায় তখন দিনরাত্রির সন্ধিক্ষণে শান্ত, নীল সন্ধ্যা নেমে আসে।

তারার ফুটে ওঠা – আকাশে তখন সপ্তর্ষিমণ্ডলের সাতটি তারা সদ্য ফুটে উঠেছে।

এলোকেশী কন্যার ন্যায় সন্ধ্যা – ঘাসের উপর বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কবির মনে হয় যেন এক এলোকেশী কন্যার আবির্ভাব হয়েছে। মাটির বুকে ধীরে ধীরে নেমে আসা অন্ধকার যেন সেই কন্যার ছড়িয়ে পড়া কালো চুলের রাশি। জীবন্ত মানবীর চুলের মতো সেই অন্ধকারের স্পর্শ কবি অনুভব করেন। তাঁর মনে হয়, হিজল-কাঁঠাল-জামের পাতায় সেই চুলের আদরমাখা স্পর্শ অন্ধকার রূপে ঝরে পড়ছে। গাছপালা, লতাগুল্ম, মাটি, জল, মানুষ, মনুষ্যেতর প্রাণী— সবার গন্ধ মিশে তৈরি হয় সেই কন্যার চুলের গন্ধ। এইভাবেই কবি প্রকৃতি এবং জীবজগৎকে মিলিয়ে প্রাণময়ী বাংলাকে অনুভব করেছেন। প্রকৃতি তাঁর চেতনায় হয়ে উঠেছে এক জীবন্ত সত্তা ৷

আকাশে সাতটি তারা কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের একটি মনোমুগ্ধকর কবিতা। এ কবিতায় কবি আকাশের সৌন্দর্য ও রহস্যের কথা বলেছেন। কবির ভাষায়, তারাদের আলোয় মানুষের জীবন আলোকিত হয়। তারারা মানুষকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।

এই কবিতার মাধ্যমে কবি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ও রহস্যের কথা ফুটিয়ে তুলেছেন। কবিতার ভাষা ও ছন্দ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। কবিতার উপমার মাধ্যমে কবি আকাশের সৌন্দর্য ও রহস্যকে আরও সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।

LAQ Part 2

1. ‘আমি পাই টেৱ’–‘আমি’ কে? বক্তার অনুভবটি বিশ্লেষণ কর। 

উত্তর: ‘আমি’ হলেন ‘রূপসী বাংলা’-র স্রষ্টা ও বাংলার প্রকৃতিপ্রেমিক কবি জীবনানন্দ দাশ।কবি জীবনানন্দ গ্রামবাংলার প্রকৃতি জগতে ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যার অপরূপ দৃশ্য দেখে মোহিত। সন্ধ্যা আসছে শান্ত অনুগত কেশবতী কন্যার মতো। ধীরে ধীরে সন্ধ্যার অন্ধকার কেশবতী কন্যার এলো চুলের মতো  দৃশ্যমান সবকিছু ঢেকে ফেলছে। তার চুলের স্পর্শ চুমার মত অবিরত ঝরছে গাছ-গাছালির ওপর। তার চুলের বিন্যাস থেকে স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে পড়ছে। সে গন্ধ নরম ধানে ও কলমি লতার ঘ্রাণে। হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল আর চাঁদা-সরপুঁটির মৃদু গন্ধে। সে ঘ্রাণ কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাতে ও কিশোরের পায়ে-দলা মুথাঘাসে, বটের লাল লাল ফলের ব্যথিত গন্ধে। সান্ধ্য শোভার দৃশ্যে, ঘনায়মান অন্ধকারের স্পর্শ ও গন্ধের মাঝে নিহিত বাংলার সজীব প্রাণের অস্তিত্ব কবি অনুভব করেছেন। তিনি টের পেয়েছেন বাংলার প্রকৃতি জগতের রূপ, রস ও গন্ধের সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকা বাংলার মানুষের সজীবতা। এটাই বাঙালি প্রাণের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য।

2. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় প্রকাশিত কবি জীবনানন্দের বঙ্গপ্রকৃতি–প্রীতির পরিচয় দাও।

উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশের বঙ্গপ্রকৃতি-প্রীতির শ্রেষ্ঠ পরিচয় হল রূপময়ী বাংলার প্রকৃতি জগতের অপার সৌন্দর্য নিয়ে লেখা কাব্যগ্রন্থ ‘রূপসী বাংলা’। এই বইয়ের প্রতিটি কবিতার মধ্যে বঙ্গপ্রকৃতির নানা শোভা, নানা বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্য যেন হাজার ছবি হয়ে ফুটে আছে। আকাশে সাতটি তারা কবিতা সেগুলির মধ্যে একটি। বাংলার বুকে নেমে আসা সন্ধ্যার দৃশ্য কবি কেবল দু-চোখ ভরে দেখেননি। তাঁর দৃষ্টিতে ঘনায়মান সন্ধ্যা যেন কেশবতী কন্যা। সে রূপসীর এলো চুল কেবল কবির চোখ ও মুখের ওপর ভাসমান নয়, তার চুলের চুমা অবিরত ঝরে হিজলে, কাঁঠালে, জামে।সন্ধ্যার এই দৃশ্য বাংলা ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না বলে কবি মনে করেন। পৃথিবীর কোন পথ এ কন্যারে দেখে নি কো—’। হিজল কাঁঠাল জাম নিয়ে বাংলা প্রকৃতির যে গাছ-গাছালি তা বাংলার নিজস্ব প্রকৃতি জগৎ। ওই বঙ্গপ্রকৃতির আরও নিজস্ব অনুষঙ্গ হল নরম ধান, কলমি লতা, হাঁস, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটি, বটের লাল লাল ফল। ওইসব অনুষঙ্গের নিজস্ব ঘ্রাণ যেন রূপসী বঙ্গসন্ধ্যা কেশবতী কন্যার  চুলের বিন্যাস থেকে ঝরে পড়া স্নিগ্ধ গন্ধ।কবি জীবনানন্দ তাঁর গভীর ভালোবাসা ও মমত্ব দিয়ে বাংলার সমাগত সন্ধ্যার সৌন্দর্য বর্ণনার অবকাশে তাঁর বঙ্গপ্রকৃতির পরিচয়কে সার্থক করে রেখেছেন।

3. ‘… আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে আমি পাই টের।’ – আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠলে কবি কী টের পান?

উত্তর: কবি প্রকৃতিপ্রেমী, প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর মনের নিবিড় যোগ আছে। সূর্য অস্ত যাবার পরে যখন গ্রামবাংলার বুকে সন্ধ্যা নেমে আসে, আকাশে সাতটি তারা ফুটে ওঠে, তা কবির মনকে ছুঁয়ে যায়। প্রকৃতির সেই রূপ, প্রকৃতির সেই গন্ধ কবির খুবই পরিচিত। কবি যদি দূরেও থাকেন তবুও তিনি মানসচক্ষে সেই রূপকে পরিলক্ষিত করতে পারেন। গ্রাম বাংলার বুকে সন্ধ্যে ধীরে ধীরে নেমে আসার চিত্র কবি বহুবার দেখেছেন। তাঁর মনের গভীরে, তাঁর অনুভূতির সঙ্গে, গ্রামবাংলা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। বাংলার ধানের গন্ধ, কলমি শাকের গন্ধ, পুকুরের জলের গন্ধ, হাঁসের পালকের গন্ধ, চাঁদা- সরপুঁটি মাছের বিশেষ ধরনের গন্ধ, কিশোরীর চাল ধোয়ার হাতের গন্ধ, মুথাঘাস পায়ের চাপে দলিত হওয়ার যে গন্ধ, সেইসব গন্ধের মধ্যেই মিশে আছে গ্রাম বাংলা। এই সব কিছুই বাংলার রূপ। এইসব কিছুর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জুড়ে আছে গ্রাম বাংলা। কবি যেখানেই থাকুন না কেন আকাশে সাতটি তারা উঠলে কবি গ্রাম বাংলা এই রুপ অনুভব করেন বা ‘টের’ পান।

4. “আমি এই ঘাসে বসে থাকি” – কে, কখন ঘাসে বসে থাকেন? ‘এই ঘাস’ বলতে তাঁর কোন্‌ বিশেষ অভিব্যক্তি প্রকাশিত হয়েছে? 

