পাঠ্য বইয়ের বিস্তারিত আলোচনা (ভিডিও টিউটোরিয়াল)
তাপ সম্বন্ধিত অতিরিক্ত ভিডিও টিউটোরিয়াল
অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :
- CGS পদ্ধতিতে তাপের একক কী?
উত্তর: ক্যালোরি।
- SI পদ্ধতিতে তাপের একক কী?
উত্তর:জুল।
- জুল ও ক্যালোরির সম্পর্ক কী?
উত্তর: 1 ক্যালোরি = 4.2 জুল।
- গৃহীত তাপ বা বর্জিত তাপ পরিমাপের সূত্রটি লেখো।
উত্তর: Q=mxsx (t2—t1) ।
- কোন্ পদার্থের আপেক্ষিক তাপ সবচেয়ে বেশি?
উত্তর: জলের আপেক্ষিক তাপ সবচেয়ে বেশি।
- জলের আপেক্ষিক তাপ কত?
উত্তর: জলের আপেক্ষিক তাপ 1 ক্যালোরি/গ্রাম °C
- এমন একটি পদার্থের নাম লেখো যার তিনটি অবস্থা নেই।
উত্তর: আয়োডিন।
৪. কঠিন থেকে তরলে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে কী বলে?
উত্তর: গলন।
- তরল থেকে কঠিনে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে কী বলে?
উত্তর: কঠিনীভবন।
- তরল থেকে বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে কী বলে?
উত্তর: বাষ্পীভবন।
- বাষ্প থেকে তরলে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে কী বলে?
উত্তর: ঘনীভবন।
- প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উন্নতায় কঠিন পদার্থের গলন হয় তাকে কী বলে?
উত্তর: গলনাঙ্ক।
- প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উন্নতায় তরল পদার্থ কঠিনে পরিণত হয় তাকে কী বলে?
উত্তর: হিমাঙ্ক।
- বরফের গলনাঙ্ক কত?
উত্তর: 0°C।
- জলের হিমাঙ্ক কত?
উত্তর: 0°C।
- জল বরফে পরিণত হলে তার আয়তনের কীরূপ পরিবর্তন হয়?
উত্তর: আয়তন বাড়ে।
- জল অপেক্ষা বরফের ঘনত্ব কম না বেশি?
উত্তর: কম।
- পিতলকে গলিয়ে তরলে পরিণত করলে তার আয়তনের কীরূপ পরিবর্তন হয়?
উত্তর: আয়তন কমে।
- চাপ বাড়ালে বরফের গলনাঙ্কের কীরূপ পরিবর্তন হয়?
উত্তর: গলনাঙ্ক কমে।
- ধাতু সংকরের গলনাঙ্ক সেটির উপাদানগুলির গলনাঙ্ক অপেক্ষা কম না বেশি?
উত্তর: কম।
- নির্দিষ্ট অনুপাতের বরফ ও লবণের মিশ্রণকে কী বলে?
উত্তর: হিমমিশ্রণ।
- হিমমিশ্রণের একটি ব্যবহার উল্লেখ করো।
উত্তর: মাছ, মাংস সংরক্ষণের জন্য হিমমিশ্রণ ব্যবহার করা হয়।
- অবস্থার পরিবর্তনের জন্য যে তাপ গৃহীত বা বর্জিত হয় তাকে কী বলে?
উত্তর: লীন তাপ।
- বরফ গলনের লীন তাপ কত?
উত্তর: 80 ক্যালোরি/গ্রাম।
25.0°C উন্নতার 1 গ্রাম বরফকে 0°C উন্নতার 1 গ্রাম জলে পরিণত করতে কত তাপ লাগে?
উত্তর: 80 ক্যালোরি।
- ধীরে ধীরে তরলের উপরিতল থেকে বাষ্পীভূত হওয়ার ঘটনাকে কী বলে?
উত্তর: বাষ্পায়ন।
- একটি নির্দিষ্ট চাপে ও একটি নির্দিষ্ট উন্নতায় তরলের সমগ্র অংশ থেকে দ্রুত বাষ্পীভূত হওয়ার ঘটনাকে কী বলে?
উত্তর: স্ফুটন।
- প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে বিশুদ্ধ জলের স্ফুটনাঙ্ক কত?
উত্তর: 100°C l
- তরলের ওপর চাপ বাড়ালে তরলের স্ফুটনাঙ্কের কীরূপ পরিবর্তন হয়?
উত্তর: স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায়।
- বাষ্পায়ন ও স্ফুটনের একটি পার্থক্য লেখো।
উত্তর: বাষ্পায়ন যে-কোনো উন্নতায় ঘটে, কিন্তু স্ফুটন একটি নির্দিষ্ট উন্নতায় ঘটে।
- সাধারণ জল ও লবণ জলের মধ্যে কার স্ফুটনাঙ্ক বেশি?
উত্তর: লবণ জলের স্ফুটনাঙ্ক বেশি।
- কোনো পদার্থের সঙ্গে কোনো অশুদ্ধি মেশানো থাকলে পদার্থটির গলনাঙ্ক বাড়ে না কমে?
উত্তর: কমে।
- নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্ক নেই এমন দুটি পদার্থের নাম লেখো।
উত্তর: মাখন ও চর্বি।
- কোনো বস্তুকে দ্রুত ঠান্ডা করার জন্য 0°C উন্নতার জল এবং 0°C উদ্ধৃতার বরফের মধ্যে কোন্টি বেশি কার্যকর?
উত্তর: 0°C উদ্ধৃতার বরফ বেশি কার্যকর।
- তরলের ওপর চাপ বাড়ানোর ফলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যাওয়ার ঘটনার একটি ব্যবহারিক প্রয়োগ উল্লেখ করো।
উত্তর: প্রেশার কুকার।
- দার্জিলিং–এ জলের স্ফুটনাঙ্ক কম কেন?
উত্তর: দার্জিলিং-এ বায়ুর চাপ কম, সেইজন্য দার্জিলিং-এ জলের স্ফুটনাঙ্ক কম।
- জলের বাষ্পীভবনের লীন তাপ কত?
উত্তর: জলের বাষ্পীভবনের লীন তাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম।
- শহরে বেশি কুয়াশা দেখা যায় কেন?
উত্তর: শহরের বায়ুমণ্ডলে বেশি ধুলো থাকায় শহরে বেশি কুয়াশা দেখা যায়।
- কঠিন মাধ্যমে কোন্ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হয়?
উত্তর: পরিবহণ পদ্ধতিতে।
- তরল ও গ্যাসীয় মাধ্যমে তাপ কোন্ পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হয়?
উত্তর: পরিচলন পদ্ধতিতে।
- তাপ পরিবহণে সক্ষম এমন একটি অধাতুর নাম লেখো।
উত্তর: গ্রাফাইট তাপের সুপরিবাহী।
- দুটি তাপের কুপরিবাহী পদার্থের নাম লেখো।
উত্তর: কাঠ ও কাচ তাপের কুপরিবাহী।
- পরিচলন স্রোতের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর: ভূপৃষ্ঠে যে বায়ুপ্রবাহ হয় তা একটি পরিচলন স্রোত।
- মাধ্যম ছাড়া তাপ সঞ্চালিত হয় কোন পদ্ধতিতে?
উত্তর: বিকিরণ পদ্ধতিতে।
- সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ কোন্ পদ্ধতিতে আসে?
উত্তর: বিকিরণ পদ্ধতিতে।
- গরম পানীয় অনেক্ষণ গরম রাখতে কী ব্যবহার করা হয়?
উত্তর: থার্মোফ্লাস্ক।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :
- CGS পদ্ধতিতে তাপের এককের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর: CGS পদ্ধতিতে তাপের একক ক্যালোরি। 1 গ্রাম বিশুদ্ধ জলের উষ্ণতা 1°C বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ তাপ লাগে, সেই পরিমাণ তাপকে 1 ক্যালোরি বলে।
- কোনো বস্তু কর্তৃক গৃহীত বা বর্জিত তাপ কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর: কোনো বস্তু কর্তৃক গৃহীত বা বর্জিত তাপ তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন- (i) বস্তুর ভর, (ii) বস্তুর আপেক্ষিক তাপ এবং (iii) বস্তুর উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাস।
- কোনো বস্তু কর্তৃক গৃহীত তাপ বা বর্জিত তাপ নির্ণয়ের সূত্রটি লেখো।
উত্তর: বস্তু কর্তৃক গৃহীত তাপ (Q) = বস্তুর ভর (m) × আপেক্ষিক তাপ (s) × উয়তা বৃদ্ধি (t) এবং বস্তু কর্তৃক বর্জিত তাপ (Q) = বস্তুর ভর (m) x আপেক্ষিক তাপ(s) × উয়তা হ্রাস (1)
- বস্তুর আপেক্ষিক তাপের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর:একক ভরের কোনো পদার্থের উষ্ণতা এক ডিগ্রি বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয়, তাকে ওই পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বলে।
- CGS পদ্ধতিতে আপেক্ষিক তাপের সংজ্ঞা ও একক লেখো।
উত্তর: এক গ্রাম ভরের কোনো পদার্থের উষ্ণতা 1°C বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয়, তাকে ওই পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বলে। CGS পদ্ধতিতে আপেক্ষিক তাপের একক ক্যালোরি/গ্রাম °C।
- জল অপেক্ষা দুধ তাড়াতাড়ি গরম হয় কেন?
উত্তর: জল অপেক্ষা দুধের আপেক্ষিক তাপ কম। একই ভরের দুধ ও জলে একই পরিমাণ তাপ দিলে দুধের উষ্ণতা বেশি বৃদ্ধি পায়। ধরা যাক, m ভরের দুধ ও জলে H তাপ দেওয়া হল। দুধের আপেক্ষিক
তাপ sy এবং জলের আপেক্ষিক তাপ sq। দুধের উষ্ণতা বৃদ্ধি হয়, এবং জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি হয় ।
জলের ক্ষেত্রে H = ms2t2; দুধের ক্ষেত্রে H =ms1t1
- একই ভরের একখণ্ড তামা ও লোহার 1°C উষ্ণতা বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয় কেন?
উত্তর: আমরা জানি, গৃহীত তাপ = বস্তুর ভর × আপেক্ষিক তাপ × উষ্ণতা বৃদ্ধি। এখানে তামার খন্ড ও লোহার খণ্ডের ভর একই এবং উভয়ের উষ্ণতা 1°C বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলির আপেক্ষিক তাপ ভিন্ন। তাই উভয় ক্ষেত্রে 1°C উষ্ণতা বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন পরিমাণ তাপের প্রয়োজন।
- পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: পদার্থের অবস্থান্তর কোনো পদার্থের কোনো এক ভৌত অবস্থা থেকে অন্য এক ভৌত অবস্থায় পরিবর্তিত হওয়ার ঘটনাকে অবস্থার পরিবর্তন বা অবস্থান্তর বলে।
- পদার্থের উচ্চ এবং নিম্ন অবস্থান্তর কাকে বলে?
উত্তর: উচ্চ অবস্থান্তর : তাপ প্রয়োগে যে অবস্থান্তর ঘটে, সেই প্রকার অবস্থান্তরকে উচ্চ অবস্থান্তর বলে। যেমন–জল থেকে বাষ্প হওয়া।
নিম্ন অবস্থান্তর : তাপ নিষ্কাশন করে যে অবস্থান্তর ঘটে, সেই অবস্থান্তরকে নিম্ন অবস্থান্তর বলে। যেমন—বাষ্প থেকে জল কণা তৈরি হওয়া।
- গলন ও গলনাঙ্কের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর: গলনঃ কঠিন পদার্থের তরলে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে গলন বলে। গলনাঙ্ক: প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কঠিন পদার্থ গলে তরলে পরিণত হয়, সেই উষ্ণতাকে ওই পদার্থের গলনাঙ্ক বলে।
- কঠিনীভবন বা হিমায়ন কাকে বলে? হিমাঙ্কের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর: কঠিনীভবন বা হিমায়ন : তরল পদার্থের কঠিনে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে কঠিনীভবন বা হিমায়ন বলে। হিমাঙ্ক: প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় তরল পদার্থ জমে কঠিনে পরিণত হয়, সেই উয়তাকে ওই পদার্থের হিমাঙ্ক বলে।
- কোন পদার্থের গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্ক একই হয় এবং কোন্ পদার্থের গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্ক সমান নয়? উদাহরণ দাও।
উত্তর: বিশুদ্ধ ধাতু এবং কঠিন অবস্থায় যেসব পদার্থ কেলাসাকার তাদের গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্ক একই হয়। যেমন—জলের হিমাঙ্ক 0°C, আবার বরফের গলনাঙ্ক 0°CT কঠিন অবস্থায় যেসব পদার্থ অক্লোসাকার তাদের গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্ক সমান হয় না। যেমন—কঠিন মাখন 28°C থেকে 37°C উষ্ণতার মধ্যে গলে তরলে পরিণত হয়, আবার তরল মাখন 23°C থেকে 20°C উষ্ণতার মধ্যে জমে কঠিনে পরিণত হয়।
- পুনঃশিলীভবন বলতে কী বোঝো?
উত্তর: পুনঃশিলীভবনঃ চাপ প্রয়োগ করে বরফকে গলিয়ে জলে পরিণত করা এবং চাপ উঠিয়ে ওই জলকে পুনরায় বরফে পরিণত করার ঘটনাকে পুনঃশিলীভবন বলে।
- তরলের হিমাঙ্কের ওপর অপদ্রব্যের প্রভাব কী? দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর: কোনো তরল পদার্থে অন্য কোনো পদার্থ দ্রবীভূত থাকলে ওই মিশ্রণের হিমাঙ্ক বিশুদ্ধ তরলের হিমাঙ্ক অপেক্ষা কম হয়। উদাহরণ-(i) বিশুদ্ধ জলের হিমাঙ্ক 0°C। কিন্তু সমুদ্রের জলের হিমাঙ্ক 0°C-এর কম হয়। কারণ সমুদ্রজলে লবণ দ্রবীভূত থাকে। (ii) শীতপ্রধান দেশে গাড়ির রেডিয়েটারে জলের সঙ্গে গ্লিসারিন মিশিয়ে দেওয়া হয়। এতে মিশ্রণের হিমাঙ্ক জলের হিমাঙ্কের (0°C) চেয়ে কম হয়। ফলে রেডিয়েটারের জল বরফে পরিণত হতে পারে না।
- বাষ্পীভবন কাকে বলে? বাষ্পীভবন কী কী পদ্ধতিতে হয়?
উত্তর: বাষ্পীভবন : তরল পদার্থের বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে বাষ্পীভবন বলে।
বাষ্পীভবনের পদ্ধতি : তরলের বাষ্পীভবন দুটি পদ্ধতিতে হয় (i) বাষ্পায়ন এবং (ii) স্ফুটন।
- বাষ্পায়ন কাকে বলে?
উত্তর: ৰাষ্পায়ন : যে-কোনো উষ্ণতায় তরল পদার্থের উপরিতল থেকে ধীরে ধীরে ভরলের বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে বাষ্পায়ন বলে।
- স্ফুটন কাকে বলে?
উত্তর:স্ফুটন ও নির্দিষ্ট চাপে ও নির্দিষ্ট উষ্ণতায় তরল পদার্থের সমগ্র অংশ থেকে দ্রুত তরলের বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে স্ফুটন বলে।
18 তরলের স্ফুটনাস্কের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর: স্ফুটনাঙ্ক ঃ প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় তরল তার সমগ্র অংশ থেকে দ্রুত বাষ্পে পরিণত হয়, সেই উষ্ণতাকে ওই তরলের স্ফুটনাঙ্ক বলে।
- কলকাতা এবং দার্জিলিং-এ বিশুদ্ধ জলের স্ফুটনাঙ্ক কি সমান হবে? যুক্তি দাও।
উত্তর: কলকাতা ও দার্জিলিং-এ বিশুদ্ধ জলের স্ফুটনাঙ্ক সমান হবে না। তরলের স্ফুটনাঙ্ক তরলের উপরিতলে বায়ুচাপের ওপর নির্ভর করে।
দার্জিলিং কলকাতা থেকে প্রায় 2 কিলোমিটার উঁচুতে পাহাড়ের উপর অবস্থিত। পাহাড়ের উচ্চতার জন্য বায়ুর চাপ কমে যায়। বায়ুর চাপ কমলে তরলের স্ফুটনাঙ্কও কমে। কলকাতায় জলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C হলে, দার্জিলিং-এ জলের স্ফুটনাঙ্ক 93.6°C1
- প্রেশার কুকারের মূলনীতিটি লেখো।
উত্তর: প্রেশার কুকারের মূলনীতি ঃ চাপ বাড়ালে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বাড়ে। এই নীতিকে কাজে লাগিয়ে প্রেশার কুকার যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে। প্রেশার কুকার যন্ত্রে আবদ্ধ পাত্রে জলীয় বাষ্পের চাপ বাড়িয়ে 100°C-এর বেশি উষ্ণতায় জল ফোটানো হয়। ফলে বেশি উষ্ণতায় খাদ্যদ্রব্য অল্প সময়ে সুসিদ্ধ হয়।
- সম্পৃক্ত বাষ্প কাকে বলে?
উত্তর: সম্পৃক্ত বাষ্প : কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে সর্বাধিক পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকলে সেই বাষ্পকে সম্পৃক্ত বাষ্প বলে।
- অসম্পৃক্ত বাষ্প কাকে বলে?
উত্তর: অসম্পৃক্ত বাষ্প : কোনো নির্দিষ্ট উয়তায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে সর্বাধিক যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকতে পারে, যদি বায়ুতে তা অপেক্ষা কম পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে তাহলে ওই বাষ্পকে অসম্পৃক্ত বাষ্প বলে।
- শিশিরাঙ্ক কাকে বলে?
উত্তর: শিশিরাঙ্ক ঃ যে উয়তায় কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ু তার মধ্যস্থ জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়, সেই উয়তাকে ওই বায়ুর শিশিরাঙ্ক বলে।
- শিশির উৎপত্তি হয় কীভাবে?
উত্তর: শিশির উৎপত্তি ঃ শরৎকালে এবং শীতকালে সন্ধ্যার পর ভূপৃষ্ঠ শীতল হতে থাকে। ফলে ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুও শীতল হতে থাকে। একসময় বায়ু তার মধ্যস্থ জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়। বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে নামলে বায়ুমধ্যস্থ কিছু জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয় এবং ঘাসের আগায় ও গাছের পাতায় জমা হয়। এই জলকণাগুলিই হল শিশির।
- মেঘ কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর: (১) বায়ুতে যে জলীয় বাষ্প থাকে তা ওপরে উঠে গিয়ে শীতল বায়ুস্তরের সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয় এবং ছোটো ছোটো জলকণায় পরিণত হয়ে বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে বায়ুতে ভেসে বেড়ায়। একেই আমরা মেঘ বলি।
- লীন তাপ কাকে বলে?
উত্তর: লীন তাপ ঃ উষ্ণতা স্থির রেখে একক ভরের কোনো পদার্থের শুধু অবস্থার পরিবর্তনের জন্য যে পরিমাণ তাপ প্রয়োগ বা নিষ্কাশন করতে হয়, সেই পরিমাণ তাপকে ওই পদার্থের ওই অবস্থার পরিবর্তনের লীন তাপ বলে।
- বাষ্পীভবনের লীন তাপ কাকে বলে?
উত্তর: বাষ্পীভবনের লীন তাপ ও প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো তরল পদার্থকে তার স্ফুটনাঙ্কের উষ্ণতায় স্থির রেখে সম্পূর্ণ বাষ্পে পরিণত করতে যে তাপ প্রয়োগ করতে হয় সেই পরিমাণ তাপকে ওই তরলের বাষ্পীভবনের লীন তাপ বলে।
- জলের বাষ্পীভবনের লীন তাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম বলতে কী বোঝো?
উত্তর: জলের বাষ্পীভবনের লীন তাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম বলতে বুঝি, প্রমাণ চাপে 100°C উষ্ণতায় 1 গ্রাম জলকে 100°C উষ্ণতায় 1 গ্রাম বাষ্পে পরিণত করতে 537 ক্যালোরি তাপ প্রয়োজন।
- গলনের লীন তাপ কাকে বলে?
উত্তর: গলনের লীন তাপ ঃ প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো কঠিন পদার্থকে তার গলনাঙ্কের উয়তায় স্থির রেখে সম্পূর্ণ তরলে পরিণত করতে যে তাপ প্রয়োগ করতে হয়, সেই পরিমাণ তাপকে ওই কঠিন পদার্থের গলনের লীন তাপ বলে।
- কঠিনীভবনের লীন তাপ কাকে বলে?
উত্তর: কঠিনীভবনের লীন তাপ : প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো তরল পদার্থকে তার হিমাঙ্কের উয়তায় স্থির রেখে সম্পূর্ণ কঠিনে পরিণত করতে যে তাপ নিষ্কাশন করতে হয়, সেই পরিমাণ তাপকে ওই তরলের কঠিনীভবনের লীন তাপ বলে।
- ঘনীভবনের লীন তাপ কাকে বলে?
উত্তর: ঘনীভবনের লীন তাপ : প্রমাণ চাপে একক ভরের কোনো বাষ্পকে, উষ্ণতার পরিবর্তন না করে, বাষ্পীয় অবস্থা থেকে সম্পূর্ণরূপে তরল অবস্থায় আনতে যে পরিমাণ তাপ নিষ্কাশন করতে হয়, সেই পরিমাণ তাপকে ওই বাষ্পের ঘনীভবনের লীন তাপ বলে।
- বরফ গলনের লীন তাপ ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম বলতে কী বোঝো?
উত্তর: বরফ গলনের লীন তাপ 80 ক্যালোরি/গ্রাম বলতে বোঝায় যে, 0°C উয়তার 1 গ্রাম বরফকে 0°C উষ্ণতার 1 গ্রাম জলে পরিণত করতে 80 ক্যালোরি তাপ লাগে।
- মাটির কলশির জল শীতল হয় কেন?
উত্তর: মাটির কলশিতে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। মাটির কলশির জল এই ছিদ্র দিয়ে বাইরে আসে এবং বাষ্পীভূত হয়। বাষ্পীভবনের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ মাটির কলশি এবং তার মধ্যস্থ জল সরবরাহ করে। ফলে মাটির কলশি এবং কলশির জল ঠান্ডা হয়ে যায়।
- হাতে স্পিরিট ঢাললে ঠান্ডা বোধ হয় কেন?
উত্তর: স্পিরিট উদ্বায়ী তরল। স্পিরিট হাতে ঢাললে তা দ্রুত বাষ্পীভূত হয় এবং বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ হাত থেকে গ্রহণ করে। ফলে হাতের যেখানে স্পিরিট ঢালা হয় সেখানে ঠান্ডা লাগে।
- একই ঘরে অবস্থিত একটি মৃৎপাত্রে ও একটি ধাতুর পাত্রে সম উষ্ণতায় জল রাখা হল। কয়েক ঘণ্টা পরে কোন্ জল শীতলতর হবে? যুক্তিসহ উত্তর দাও।
উত্তর: একই ঘরে অবস্থিত একটি মৃৎপাত্র ও একটি ধাতুর পাত্রে সমউয়তায় জল রাখা হল। কয়েক ঘণ্টা পরে মৃৎপাত্রের জল শীতলতর হবে। কারণ মৃৎপাত্রের গায়ে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকায় ওই ছিদ্র দিয়ে জল চুইয়ে বাইরে আসে এবং বাষ্পীভূত হয়। এই বাষ্পীভবনের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ প্রধানত মৃৎপাত্র এবং তার মধ্যস্থিত জল সরবরাহ করে। ফলে মৃৎপাত্র ও তার মধ্যস্থিত জল শীতল হয়ে যায়। কিন্তু ধাতুর পাত্রের গায়ে কোনো ছিদ্র থাকে না। তাই ধাতুর পাত্রে রাখা জল অপেক্ষাকৃত কম শীতল হবে।
- চাপ বৃদ্ধি করলে বরফের গলনাঙ্ক কীভাবে পরিবর্তন হবে যুক্তিসহ উত্তর দাও।
উত্তর: গলনের ফলে যেসব কঠিন পদার্থের আয়তন বাড়ে, তাদের ওপর চাপ বাড়ালে তাদের গলনাঙ্ক বাড়ে। গলনের ফলে যেসব কঠিন পদার্থের আয়তন কমে, তাদের ওপর চাপ বাড়ালে তাদের গলনাঙ্ক কমে। বরফ গলে জলে পরিণত হলে তার আয়তন কমে যায়। ফলে বরফের ওপর চাপ বাড়ালে বরফের গলনাঙ্ক কমে যায়।
- পারিপার্শ্বিক উষ্ণতা 0°C-এর নীচে নামলে জলের পাইপ ফেটে যায় কেন?
উত্তর: পারিপার্শ্বিক উয়তা 0°-এর নীচে নামলে জলের পাইপের জল লীন তাপ বর্জন করে বরফে পরিণত হয়ে আয়তনে বেড়ে যায়। ফলে পাইপের ভিতরে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয়। এই চাপের ফলে জলের পাইপ ফেটে যায়।
- স্টিলের গ্লাসে ঠান্ডা জল ঢাললে গ্লাসের গায়ে জলবিন্দু দেখা যায় কেন?
উত্তর: স্টিলের গ্লাসে ঠান্ডা জল ঢাললে স্টিলের গ্লাস দ্রুত তাপ বর্জন করে ঠান্ডা হয়ে যায়। বায়ু মধ্যস্থ জলীয় বাষ্প ঠান্ডা গ্লাসের সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলবিন্দুতে পরিণত হয় এবং গ্লাসের গায়ে জমা হয়।
39. 0°C উষ্ণতার বরফের খণ্ডে একটি গর্ত করে তাতে 10°C প্রাথমিক উষ্ণতার জল পূর্ণ করলে কী হবে?
উত্তর: 0°C উয়তার বরফের খণ্ডে একটি গর্ত করে তাতে 10°C উষ্ণতার জল ঢাললে জল তাপ বর্জন করে 0°C উষ্ণতায় পৌঁছোবে এবং বরফ ওই তাপ গ্রহণ করবে ও সামান্য বরফ গলে জলে পরিণত হবে। ফলে গর্তে জলের আয়তন সামান্য বাড়বে। এই অবস্থায় গর্তের জল ও বরফের উষ্ণতা 0°C হবে। কিন্তু গর্তের জল লীন তাপ বর্জন করতে না পারায় ওই জল বরফে পরিণত হবে না।
- দুই খণ্ড বরফ জোরে চেপে ধরে ছেড়ে দিলে তারা জোড়া লেগে যায় কেন?
উত্তর: দুই খণ্ড বরফ জোরে চেপে ধরে ছেড়ে দিলে তারা জোড়া লেগে যায়। চাপের ফলে বরফ টুকরো দুটির সংযোগস্থলের গলনাঙ্ক 0°C-এর নীচে নেমে যায়। কিন্তু বরফের উষ্ণতা 0°C থাকায় ওই স্থানের বরফ, বরফ টুকরো দুটি থেকে লীন তাপ নিয়ে জলে পরিণত হয়। চাপ উঠিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বরফ টুকরো দুটির পৃষ্ঠতলের গলনাঙ্ক আবার বেড়ে 0°C হয়। ফলে ওই জায়গার গলিত জল আবার জমে বরফে পরিণত হয়ে বরফের টুকরো দুটিকে জোড়া লাগিয়ে দেয়।
- প্রেশার কুকারে রান্না দ্রুত হয় কেন?
উত্তর: প্রেশার কুকারের মধ্যে খাদ্যবস্তু এবং জল নিয়ে তার মুখ ঢাকনা দিয়ে বায়ুনিরুদ্ধভাবে আটকে দেওয়া হয়। এরপর কুকারটি জ্বলন্ত উনুনের উপর বসিয়ে উত্তপ্ত করা হয়। তাপে কুকারের জল বাষ্পীভূত হয়ে কুকারের ভিতর জমা হতে থাকে। এতে কুকারের ভিতরে জলের ওপর চাপ বায়ুমণ্ডলের চাপের থেকে বেশি হয়। ফলে কুকারের জলের স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায় এবং প্রায় 120°C উষ্ণতায় জল ফুটতে শুরু করে। ওই উষ্ণতায় কুকারের ভিতরের খাদ্যবস্তু খুব সহজেই দ্রুত সেদ্ধ হয়ে যায়।
- জলের স্ফুটনাঙ্ক কি 100°C-এর কম হওয়া সম্ভব? যুক্তিসহ উত্তর দাও।
উত্তর: জলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C-এর কম তওয়া সম্ভব। চাপ বৃদ্ধিতে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বৃদ্ধি পায় এবং চাপ হ তরলের স্ফুটনাঙ্ক হ্রাস পায়। সুতরাং, জলের উপরিতলের চাপ কমিয়ে দিলে স্ফুটনাঙ্ক 100°C-এর কম হবে।
- 0°C উষ্ণতার জলের চেয়ে 0°C উষুতার বরফ বেশি ঠান্ডা বোধ হয় কেন?
উত্তর: 0°C উষ্ণতার 1 গ্রাম জলকে 0°C উষ্ণতায় 1 গ্রাম বরফে পরিণত করতে 80 ক্যালোরি তাপ নিষ্কাশন করতে হয়। ফলে 0°C উষ্ণতার 1 গ্রাম জল অপেক্ষা 0°C উষ্ণতার 1 গ্রাম বরফে ৪০ ক্যালোরি তাপ কম থাকে। তাই 0°C উষ্ণতার বরফকে 0°C উষ্ণতার জল অপেক্ষা ঠান্ডা বোধ হয়।
- 100°C উষ্ণতার ফুটন্ত জলের চেয়ে 100°C উদ্ধৃতার স্টিমে হাত দিলে কোন ক্ষেত্রে হাত বেশি পুড়বে? কারণসহ উত্তর দাও।
উত্তর: জলের বাষ্পীভবনের লীন তাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম। অর্থাৎ, 100°C উষ্ণতার 1 গ্রাম জল 537 ক্যালোরি তাপ গ্রহণ করে 100°C উষ্ণতার 1 গ্রাম বাষ্পে পরিণত হয়। সুতরাং, 100°C উষ্ণতার 1 গ্রাম জল অপেক্ষা 100°C উষ্ণতার 1 গ্রাম বাষ্পে 537 ক্যালোরি তাপ বেশি থাকে। তাই 100°C উষ্ণতার ফুটন্ত জল অপেক্ষা 100°C উষ্ণতার বাষ্পে হাত বেশি পুড়বে।
- আগুনে জল দিলে আগুন নিভে যায় কেন?
উত্তর: আগুনে জল দিলে সেই জল জ্বলন্ত বস্তু থেকে লীন তাপ গ্রহণ করে বাষ্পীভূত হয়। ফলে জ্বলন্ত বস্তুর উষ্ণতা কমে যায়। আবার উৎপন্ন স্টিম জ্বলন্ত বস্তুর চারপাশ ঘিরে একটি আবরণ তৈরি করে। ফলে জ্বলন্ত বস্তু বায়ুর সংস্পর্শে আসতে পারে না এবং আগুন নিভে যায়।
- একটি বিকারে কিছু জল রেখে তার মধ্যে 100°C উষ্ণতার স্টিম চালনা করলে বিকারের জল ফুটবে কী? যুক্তি দাও।
উত্তর: একটি বিকারে কিছু জল রেখে তার মধ্যে 100°C উষ্ণতার স্টিম চালনা করলে বিকারের জল ফুটবে না। জলের মধ্যে স্টিম চালনা করলে জল স্টিম থেকে তাপ গ্রহণ করবে, ফলে জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে এবং একসময় জলের উষ্ণতা 100°C হবে। এখন জল এবং স্টিমের উষ্ণতা সমান হওয়ায় স্টিম আর তাপ বর্জন করবে না এবং জলও আর তাপ গ্রহণ করবে না। জল স্ফুটনের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ পাবে না, ফলে বিকারের জল ফুটবে না।
- শীতকালে ঠোঁটে গ্লিসারিন লাগানো হয় কেন?
উত্তর: শীতকালে বায়ুতে জলীয় বাষ্প কম থাকায় শীতকালে বাষ্পায়নের হার বেশি হয়। আমাদের ঠোঁট খুব নরম। শীতকালে ঠোঁট থেকে জল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়, ফলে ঠোঁট ফেটে যায়। গ্লিসারিন অনুদ্বায়ী তরল। ঠোঁটে গ্লিসারিন লাগালে গ্লিসারিন সহজে বাষ্পীভূত হয় না, ফলে আমাদের ঠোঁট শুষ্ক বায়ুর সংস্পর্শে আসতে পারে না। তাই ঠোঁটের জল বাষ্পীভূত হতে পারে না এবং আমাদের ঠোঁট ফাটে না।
- দার্জিলিং-এ ফুটন্ত জলে হাত দিলে হাত কম পোড়ে কেন?
উত্তর: দার্জিলিং অনেক উঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় ওখানে বায়ুর চাপ কম। তাই দার্জিলিং-এ জলের স্ফুটনাঙ্ক (93.6°C) কম হয়। অর্থাৎ, দার্জিলিং-এ জল কম উষ্ণতায় ফোটে। সুতরাং, দার্জিলিং-এ ফুটন্ত জলের উষ্ণতা 100°C-এর অনেক কম হয়। তাই দার্জিলিং-এ ফুটন্ত জলে হাত দিলে হাত কম পোড়ে।
- পিতলের কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য মূর্তি তৈরি করতে এটি ব্যবহার করা হয়?
উত্তর:পিতল তরল থেকে কঠিনে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে। গলিত পিতল ছাঁচে ঢেলে দিলে যখন জমে কঠিন হয় তখন আয়তনে বেড়ে ছাঁচটিকে সম্পূর্ণভাবে ভরাট করে ফেলে এবং অবিকল ছাঁচের আকার পায়।
- পাহাড়ের পাথরে ফাটল সৃষ্টি হয় কেন?
উত্তর: পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে বৃষ্টির জল আটকে থাকে। শীতকালে ওই জল জমে বরফে পরিণত হয়। জল বরফে পরিণত হলে তার আয়তন বেড়ে যায় এবং পাহাড়ের খাঁজে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপের ফলে পাহাড়ের পাথর ফেটে যায়।
- 0°C উষ্ণতার 20 গ্রাম বরফকে ওই উদ্ধৃতায় সম্পূর্ণ জলে পরিণত করতে কত তাপ লাগবে?
উত্তর: বরফ গলনের লীন তাপ 80 ক্যালোরি/গ্রাম। অর্থাৎ, 0°C উষ্ণতার 1 গ্রাম বরফকে ওই উষ্ণতার 1 গ্রাম জলে পরিণত করতে ৪০ ক্যালোরি তাপ লাগে। সুতরাং, 0°C উষ্ণতার 20 গ্রাম বরফকে ওই উষ্ণতায় সম্পূর্ণ জলে পরিণত করতে তাপ লাগে = (20×80) ক্যালোরি=1600 ক্যালোরি।
52. শীতকালে ভিজে জামাকাপড় তাড়াতাড়ি শুকোয় কেন?
উত্তর: শীতকালে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব কম হয়, ফলে শীতকালে বাষ্পায়নের হার খুব বেশি। তাই শীতকালে ভিজে জামাকাপড় তাড়াতাড়ি শুকোয়।
- ভিজে জামাকাপড় গায়ে শুকোলে সর্দি হবার সম্ভাবনা থাকে কেন?
উত্তর: ভিজে জামাকাপড় গায়ে শুকোলে সর্দি হবার সম্ভাবনা থাকে, কারণ ভিজে জামাকাপড়ের জল শরীর থেকে লীন তাপ গ্রহণ করে বাষ্পীভূত হয়। ফলে শরীরের উদ্ধৃতা কমে যায় এবং সর্দি হবার সম্ভাবনা থাকে।
- একটি পারদ থার্মোমিটারকে জলে ডুবিয়ে তারপর বাইরে আনলে তাপমাত্রা কমতে থাকে কেন?
উত্তর: থার্মোমিটারকে জলে ডুবিয়ে বাইরে আনলে থার্মোমিটারের বাল্বে লাগা জল থার্মোমিটারের বাল্ব থেকে লীন তাপ গ্রহণ করে দ্রুত বাষ্পে পরিণত হয়। ফলে থার্মোমিটারের বালবের উষ্ণতা কমে এবং থার্মোমিটারে পাঠ কমতে থাকে।
- গরমকালে অফিস, আদালতের ঘরের দরজা জানালায় ভেজা খসখস লাগানো হয় কেন?
উত্তর: গরমকালে অফিস, আদালতের ঘরের দরজা জানালায় খসখস লাগিয়ে তা জল দিয়ে ভেজানো হয়। খসখসের জল বাষ্পীভূত হওয়ার সময় ঘর থেকে লীন তাপ সংগ্রহ করে। ফলে ঘরের উষ্ণতা কমে যায় ও ঘর ঠান্ডা হয়।
- গরম চা তাড়াতাড়ি খাওয়ার সময় কাপ থেকে ডিশে ঢাললে কী সুবিধা হয় ও কেন?
উত্তর: গরম চা ডিশে ঢাললে চা তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায়। ফলে চা পান করতে সুবিধা হয়। কারণ গরম চা ডিশে ঢাললে তার উপরিতলের ক্ষেত্রফল বেড়ে যায়, তার ফলে বাষ্পায়নের হার বেড়ে যায়। বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ চা থেকে গ্রহণ করে এবং চা দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায়।
- সন্ধ্যাবেলা শিশির পড়ে না কেন?
উত্তর: দিনেরবেলায় সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয় এবং সন্ধ্যার পর তাপ বিকিরণ করে ভূপৃষ্ঠ ক্রমশ শীতল হতে থাকে। সন্ধ্যার সময় ভূপৃষ্ঠ যথেষ্ট পরিমাণ তাপ বিকিরণ না করায় ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু শিশিরাঙ্কের নীচে নামতে পারে না। তাই সন্ধ্যাবেলা শিশির পড়ে না।
- গ্রীষ্মকালে কুকুর জিভ বের করে হাঁফায় কেন?
উত্তর: গরমকালে কুকুর জিভ বের করে হাঁফায়। এই সময় জিভের জল বাষ্পীভূত হয় এবং জলের বাষ্পীভবনের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ জিত থেকে সরবরাহ হওয়ায় জিভ ঠান্ডা হয় এবং কুকুর আরাম বোধ করে।
- গ্রীষ্মকালে তপ্ত রাস্তা জল দিয়ে ধোয়া হয় কেন?
উত্তর:গ্রীষ্মে তপ্ত রাস্তা জল দিয়ে ধুলে, জল তপ্ত রাস্তা থেকে লীন তাপ গ্রহণ করে বাষ্পীভূত হয়। ফলে রাস্তার উষ্ণতা কমে যায় ও তপ্ত রাস্তা শীতল হয়।
- গরমকালে ঘামে ভেজা শরীরে হাওয়ার সামনে দাঁড়ালে আরাম হয় কেন?
উত্তর: ঘামে ভেজা শরীরে হাওয়ার সামনে দাঁড়ালে শরীরের ঘাম দ্রুত বাষ্পীভূত হয়। ঘামের বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ দেহ থেকে শোষিত হয়। ফলে দেহে শীতলতার অনুভূতি হয়। তাই আরাম লাগে।
- তাপ সঞ্চালন কাকে বলে? তাপ সঞ্চালন কোন কোন পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়?
উত্তর: তাপ সঞ্চালন : উন্নতর স্থান থেকে অপেক্ষাকৃত কম উন্ন স্থানে তাপ চলাচল করাকে তাপ সঞ্চালন বলে।
তাপ সঞ্চালন তিনটি পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়। (i) পরিবহণ (Conduc tion), (ii) পরিচলন (Convection) এবং (iii) বিবরণ (Radiation)।
- তাপ পরিবহণ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: পরিবহণ : যে প্রণালীতে তাপ কোনো বস্তুর উন্নতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে বা কোনো বস্তু থেকে সেটির সঙ্গে সংযুক্ত শীতলতর অন্য বস্তুতে সঞ্চালিত হয়, অথচ বস্তুর কণিকাগুলির স্থানচ্যুতি ঘটে না, সেই পদ্ধতিকে বলে পরিবহণ।
- তাপের পরিচলন বলতে কী বোঝো?
উত্তর: পরিচলন : যে প্রণালীতে কোনো পদার্থের কণাগুলি নিজেরাই উন্নতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে স্থান পরিবর্তন করে তাপ সঞ্চালন করে তাকে বলে পরিচলন।
- তাপের বিকিরণের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর: বিকিরণ ঃ যে প্রণালীতে তাপ মাধ্যম ছাড়া বা মাধ্যম থাকলেও মাধ্যমকে উত্তপ্ত না করে একস্থান থেকে অন্যস্থানে সঞ্চালিত হয়, তাকে বিকিরণ বলে। বিকিরণ প্রণালীতে তাপ তরঙ্গের আকারে উন্নতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে সঞ্চালিত হয়।
- তাপের সুপরিবাহী কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর: তাপের সুপরিবাহী ঃ যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ সহজেই পরিবাহিত হয়। সেইসব পদার্থকে তাপের সুপরিবাহী বলে। সকল ধাতুই তাপের সুপরিবাহী। যেমন—সোনা, রুপা, তামা, লোহা, পারদ প্রভৃতি তাপের সুপরিবাহী। গ্রাফাইট অধাতু হলেও তাপের সুপরিবাহী।
- তাপের কুপরিবাহী কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর: তাপের কুপরিবাহী ঃ যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ সহজে পরিবাহিত হয় না, সেইসব পদার্থকে তাপের কুপরিবাহী বলে। যেমন—কাচ, কাঠ, তুলো, পশম, রবার, বায়ু প্রভৃতি তাপের কুপরিবাহী। পারদ ছাড়া সকল তরল পদার্থ ও সকল গ্যাসীয় পদার্থ তাপের কুপরিবাহী।
- একটি তামার দণ্ডের এক প্রান্তে একটি পাতলা কাগজ একবার জড়িয়ে আগুনের শিখায় ধরলে কাগজটি তাড়াতাড়ি জ্বলে না কেন?
উত্তর: তামা তাপের সুপরিবাহী। কাগজ সমেত তামার দণ্ডটিকে আগুনের শিখায় ধরলে তামা জ্বলন্ত শিথা থেকে তাপ নিয়ে দ্রুত দূরে পাঠিয়ে দেয়। তাই তামার দণ্ডের উপর জড়ানো কাগজ জ্বলার জন্য প্রয়োজনীয় তাপ পেতে দেরি হয়। তাই কাগজটি তাড়াতাড়ি জ্বলে না।
- একটি কাঠের দণ্ডের একপ্রান্তে একটি পাতলা কাগজ একবার জড়িয়ে আগুনের শিখায় ধরলে কাগজটি তাড়াতাড়ি জ্বলে ওঠে কেন?
উত্তর: কাঠ তাপের কুপরিবাহী। কাগজ সমেত কাঠের দণ্ডটিকে আগুনের শিখায় ধরলে আগুনের শিখার তাপ কাঠের মধ্য দিয়ে দ্রুত দূরে পাঠাতে পারে না। ফলে কাগজ তাড়াতাড়ি গরম হয়ে ওঠে ও তাড়াতাড়ি জ্বলে ওঠে।
- শীতকালে সুতোর কাপড়ের চেয়ে পশমের কাপড় বেশি গরম বোধ হয় কেন?
উত্তর: শীতকালে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা আমাদের শরীরের উষ্ণতার চেয়ে কম হয়। তাই আমাদের শরীর থেকে তাপ বায়ুমণ্ডলে চলে যায়, ফলে আমাদের শীত লাগে। কিন্তু পশমের কাপড় পরলে আমাদের শীত লাগে না। আমাদের গরম বোধ হয়। কিন্তু সুতোর কাপড় পরলে সেইরূপ গরম বোধ হয় না। পশমের কাপড় সুতোর কাপড়ের চেয়ে তাপের বেশি কুপরিবাহী এবং পশমের আঁশগুলি আলগা থাকায় সেই ফাঁকে ফাঁকে বায়ু আটকে থাকে। বায়ুও তাপের কুপরিবাহী। তাই পশমের পোশাক পরলে আমাদের শরীর থেকে তাপ বায়ুমণ্ডলে যেতে পারে না। ফলে আমাদের গরম বোধ হয়।
- কেটলির হাতলে বেত জড়ানো থাকে কেন?
উত্তর: কেটলি অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি। এটি তাপের সুপরিবাহী। কেটলি উনুনে বসিয়ে গরম করলে তা খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায় এবং কেটলির হাতল হাত দিয়ে ধরা যায় না। বেত তাপের কুপরিবাহী। হাতলটিতে বেত জড়ানো থাকলে হাতলটি ধরলে আর গরম লাগে না। কারণ কেটলির হাতলের তাপ বেতের মধ্য দিয়ে খুব কম পরিবাহিত হয়।
- বরফ কাঠের গুঁড়ো দিয়ে ঢেকে রাখা হয় কেন?
উত্তর: কাঠের গুঁড়ো তাপের কুপরিবাহী, তাই বরফ কাঠের গুঁড়ো দিয়ে ঢেকে রাখলে বায়ুমণ্ডল থেকে তাপ বরফে সহজে পরিবাহিত হতে পারে না। ফলে বরফ অনেকক্ষণ কঠিন অবস্থায় থাকে, সহজে গলে না।
- খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘর শীতকালে গরম এবং গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা বোধ হয় কেন?
উত্তর: খড় তাপের কুপরিবাহী। শীতকালে খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরের ভিতরের তাপ বাইরে আসতে পারে না এবং গ্রীষ্মকালে বাইরের তাপ ভিতরে যেতে পারে না। তাই খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘর শীতকালে গরম এবং গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা বোধ হয়।
- শীতকালে একটা সুতোর মোটা জামা গায়ে দেওয়ার চেয়ে একই সুতোর তৈরি দুটো পাতলা জামা পরলে বেশি গরম লাগে কেন?
উত্তর:সুতোর তাপের কুপরিবাহী। সুতোর তৈরি দুটো পাতলা জামা গায়ে দিলে দুটো জামার ফাঁকে বায়ু আবদ্ধ থাকে। বায়ু তাপের কুপরিবাহী। তাই শরীরের তাপ সুতোর জামা ও বায়ুর মধ্য দিয়ে বাইরে যেতে পারে না। ফলে আমাদের গরম লাগে।
- শীতকালে হাতি গায়ে ধূলো মাথে কেন?
উত্তর:শীতকালে হাতি গায়ে ধুলো মাখে তার কারণ হল ধুলো মাখলে তাদের দেহ ও ধুলোর মাঝখানে একটি বায়ুর স্তর তৈরি হয়। বায়ু তাপের কুপরিবাহী। তাই হাতির দেহ থেকে বেরিয়ে আসা তাপ বায়ুর স্তরকে ভেদ করে চলে যেতে পারে না। তাই শীতকালে হাতির আরাম লাগে।
- শীতকালে গায়ে কম্বল চাপা দিলে আরাম লাগে কেন?
উত্তর: কম্বল পশম বা উল দিয়ে তৈরি হয়। উল বা পশম তাপের কুপরিবাহী। শীতকালে গায়ে কম্বল দিলে আমাদের শরীরের তাপ বাইরে বেরতে পারে না, তাই আমাদের আরাম লাগে।
- শীতকালে পাখিরা কখনো কখনো পালক ফুলিয়ে বসে থাকে কেন?
উত্তর: শীতকালে পাখিরা কখনো কখনো পালক ফুলিয়ে বসে থাকে। পালক ফোলালে পালকের মধ্যে বায়ু আটকে থাকে। বায়ু তাপের কুপরিবাহী তাই পাখির দেহ থেকে বেরিয়ে আসা তাপ বায়ুর স্তর ভেদ করে বাইরে যেতে পারে না। ফলে পাখিদের দেহ গরম থাকে।
- পরিচলন স্রোত কাকে বলে?
উত্তর: তরল বা গ্যাস গরম হলে তা হালকা হয়ে ওপরে ওঠে এবং ওপরের ঠান্ডা অংশ ভারী বলে নীচে নামে। এর ফলে তরল বা গ্যাসের মধ্যে যে চক্রাকার স্রোত সৃষ্টি হয় তাকে পরিচলন স্রোত বলে।
- তামা ও রুপার দুটি মুদ্রাকে ঘরের উষ্ণতা থেকে 100°C পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হল। এ দুটি কি সমপরিমাণ তাপ গ্রহণ করবে? তোমার উত্তরের স্বপক্ষে ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর: বস্তু কর্তৃক গৃহীত তাপ বস্তুর ভর, আপেক্ষিক তাপ ও উষ্ণতা বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে। গৃহীত তাপ = বস্তুর ভর × আপেক্ষিক তাপ × উষ্ণতা বৃদ্ধি এখানে তামা ও রুপা উভয় মুদ্রার উষ্ণতা বৃদ্ধি একই। কিন্তু মুদ্রা দুটির ভর ও আপেক্ষিক তাপ ভিন্ন। সুতরাং, মুদ্রা দুটি সমপরিমাণ তাপ গ্রহণ করবে না।
- একই উষ্ণতায় এক গ্রাম লোহা এবং এক গ্রাম তামা কি একই পরিমাণ তাপ গ্রহণ করবে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: একই উষ্ণতায় এক গ্রাম লোহা এবং এক গ্রাম তামা একই পরিমাণ তাপ ধারণ করবে না। কারণ বস্তুর মোট তাপ নির্ভর করে বস্তুর ভর, আপেক্ষিক তাপ ও উয়তার ওপর। এখানে লোহা ও তামার ভর ও উষ্ণতা একই হলেও ওদের আপেক্ষিক তাপ ভিন্ন। তাই তারা একই পরিমাণ তাপ ধারণ করবে না।
- ইগলু বরফ দিয়ে তৈরি করা হয় কেন?
উত্তর: বরফ তাপের কুপরিবাহী। তাই বরফ দিয়ে তৈরি ইগলুর ভিতরের তাপ বাইরে আসতে পারে না। ফলে ইগলুর ভিতরটা বেশ গরম থাকে।
- গ্রীষ্মকালে জলচর প্রাণীরা জলের কোন স্তরে থাকতে আরাম বোধ করে?
উত্তর: জল তাপের কুপরিবাহী। গ্রীষ্মকালে জলের ওপরের স্তর গরম হলেও নীচের স্তর গরম হয় না। তাই জলচর প্রাণীরা গ্রীষ্মকালে জলের নীচের স্তরে থাকতে আরাম বোধ করে।
- মাছ সংরক্ষণের জন্য বিশুদ্ধ বরফ না দিয়ে নুন মেশানো বরফ নেওয়া হয় কেন?
উত্তর: বরফের গলনাঙ্ক 0°C। বরফের সঙ্গে নুন মেশালে ওই মিশ্রণের উষ্ণতা কমে -21°C হয়। একে হিমমিশ্রণ বলে। ওই নিম্ন উষ্ণতার জন্য মাছ সংরক্ষণে হিমমিশ্রণ ব্যবহার করা হয়।
- পারিপার্শ্বিক উষ্ণতা 0°C বা তার কম হলে বিশুদ্ধ বরফ গলতে পারে না কেন? ধরে নেওয়া যাক অন্যান্য ভৌত অবস্থা অপরিবর্তিত আছে।
উত্তর: বরফ 0°C উষ্ণতায় গলে, ওই গলনের জন্য 80 cal/g লীন তাপ লাগে। ওই তাপ বরফ তার পারিপার্শ থেকে সংগ্রহ করে। যদি অন্যান্য ভৌত অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে এবং পারিপার্শের উষ্ণতা 0°C বা তার কম হয় তবে বরফ আর তার গলনের জন্য লীন তাপ সংগ্রহ করতে পারবে না ফলে গলতেও পারবে না।
84.বাষ্পায়ন ও স্ফুটনের মধ্যে পার্থক্য লেখো
উত্তর: বাষ্পায়ন ও স্ফুটনের পার্থক্য।
বাষ্পায়ন |
স্ফুটন |
1. বাষ্পায়ন তরলের উপরিতল থেকে হয়। |
1. স্ফুটন তরলের সমগ্র অংশ থেকে হয়। |
2. বাষ্পায়ন যে-কোনো উষ্ণতার ঘটে। |
2. স্ফুটন নির্দিষ্ট চাপে একটি নির্দিষ্ট উয়তায় ঘটে। |
3. বাষ্পায়ন খুব ধীরে ধীরে হয়। |
3. স্ফুটন খুব দ্রুত হয়। |
4. বাষ্পায়ন নিঃশব্দে হয়। |
4. স্ফুটন সশব্দে হয়। |
5. বাষ্পায়ন যে-কোনো চাপে হয়। |
5. স্ফুটনে তরলের ওপরের বাষ্পচাপ, বাইরের বায়ুর চাপের সমান হয়। |
6. বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ তরল নিজেই সরবরাহ করে। ফলে তরলের উষ্ণতা কমে যায়। |
6. স্ফুটনের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ তরল বাইরে থেকে গ্রহণ করে। ফলে তরলের উয়তা স্থির থাকে। |
7. উয়তা বাড়লে বাষ্পায়নের হার বাড়ে। |
7. স্ফুটনে তরলের উষ্ণতা স্থির থাকে। |
- কোনো তরলের স্ফুটনাঙ্ক উল্লেখ করার সময় চাপ উল্লেখ করা উচিত কেন?
উত্তর: চাপ বাড়ালে তরলের স্ফুটন প্রক্রিয়া বাধা পেয়ে স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায়। আবার চাপ কমালে তরলের বাষ্পে পরিণত হতে সুবিধা হয়। অর্থাৎ স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। তাই তরলের স্ফুটনাঙ্ক উল্লেখ করার সময় চাপ উল্লেখ করা উচিত।
গাণিতিক প্রশ্নোত্তর :
- 10 গ্রাম ভরের একখণ্ড সিসার উয়তা 50°C বৃদ্ধি করতে কত তাপ প্রয়োজন? সিসার আপেক্ষিক তাপ = 0.03 ক্যালোরি/গ্রাম °CI
উত্তর: আমরা জানি, গৃহীত তাপ =mst
এখানে
m = ভর = 10 গ্রাম
s = আপেক্ষিক তাপ = 0.03 ক্যালোরি/গ্রাম °C
t = উয়তা বৃদ্ধি = 50°C :
: গৃহীত তাপ = (10 × 0.03 × 50) ক্যালোরি = 15 ক্যালোরি।
- 100 গ্রাম বিশুদ্ধ জলের উয়তা 30°C থেকে স্ফুটনাঙ্কে নিয়ে যেতে কত তাপ প্রয়োজন?
উত্তর: জল কর্তৃক গৃহীত তাপ = জলের ভর × আপেক্ষিক তাপ × উষ্ণতা বৃদ্ধি
এখানে জলের ভর = 100 গ্রাম
জলের আপেক্ষিক তাপ = 1 ক্যালোরি/গ্রাম °C
উষ্ণতা বৃদ্ধি = 100°C – 30°C = 70°C
.. জল কর্তৃক গৃহীত তাপ = (100 × 1 ×70) ক্যালোরি ক্যালোরি= 7000
প্রয়োজনীয় তাপ = 7000 ক্যালোরি।
- 50 গ্রাম সিসার উয়তা 100°C থেকে কমে 60°C হলে কী পরিমাণ তাপ বর্জিত হবে? সিসার আপেক্ষিক তাপ = 0.03 ক্যালোরি/গ্রাম °C।
উত্তর: সিসা কর্তৃক বর্জিত তাপ = mst
এখানে
m = সিসার ভর = 50 গ্রাম
s = সিসার আপেক্ষিক তাপ = 0.03 ক্যালোরি/গ্রাম°C
t = উষ্ণতা হ্রাস = 100°C – 60°C = 40°C
: সিসা কর্তৃক বর্জিত তাপ = (50 × 0.03 × 40) ক্যালোরি = 60 ক্যালোরি
- 0°C উষ্ণতায় 12 গ্রাম বরফকে গলিয়ে জলে পরিণত করতে কত তাপ লাগবে?
উত্তর: বরফ গলনের লীন তাপ 80 ক্যালোরি/গ্রাম।
.. 0°C উয়তার 1 গ্রাম বরফকে 0°C উষ্ণতার 1 গ্রাম জলে পরিণত করতে ৪০ ক্যালোরি তাপ লাগে।
: 0°C উষ্ণতার 12 গ্রাম বরফকে 0°C উয়তার 1 গ্রাম জলে পরিণত করতে তাপ লাগে = (12 ×80) ক্যালোরি = 960 ক্যালোরি।
- 100°C উয়তার 10 গ্রাম জলকে সম্পূর্ণ বাষ্পে পরিণত করতে কত তাপ লাগবে?
উত্তর: জলের বাষ্পীভবনের লীন তাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম।
: 100°C উয়তার 1 গ্রাম জলকে সম্পূর্ণ বাষ্পে পরিণত করতে তাপ লাগে 537 ক্যালোরি
: 100°C উষ্ণতার 1 গ্রাম জলকে সম্পূর্ণ বাষ্পে পরিণত করতে তাপ লাগে = (537×10) ক্যালোরি = 5370 ক্যালোরি।
- 0°C উষ্ণতার 250 গ্রাম বরফকে 0°C উয়তার সম্পূর্ণ জলে পরিণ করতে কত তাপ লাগবে?
উত্তর: বরফ গলনের লীন তাপ = 80 ক্যালোরি/গ্রাম।
: 0°C উষ্ণতার 1 গ্রাম বরফকে 0°C উষ্ণতার সম্পূর্ণ জলে পরিণত করতে তাপ লাগে 80 ক্যালোরি।
: 0°C উয়তার 250 গ্রাম বরফকে 0°C উয়তার সম্পূর্ণ জলে পরিণত করতে তাপ লাগে = (250 ×80) ক্যালোরি = 2000 ক্যালোরি।
- একটি 50 গ্রাম ভরের পদার্থ খণ্ডের উষ্ণতা 2°C বাড়াতে 25 ক্যালোরি তাপ লাগে। ওই পদার্থের আপেক্ষিক তাপ কত?
উত্তর: এখানে
ভর (m) = 50 গ্রাম;
উষ্ণতা বৃদ্ধি (t) = 2°C।
প্রয়োজনীয় তাপ (Q) = 25 ক্যালোরি,
আপেক্ষিক তাপ (s) = ?
আমরা জানি, Q = mst
25 = 50 × s × 2 বা, 25 = 100 s বা s =25/100 = 0.25
.:. ওই পদার্থের আপেক্ষিক তাপ 0.25 ক্যালোরি/গ্রাম °C।
- 3200 ক্যালোরি তাপ দিয়ে 0°C তাপমাত্রায় কত গ্রাম বরফকে ওই একই তাপমাত্রায় জলে পরিণত করা যাবে?
উত্তর: আমরা জানি, 0°C তাপমাত্রায় 1 গ্রাম বরফকে 1 গ্রাম জলে পরিণত করতে ৪০ ক্যালোরি তাপ লাগে।
.. 3200 ক্যালোরি তাপ দিয়ে 0°C তাপমাত্রায় বরফ গলানো যাবে 3200/ 80 গ্রাম = 40 গ্রাম।