উত্তর: ‘আমি’ বলতে কবি জীবনানন্দ দাশের কথা বলা হয়েছে।

পৃথিবীর বুকে যখন সন্ধ্যা নেমে আসে তখন কবি ঘাসের উপর বসে থাকেন।

ঘাস মাটির বুকে জন্ম নেয়, মাটির সঙ্গে তার সম্পর্ক গভীর। ঘাসের উপরে বসে থাকার অর্থ পৃথিবীর সঙ্গে নৈকট্য স্থাপন। ঘাসের উপরে বসে থাকার অর্থ পৃথিবীকে ছুঁয়ে থাকা,প্রকৃতির সঙ্গে একাকার হয়ে মিশে যাওয়া। কবি গ্রাম বাংলাকে ভালোবাসেন। গ্রাম বাংলার একটা অঙ্গ হল এই সবুজ ঘাস। এই ঘাসের মধ্যে বসেই কবি প্রকৃতির সান্ধ্য-রূপে অবগাহন করেন। এখানে বসেই তিনি অনুভব করেন কেশবতী কন্যার রূপে সন্ধ্যা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। প্রকৃতি বাংলার বিভিন্ন রূপ, বিভিন্ন ঘ্রাণ কবির মনকে ছুঁয়ে যায়।

5. “যেন মৃত মনিয়ার মতো” – কার সঙ্গে মৃত মনিয়ার তুলনা করা হয়েছে? তুলনাটির যথার্থতা বিচার করো।

উত্তর: সন্ধ্যা নেমে আসছে পশ্চিম দিগন্তে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। সূর্যের লাল আভা আকাশকে রক্তাভ করে তুলেছে। এই রক্তরাঙা আকাশকে কবি মৃত মুনিয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

কবিতায় মুনিয়ার অর্থ আমাদের কাছে মনিয়া বা মুনিয়া পাখি মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে কবি সেই অর্থে মুনিয়া শব্দটি ব্যবহার করে নি। আসলে ‘মনিয়া’র উৎস একটি গ্রিক-ল্যাটিন শব্দ। গ্রিক menos শব্দের অর্থ নিঃসঙ্গ বালক, ল্যাটিন monica-র অর্থ শিশুকন্যা। এমনকি পর্তুগিজ ভাষায় এই menos / monica পরিবর্তিত হয়ে menina-তে পরিণত হয়েছে। অনুমান করা যায় আরবি ভাষায় এই menina থেকেই মুনিয়া শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে এবং আরবি ভাষার প্রভাবে বরিশাল, চট্টগ্রামের বাংলা ভাষায় এই শব্দটিও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাই মনিয়া-র অর্থ পাখি নয়, কন্যাসন্তান। জীবনানন্দের দিনলিপি থেকে জানা যায় মনিয়া আসলে সৈদপুরের এক পাদ্রী এবং এক হিন্দু রমণীর কন্যা। কবির স্মৃতিতে ছিল বাংলার প্রাচীন গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জনের প্রথার কথা।

এই কন্যাসন্তান মনিয়াও যেন গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে। আর লাল রঙ যেন সেই কন্যার মৃত্যুকে ইঙ্গিত করেছে। মনিয়ার মতো কন্যারা যেভাবে গঙ্গাসাগরের অতলে ডুবে যায় নিঃশব্দে, তেমনই আকাশের হলুদাভ লাল মেঘ দিগন্তের ওপারে ঢেউয়ের গভীরে যেন ডুবে গেছে।

6. “এরই মাঝে বাংলার প্রাণ” – বাংলার প্রাণস্পন্দন কবি কিভাবে উপলব্ধি করেছেন?

উত্তর: ‘প্রকৃতি প্রেমিক’ কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতার মাধ্যমে গ্রাম বাংলার সান্ধ্যকালীন রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন।

সবুজ ঘাসে বসে তিনি সন্ধ্যার এক অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করেন। সন্ধ্যার আকাশে সাতটি তারা ফুটে ওঠে। সূর্যের অস্ত যাওয়ার পরবর্তী সময়ের লাল বর্ণের আকাশের রং তাঁকে গঙ্গা সাগরের জলের অতলে ডুবে যাওয়া বিসর্জিত কন্যাকে মনে করায় (যাকে কবি মৃত মনিয়া বলেছেন)। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা সম্পূর্ণ ভাবে নেমে আসে, কোনরূপ চঞ্চলতাহীন সন্ধ্যা যেন প্রকৃতির শান্ত – অনুগত। সন্ধ্যার রং-কে কবির নীল বলে মনে নয়, কবি কল্পনা করেন এ যেন এক ‘কেশবতী কন্যা’। এই কল্পিত কন্যার চুলে স্পর্শ করে কবির চোখ – মুখ। বাংলার পরিচিত গাছ – হিজল, কাঁঠাল, জাম গাছেরাও এই কন্যার স্পর্শ থেকে বঞ্চিত হয় না।

সন্ধ্যাকালীন অপরূপ মায়াময় স্নিগ্ধ গন্ধে ভরে ওঠে চারপাশ। নরম ধানের গন্ধ, কলমীর ঘ্রান, হাসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা – শরপুটিদের মৃদু ঘ্রান, কিশোরীর চাল ধোয়া ভিজে হাত, কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস, লাল বট ফলের ব্যথিত নীরবতা –  পল্লীগ্রামের পরিচিত সব বিশেষ মুহূর্ত – গন্ধ – ঘটনা কবির প্রাণকে ছুঁয়ে যায়। তাঁর মনের গভীরে, তাঁর অনুভূতির সঙ্গে, গ্রামবাংলা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এর মাঝেই কবি খুঁজে পান বাংলার প্রাণ।

7. আকাশে সাতটি তারা কবিতাটি নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

উত্তর: বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী বিখ্যাত কবি হলেন জীবনানন্দ দাশ। সৃষ্টিধর্মী সাহিত্যে নামকরণ বিষয় কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। আলোচ্য কবিতায় আকাশে সাতটি তারা  কবির চোখে ধরা পড়েছে। কবি সেই দৃশ্য দেখার জন্য মাটিতে ঘাসের উপর বসে পড়েছেন। রাঙা মেঘকে কবি মৃত মুনিয়ার মতো দেখেছেন । যা গঙ্গা সাগরে ডুবে গেছে, কেশবতী কন্যার ছায়া কবি সন্ধ্যার আকাশে লক্ষ করেছেন। তার নরম হাতের স্পর্শ কবি দেখেছেন চাল ধোয়া জল এর ঠান্ডাময় অবস্থার মধ্যে। বাংলার সন্ধ্যা প্রকৃতির মাঝে ও সন্ধ্যার আকাশের সাতটি তারার মাঝে কবি  প্রাণ খুঁজে পেয়েছেন। আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠেছে। পাঠকের মনের পর্দাতেও যেন সাতটি তারার ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই নাম করন টি যথার্থ এবং সার্থক হয়েছে।

অডিও পডকাস্ট – Audio Podcast

 আকাশে সাতটি তারা (জীবনানন্দ দাশ) কবিতার বিস্তারিত আলোচনা:

আকাশে সাতটি তারা কবিতার বিষয়বস্তু:

আকাশে সাতটি তারা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আলোচনা:

Loading

Leave a Reply

error: