Skip to content

অভিষেক (কবিতা) : দশম শ্রেণী বাংলা

কবি পরিচিতি

জন্ম – ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের যশোর জেলার অন্তর্গত সাগরদাঁড়ি গ্রামে মধুসুদন দত্ত জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা রাজনারায়ণ দত্ত, মা জাহ্নবী দেবী।

ছাত্রজীবন – ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে মধুসূদন কলকাতার হিন্দু কলেজের জুনিয়র স্কুল বিভাগে ভরতি হন। পরের বছর ওই স্কুলের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী সভায় শেকসপিয়রের কবিতা থেকে আবৃত্তির জন্য তিনি পুরস্কার পান। ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে তিনি জুনিয়র বৃত্তি নিয়ে হিন্দু কলেজের সিনিয়র বিভাগে ভরতি হন এবং ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে স্ত্রীশিক্ষা সম্বন্ধে ইংরেজিতে প্রবন্ধ লিখে স্বর্ণপদক লাভ করেন। পরিবারের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়ারি মধুসুদন কলকাতার ওল্ড মিশন গির্জায় খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। ১৮৪৪-এর নভেম্বরে তিনি বিশপ্স কলেজে গ্রিক, লাতিন ও সংস্কৃত ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভরতি হন।

কর্মজীবন ও সাহিত্যজীবন – ১৮৪৮-এ মধুসুদন চলে যান মাদ্রাজে এবং ব্ল‍্যাক টাউনের অ্যাসাইলাম স্কুলে ইংরেজির শিক্ষকরূপে যোগ দেন। বিয়ে করেন মেরি রেবেকা ম্যাকটাভিসকে। Timothy Penpoem ছদ্মনামে Madras Circular and General Chronicle, Athenaeum এবং Spectator পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগেও তিনি কাজ করতে থাকেন। পরবর্তী সময়ে Athenaeum পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্য The Captive Ladie

১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে তিনি Hindu Chronicle নামক পত্রিকা প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন। ১৮৫২-তে মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি হাই স্কুলের শিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৮৫৪-তে তিনি দৈনিক Spectator পত্রিকার সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। চার সন্তানের জননী রেবেকার সঙ্গেও এই সময়েই তাঁর আট বছর বাদে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। পরের বছর তিনি এমিলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়াকে বিয়ে করেন। অর্থকষ্ট ও স্থায়ী চাকরির অভাবের মধ্যেও তিনি সাহিত্যচর্চা বন্ধ করেননি। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে তাঁর শর্মিষ্ঠা নাটক প্রকাশিত হয়। সেপ্টেম্বরে নাটকটি বেলগাছিয়া নাট্যমঞ্চে অভিনীতও প্রশংসিত হলে তিনি নাটক রচনায় আরও উৎসাহী হয়ে ওঠেন। ১৮৬০-এর এপ্রিলে প্রকাশিত হয় পদ্মাবতী নাটক, মে মাসে প্রকাশ পায় তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয় মেঘনাদবধ কাব্য-এর প্রথম খণ্ড। এ বছর ১২ ফেব্রুয়ারি ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ’ প্রবর্তনের জন্য তিনি কালীপ্রসন্ন সিংহের বাড়িতে সংবর্ধিত হন।

মার্চ মাসে পাদরি লঙ-এর ভূমিকা-সহ By a Native ছদ্মনামে নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করেন। জুলাই মাসে প্রকাশিত হয় তাঁর ব্রজাঙ্গনা কাব্য, মেঘনাদবধ কাব্য (দ্বিতীয় খণ্ড) এবং আত্মবিলাপ। আগস্টে প্রকাশিত হয় কৃষ্ণকুমারী নাটক। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে বীরাঙ্গনা কাব্য প্রকাশিত হয়। এ সময়ে তিনি কিছুদিনের জন্য হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদনাও করেন। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে আইন পড়ার জন্য মধুসুদন ইংল্যান্ড যান। কিন্তু আবহাওয়া ও বর্ণবিদ্বেষ সহ্য করতে না পেরে জুন মাসে কবি ফ্রান্সের ভার্সাই-তে চলে যান। সেখানে তিনি চরম আর্থিক সংকটে পড়েন যা থেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁকে মুক্ত করেন। এখানে বসেই মধুসুদন তাঁর বিখ্যাত সনেটগুলি রচনা করেন।

১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে তাঁর চতুর্দশপদী কবিতাবলী প্রকাশিত হয়। এ বছরের ১৭ নভেম্বর তিনি ব্যারিস্টারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে মধুসূদন কলকাতায় ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন। ১৮৭০-এ তিনি প্র্যাকটিস ছেড়ে প্রিভি কাউন্সিলের অনুবাদ বিভাগে পরীক্ষকের পদ গ্রহণ করেন। ১৮৭১-এর সেপ্টেম্বরে তাঁর হেক্‌টর বধ কাব্য প্রকাশিত হয়। এ সময় হাইকোর্টের চাকরি ছেড়ে দেন মধুসুদন এবং ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চকোট রাজার আইন-উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন। আবার সেপ্টেম্বরে তিনি আইনব্যাবসায় ফিরে আসেন। সে বছরের ডিসেম্বরে বেঙ্গল থিয়েটারের জন্য অর্থের বিনিময়ে মায়াকানন রচনা করেন। একই সাথে লেখা শুরু করেন তাঁর অসমাপ্ত রচনা বিষ না ধনুর্গুণ

জীবনাবসান – ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে মধুসূদন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে বছরই ২৯ জুন রবিবার বিকেলে মধুসুদন প্রয়াত হন।

উৎস

মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যর প্রথম সর্গ ‘অভিষেক’ থেকে পাঠ্য অংশটি নির্বাচিত হয়েছে।

সারসংক্ষেপ

পাঠ্য কবিতার সূচনাতেই দেখা যায়, সোনার আসন ছেড়ে উঠে ইন্দ্রজিৎ ছদ্মবেশী লক্ষ্মীকে প্রণাম করে তাঁর সেখানে আসার কারণ জানতে চাইছেন। ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশে আসা দেবী লক্ষ্মী ইন্দ্রজিৎকে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ এবং লঙ্কার দুর্দশা বিষয়ে জানান। রাবণ যে প্রতিশোধের জন্য যুদ্ধসজ্জার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সে-কথাও বলেন। রাতের যুদ্ধেই তিনি যাঁকে হত্যা করেছেন, সেই রামচন্দ্র কীভাবে তাঁর প্রিয় অনুজকে বধ করল, তা ভেবে ইন্দ্রজিৎ অত্যন্ত অবাক হন। দেবী লক্ষ্মী ইন্দ্রজিৎকে রাক্ষসদের কুল ও মান রক্ষার জন্য তাড়াতাড়ি লঙ্কায় যেতে অনুরোধ করেন। ক্রুদ্ধ ইন্দ্রজিৎ আকস্মিক এই দুর্ঘটনার কথা শুনে নিজেকে তীব্র ধিক্কার দেন। শত্রুদল যখন লঙ্কাকে ঘিরে ধরেছে, তখন তিনি প্রমোদবিলাসে মত্ত-এটাই ছিল তাঁর আত্মধিক্কারের কারণ। শত্রুবধ করে সব অপবাদ ঘোচাতে এবং লঙ্কাকে সুরক্ষিত করতে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।

যুদ্ধের সাজে নিজেকে সাজিয়ে তোলেন ইন্দ্রজিৎ, এমন সময় স্ত্রী প্রমীলা এসে তাঁর গতি রোধ করে দাঁড়ান। ইন্দ্রজিৎকে প্রমীলা আবার যুদ্ধে যেতে দিতে চান না। আশঙ্কা প্রকাশ করেন ভবিষ্যৎ নিয়ে। প্রমীলাকে আশ্বস্ত করেন ইন্দ্রজিৎ। রামচন্দ্রকে হত্যা করে শীঘ্র ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইন্দ্রজিৎ রথে করে পৌঁছে যান রাবণের কাছে। রাবণও তখন পুত্রের হত্যার প্রতিশোধ নিতে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সৈন্যদল ইন্দ্রজিৎকে দেখে জয়ধ্বনি করে ওঠে। বাবার কাছে রামচন্দ্রকে বধ করার কিংবা তাঁকে বন্দি করে নিয়ে আসার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন ইন্দ্রজিৎ। কিন্তু রাবণ সেই মহাযুদ্ধে ইন্দ্রজিৎকে পাঠানোর বিষয়ে নিজের দ্বিধার কথা বলেন। ভাগ্যের বিপর্যয় এবং পুত্রের মৃত্যুর ফলে তিনি যে চিন্তিত, সে-কথাও বলেন। মৃত মানুষের পুনর্জীবন লাভ যে তাঁর বুদ্ধির অতীত এবং নিয়তিরই খেলা, তা-ও স্পষ্ট করতে চান। কিন্তু ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধে যাবেন বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। লঙ্কার কলঙ্ক দূর করাই তাঁর লক্ষ্য। কুম্ভকর্ণকে অকালে জাগিয়ে যুদ্ধে পাঠানোর ফল কী হয়েছিল তা মনে রেখেও শেষ অবধি রাবণ ইন্দ্রজিতের ইচ্ছাকে মর্যাদা দেন। শুধু তাঁকে ইষ্টদেব অগ্নির উপাসনা করে এবং নিকুন্তিলা যজ্ঞ শেষ করে পরদিন সকালে যুদ্ধে যেতে বলেন। এরপরে গঙ্গাজল দিয়ে তিনি সেনাপতি পদে ইন্দ্রজিতের অভিষেক সম্পূর্ণ করেন।

নামকরণ

কোনো সাহিত্যের অন্দরমহলে প্রবেশের চাবিকাঠি হল নামকরণ। নামকরণের মাধ্যমেই লেখক তাঁর বক্তব্যকে প্রাথমিক প্রতিষ্ঠা দেন।পাঠকদের ক্ষেত্রেও বিষয়বস্তু বুঝবার জন্য নামকরণ অত্যন্ত জরুরি ও সহায়ক বিষয়। সাহিত্যে নামকরণ বিভিন্ন দিক থেকে হয়ে থাকে। চরিত্রধর্মী, বিষয়ধর্মী অথবা ব্যঞ্জনধর্মী-যে-কোনো বিষয় থেকেই সাহিত্যের নামকরণ সম্ভব।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য-র প্রথম সর্গের নাম ‘অভিষেক’। পাঠ্য অংশটি প্রথম সর্গ থেকে গৃহীত হয়েছে, তাই প্রথম সর্গের নাম অনুসরণে এই কাব্যাংশের নাম হয়েছে অভিষেক।

লঙ্কার প্রমোদকাননে ইন্দ্রজিৎ ছিলেন বিলাসে মত্ত। এমন সময় ছদ্মবেশী লক্ষ্মী তাঁকে দিলেন বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ। ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদের আকস্মিকতায় বিমূঢ় হয়ে যান ইন্দ্রজিৎ। ক্রোধে, আত্মধিক্কারে নিজের পরে থাকা কুসুমদাম, কনক বলয়, কুণ্ডল ছুড়ে ফেলেন। তারপর মহাতেজে জ্বলে ওঠেন বীরশ্রেষ্ঠ ইন্দ্রজিৎ। প্রতিজ্ঞা করেন- ঘুচাব এ অপবাদ, বধি রিপুকুলে।যুদ্ধসাজে সজ্জিত হন তিনি, দেখতে পাওয়া তাঁর মেঘবর্ণ রথ, তার চাকায় বিজলির ছটা। আকাশে উড়ন্ত ইন্দ্রধনুর মতো রাক্ষস-পতাকা। অন্যদিকে, তখন পুত্রশোকে বিহ্বল লঙ্কারাজ রাবণও যুদ্ধোন্মত্ত। মেঘনাদ উপস্থিত হলেন সেখানে এবং পিতার কাছে রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি প্রার্থনা করলেন। কিন্তু রাবণ একমাত্র জীবিত পুত্রকে যুদ্ধে পাঠাতে দ্বিধাগ্রস্ত হন। মায়াবী রামের ছলনা তিনি জানেন। মরেও যে রামচন্দ্র বেঁচে উঠতে পারে তার সঙ্গে ইন্দ্রজিতের আসন্ন যুদ্ধ কতদূর ফলপ্রসূ হবে-এই চিন্তায় বিচলিত হয়ে পড়েন লঙ্কেশ্বর রাবণ। কিন্তু ইন্দ্রজিৎ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ- দেখিব এবার বীর বাঁচে কি ঔষধে। অবশেষে রাবণ পবিত্র গঙ্গাজল দিয়ে অভিষেক করিলা কুমারে। অর্থাৎ কাব্যের বিষয়বস্তু যে অভিমুখে পরিচালিত হয়েছে বা যে পরিণতি লাভ করেছে তা হল ইন্দ্রজিতের সেনাপতি-পদে অভিষেক। সুতরাং বিষয়বস্তুর নিরিখে নামকরণটি সার্থক ও যথাযথ।

ভিডিও টিউটোরিয়াল

কবিতার লাইন ধরে শব্দার্থ সহ বিস্তারিত আলোচনা

গুরুত্বপূর্ন্য তথ্য আলোচনা

প্রশ্ন উত্তর ভিডিও টিউটোরিয়াল

নিচের ভিডিওটিতে কোনো প্রকার সাউন্ড নেই, কেবলমাত্র প্রশ্ন উত্তর পর পর দেওয়া হয়েছে

বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

1. ‘কৌশিক-ধ্বজ’ শব্দের অর্থ-
[A] সাদা পতাকা     [B] হলুদ পতাকা     [C] সবুজ পতাকা    [D] রেশমি পতাকা
 
উত্তরঃ [D] রেশমি পতাকা

2. “দেখ অস্তাচলগামী দিননাথ এবে”—“দিননাথ’ হলেন-
[A] ইন্দ্রদেব     [B] বরুণদেব     [C] সূর্যদেব     [D] চন্দ্রদেব
 
উত্তরঃ [A] ইন্দ্রদেব

3. “যথাবিধ লয়ে গগােদক।” গঙ্গোদক’ শব্দের অর্থ-
[A] যমুনানদীর জল     [B] পদ্মানদীর জল     [C] গঙ্গাজল     [D] গােদাবরীর জল
 
উত্তরঃ [D] গােদাবরীর জল

4. “রুষিবেন দেব অগ্নি।” অগ্নিদেব রুষ্ট হবেন। যদি
[A] সেনাপতি হিসেবে তাকে বরণ করার আগেই ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধে নেমে পড়ে।    
[B] অসময়ে ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করে।
[C] রামচন্দ্রকে ভয় পেয়ে বারণ যুদ্ধে যান, আর মেঘনাদ নিশ্চেষ্ট থাকেন।    
[D] ইন্দ্রজিৎ নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সম্পূর্ণ না করে যুদ্ধে যায়।
 
উত্তরঃ [C] রামচন্দ্রকে ভয় পেয়ে বারণ যুদ্ধে যান, আর মেঘনাদ নিশ্চেষ্ট থাকেন।

5, “হায় দেহ তার, দেখ, সিন্ধু-তীরে ভূপতিত,”—এখানে কার কথা বলা হয়েছে?
| [A] বীরবাহু     [B] কপূরদল     [C] তুরাঙ্গম     [D] কুম্ভকর্ণ
 
উত্তরঃ [D] কুম্ভকর্ণ

6. “ছিড়িলা কুসুমদাম রােষে মহাবলী…”—কাকে ‘মহাবলী’ বলে সম্বােধন করা
[A] মেঘনাদকে     [B] রাবণকে     [C] লক্ষ্মণকে     [D] অঙ্গদকে
 
উত্তরঃ [A] মেঘনাদকে

7. “ঘুচাব এ অপবাদ, বধি –।” [শূন্যস্থান পূরণ করাে ]
[A] বানরকুলে     [B] রিপুকুলে     [C] রাক্ষসকুলে     [D] অসুরকুলে
 
উত্তরঃ [B] রিপুকুলে

8. ‘অভিষেক’ কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘মেঘনাদ বধ কাব্য-র কোন্ সর্গ থেকে পাঠাংশে সংযােজিত হয়েছে?
[A] প্রথম সর্গ     [B] তৃতীয় সর্গ     [C] চতুর্থ সর্গ     [D] পঞ্চম সর্গ
 
উত্তরঃ [A] প্রথম সর্গ

9. মেঘনাদবধ কাব্যের প্রথম সর্গের নাম-
[A] প্রেতপুরী    [B] অভিষেক     [C] অস্ত্রলাভ     [D] লক্ষ্মণবধ
 
উত্তরঃ [B] অভিষেক

10. ‘কিরীটী’ যাঁর নাম তিনি হলেন
[A] যুধীষ্ঠির     [B] ইন্দ্রজিৎ     [C] অর্জুন     [D] রামচন্দ্র
 
উত্তরঃ [C] অর্জুন

11. ‘মাতঙ্গ’ কথার অর্থ-
[A] রাক্ষস     [B] ঘােড়া     [C] পতঙ্গ     [D] হাতি
 
উত্তরঃ [D] হাতি

12. মেঘবাহন কে?
[A] ইন্দ্র     [B] ইন্দ্রজিৎ   [C] মেঘনাদ     [D] রাবণ
 
উত্তরঃ [A] ইন্দ্র

13. ‘অভিষেক করিলা কুমারে।”—কার অভিষেকের কথা বলা হয়েছে?
[A] রামের     [B] ইন্দ্রজিতের     [C] অর্জুনের     [D] অঙ্গাদের
 
উত্তরঃ [B] ইন্দ্রজিতের

14. “আগে পূজ ইষ্টদেবে”—কোথায় ইষ্টদেবের পুজোর কথা বলা হয়েছে?
[A] দেবমন্দিরে     [B] যুদ্ধক্ষেত্রে   [C] নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে     [D] পর্বত শিখরে
 
উত্তরঃ [C] নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

ভাগ ০১

  1. ‘ মেঘনাদবধ কাব্য ‘ – এর প্রথম সর্গটির নাম লেখো । কাব্যের মোট ক – টি সর্গ ? 

Ans: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘ মেঘনাদবধ কাব্য ‘ – এর প্রথম সর্গের নাম ‘ অভিষেক । এ কাব্যের মোট সর্গ সংখ্যা ন – টি । 

  1. ‘ অভিষেক ‘ রচনাংশটিতে কার অভিষেকের কথা বলা হয়েছে ? 

Ans: মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘ অভিষেক ‘ রচনাংশটিতে রক্ষরাজ রাবণের পুত্র ইন্দ্রজিতের অভিষেকের কথা বলা হয়েছে ।

  1. ইন্দ্ৰজিৎ কে ? 

Ans: রাবণ ও মন্দোদরীর সন্তান মেঘনাদ দেবরাজ ইন্দ্রকে জয় করেছিলেন বলে বীরশ্রেষ্ঠ ‘ ইন্দ্রজিৎ ‘ নাম গ্রহণ করেছিলেন । 

  1. কাকে বীরেন্দ্রকেশরী বলা হয়েছে ? 

Ans: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘ অভিষেক ’ নামাঙ্কিত অংশে বীরেন্দ্রকেশরী বলা হয়েছে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎকে । বীরেন্দ্রকেশরীর অর্থ বীরসিংহ । 

  1. ‘ প্রণমিয়া ধাত্রীর চরণে , / কহিলা , – ধাত্রী আসলে কে এবং তাকে কী বলা হয়েছে ? 

Ans: মধুসূদনের অভিষেক ‘ কাব্যাংশে প্রভাষার ছদ্মবেশিনী ধাত্রী আসলে দেবী লক্ষ্মী । প্রমোদোদ্যানে মেঘনাদ তাঁকে দেখে সেখানে আগমনের কারণ ও লঙ্কার কুশল জিজ্ঞাসা করেছিলেন । 

  1. ইন্দ্রজিৎ ধাত্রীর চরণে প্রণাম করে তাকে কী বলে সম্বোধন করেন ? 

Ans: ‘ অভিষেক ’ নামাঙ্কিত রচনাংশে ধাত্রী ছদ্মবেশধারী লক্ষ্মীর চরণে প্রণাম করে তাকে ‘ মাতঃ ‘ বলে সম্বোধন করেন । 

  1. ‘ অম্বুরাশি – সুতা কার ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন ?

Ans: মধুসুদনের ‘ অভিষেক ‘ কাব্যাংশে ‘ অম্বুরাশি – সুতা ‘ অর্থাৎ লক্ষ্মী , ইন্দ্রজিতের ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রমোদকাননে এসে ইন্দ্রজিৎকে বীরবাহুর মৃত্যু ও রাবণের যুদ্ধযাত্রার সংবাদ দিয়েছিলেন ।

  1. বীরবাহু কে ? 

Ans: লঙ্কেশ্বর রাবণ ও গন্ধবর্তনয়া চিত্রাঙ্গদার পুত্র হলেন বীরবাহু । বাল্মীকির রামায়ণে বীরবাহুর উল্লেখ না থাকলেও কৃত্তিবাসী রামায়ণে তাঁর উল্লেখ পাওয়া যায় । 

  1. ‘ মহাশোকী রাক্ষসাধিপতি কাকে বলা হয়েছে ? 

Ans: পাঠ্য ‘ অভিষেক ‘ কবিতায় ‘ মহাশোকী রাক্ষসাধিপতি ‘ বলতে লঙ্কার অধিপতি রক্ষরাজ রাবণকে বলা হয়েছে । পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুতে তিনি মহাশোকী । 

  1. ‘ হায় । পুত্র , কি আর কহিব কনক – লঙ্কার দশা । বক্তা ‘ কনক – লঙ্কার দশা ‘ বলতে কী বুঝিয়েছেন ? 

Ans: বক্তা প্রভাষার ছদ্মবেশী ‘ অম্বুরাশি – সুতা ‘ অর্থাৎ লক্ষ্মীদেবী ‘ কনক – লঙ্কার দশা ‘ বলতে বীরবাহুর মৃত্যু এবং সেই কারণে রাবণের সসন্যৈ যুদ্ধযাত্রার কথা বলেছেন ।

  1. এবং তার বিস্ময়ের কারণ কী ? জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া ; – মহাবাহু কে ?

Ans: ‘ মহাবাহু ‘ হলেন ইন্দ্রজিৎ । রামচন্দ্রকে রাত্রিকালীন যুদ্ধে তিরের আঘাতে খণ্ড খণ্ড করে কেটে ফেলা সত্ত্বেও , তাঁরই হাতে বীরবাহু কীভাবে মারা যেতে পারে এ কথা ভেবে তিনি বিস্মিত হয়েছেন । 

  1. ‘ তবে , এ বারতা , এ অদ্ভুত বারতা , বার্তাটি কী এবং তা অদ্ভুত কেন ? 

Ans: বার্তাটি হল রাঘবের হাতে বীরবাহুর মৃত্যু । বার্তাটি অদ্ভুত কারণ ইন্দ্রজিতের তিরের আঘাতে যে – রাঘবের মৃত্যু ঘটেছে , সে কী করে বীরবাহুর হত্যাকারী হয় ।

  1. ভগবতীর অপর নাম কী ?

Ans: মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘ অভিষেক ’ নামাঙ্কিত কবিতা থেকে আমরা জানতে পারি , ভগবতীর অপর নাম লক্ষ্মী । ‘ 

  1. রক্ষ রক্ষঃকুলমান , ‘ — বক্তা কে এবং কাকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছেন ?

Ans: বক্তা হলেন প্রভাষার রূপ ধারণকারিণী দেবী লক্ষ্মী । তিনি মায়াবী রামচন্দ্রের হাত থেকে রক্ষঃকুলকে রক্ষার জন্য ইন্দ্রজিৎকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছেন ।

  1. ইন্দ্রজিতের প্রিয়ানুজকে কে বধ করেছেন ?

Ans: ‘ অভিষেক ’ কবিতা অনুসারে , ইন্দ্রজিতের প্রিয় বৈমাত্রেয় ভাই বীরবাহুকে , রামচন্দ্র সম্মুখসমরে বধ করেছিলেন ।

  1. রঘুবরকে ইন্দ্রজিৎ কখন সংহার করেছিলেন ?

Ans: ‘ অভিষেক ’ কবিতানুসারে , লক্ষ্মীর কাছে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর বিস্মিত ইন্দ্রজিৎ তাঁকে জানিয়েছিলেন যে , রাত্রিকালীন যুদ্ধে তিনি রাঘবকে সংহার করেছিলেন । 

  1. ইন্দিরা সুন্দরীকে কী কী বিশেষণে ভূষিত করা হয়েছে ? 

Ans: পাঠ্য রচনাংশে কবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত ‘ ইন্দিরা সুন্দরী ’ তথা লক্ষ্মীকে ‘ রত্নাকর ’ ও ‘ রত্নোত্তমা ‘ বিশেষণে ভূষিত করেছেন । 

  1. ইন্দিরা সুন্দরীর মুখে প্রিয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে মেঘনাদের রোষের বহিঃপ্রকাশ কীভাবে ঘটেছিল ? 

Ans: প্রমোদোদ্যানে ছদ্মবেশী লক্ষ্মীর মুখে প্রিয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে মেঘনাদ ফুলমালা ছিঁড়ে , সোনার আভরণ ছুড়ে ফেলে নিজেকে ধিক্কার জানায় । 

  1. ‘ হা ধিক্ মোরে ! -বস্তুা কেন নিজেকে ধিক্কার দিয়েছিলেন ?

Ans: স্বর্ণলঙ্কা যখন শত্রুপক্ষের ঘেরাটোপে , প্রিয় ভাই যখন নিহত , পিতা যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তখন প্রমোদকাননে মেয়েদের মাঝে বিলাসিতা শোভন নয় — তাই এই আত্মধিকার । 

  1. ‘ ঘুচাব ও অপবাদ , বধি রিপুকুলে / অপবাদটি কী ? 

Ans: রামচন্দ্রের হাতে লঙ্কার আক্রান্ত হওয়া ও প্রিয়ানুজ বীরবাহুর মৃত্যুকালে মেয়েদের মাঝে প্রমোদোদ্যানে সময় কাটানো এবং কর্তব্যের গাফিলতিকেই ইন্দ্ৰজিৎ অপবাদ বলেছেন ।

  1. ‘ সাজিলা রথীন্দ্রষভ বীর – আভরণে ‘ — ‘ রথীন্দ্রর্যভ ’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে এবং তিনি কোন্ কোন্ বীরের মতো আভরণে ভূষিত হয়েছেন ? 

Ans: ‘ রথীন্দ্রষভ ‘ বা শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা মেঘনাদ তারকাসুর বধ কালে কার্তিকের মতো ও বিরাটরাজের গোধন রক্ষার্থে বৃহন্নলারূপী কিরীটীর মতো বীর আভরণে ভূষিত হয়েছিলেন । 

  1. মায়ারী মানব বলতে কাকে চিহ্নিত করা হয়েছে ?

Ans: ‘ অভিষেক ‘ নামাঙ্কিত পাঠ্য রচনাংশে মায়াবী মানব বলতে লক্ষ্মী , রঘুবর রামচন্দ্রকে চিহ্নিত করেছেন । 

  1. ‘ তব শরে মরিয়া বাঁচিল ।’— কার শর প্রয়োগে কে মরে বেঁচে উঠেছিলেন ?

Ans: আলোচ্য ‘ অভিষেক ’ কবিতায় রক্ষকুলবীর ইন্দ্রজিতের তিরের আঘাতে রাঘব মরেও বেঁচে উঠেছিলেন ।

  1. ‘ যাও তুমি ত্বরা করি ; ‘ – কে কাকে ‘ ত্বরা করি ’ যাত্রা করতে বলেছেন ? 

Ans: ‘ অভিষেক ‘ কবিতানুসারে , স্বর্ণলঙ্কার বর্তমান অবস্থা নিরীক্ষণ করে লক্ষ্মী ত্বরা অর্থাৎ শীঘ্র ইন্দ্রজিৎকে সেখানে যাত্রা করতে বলেছেন ।

  1. কালসমরে শব্দার্থ বুঝিয়ে দাও ।

Ans: পাঠ্য ‘ অভিষেক ‘ কবিতায় , ‘ কালসমরে ‘ বলতে রাবণের সঙ্গে রামচন্দ্রের সম্ভাব্য ঘোরতর যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে । 

  1. ইন্দ্ৰজিৎকে ‘ রক্ষঃ – চূড়ামণি ‘ বলার কারণ কী ? 

Ans: ‘ রক্ষঃ – চূড়ামণি ‘ শব্দের অর্থ রাক্ষসদের মধ্যে কুলশ্রেষ্ঠ বা শিরোমণি । প্রবল শক্তির অধিকারী ইন্দ্রজিৎ রাক্ষসদের মধ্যে বীর যোদ্ধা , তাই তাকে ‘ রক্ষঃ – চূড়ামণি ‘ বলা হয়েছে । 

  1. মহাবলী মেঘনাদের কুসুমদাম ছেঁড়ার কারণ কী ?  

Ans: প্রভাষা ছদ্মবেশধারী লক্ষ্মীর কাছে ইন্দ্রজিৎ স্বর্ণলঙ্কার দুর্দশার কথা এবং রাঘবকে সংহার করা সত্ত্বেও তাঁর বেঁচে থাকার কথা জানতে পেরে মেঘনাদ প্রচণ্ড রোয়ে কুসুমদাম ছিঁড়ে ফেললেন । 

  1. ইন্দ্রজিতের কুসুমদাম ছিঁড়ে ফেলা ও অন্যান্য জিনিস ছুড়ে ফেলাকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ?

Ans: ‘ অভিষেক ‘ কবিতায় ইন্দ্রজিতের কুসুমদাম ছিঁড়ে ফেলা ও অন্যান্য জিনিস ছুড়ে ফেলাকে , অশোক গাছের তলায় অশোক ফুলের আড্ডা বিচ্ছুরণের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে । 

  1. মহাবলী – মেঘনাদ প্রচণ্ড রোয়ে কী কী করলেন ?  

Ans: ‘ অভিষেক ‘ কবিতা অনুসারে , মহাবলী মেঘনাদ প্রচণ্ড রোষে কুসুমদাম ছিঁড়ে ফেলে , সোনার আভরণ ছুড়ে ফেলে সকল সাজ নষ্ট করলেন । 

  1. প্রচণ্ড রোষে মেঘনাদ নিজেকে কী বলে ধিক্কার দিলেন ?  

Ans: ‘ অভিষেক ‘ কবিতানুসারে , যখন শত্রুরা স্বর্ণলঙ্কা গ্রাস করতে উদ্যত , তখন ইন্দ্ৰজিৎ নারীদের মাঝে প্রমোদরত — এই ভাবনা প্রকাশ করে । তিনি নিজেকে ধিক্কার দিলেন । 

  1. ‘ বৈরিদল বেড়ে / স্বর্ণলঙ্কা , – ‘ বৈরিদল ‘ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে ? ‘ বেড়ে স্বর্ণলঙ্কা ’ বলতে কী বোঝ ?

Ans:  এখানে ‘ বৈরিদল ‘ অর্থাৎ শত্রুপক্ষ বলতে রামচন্দ্র ও তাঁর সৈন্যদের বোঝানো হয়েছে । ‘ বেড়ে স্বর্ণলঙ্কা ‘ বলতে বোঝানো হয়েছে । স্বর্ণলঙ্কাকে ঘিরে ফেলা হয়েছে । 

  1. ‘ কাঁপিলা লঙ্কা , কাঁপিলা জলধি ।’— ‘ লঙ্কা ’ ও ‘ জলধি কেঁপে ওঠার কারণ কী ? 

Ans: ‘ অভিষেক ’ কবিতা অনুসারে প্রভাষার মুখে লঙ্কার দুঃসংবাদ শুনে প্রমোদ উদ্যান থেকে যুদ্ধ যাত্রাকালে রথে চেপে আকাশপথে ধাবমান মেঘনাদ ধনুকের ছিলায় যে – টংকার দিয়েছিলেন , তাতে এমন অবস্থা হয়েছিল । 

  1. ‘ আন রথ ত্বরা করি ; ’ – ত্বরা করে রথ এনে ইন্দ্ৰজিৎ কী করবেন ? 

Ans: পাঠ্য ‘ অভিষেক ‘ কবিতা অনুসারে , শীঘ্র রথ নিয়ে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎ প্রমোদকানন ত্যাগ করে স্বর্ণলঙ্কার অভিমুখে যাত্রা করবেন । 

  1. হৈমবতীসুত কী করেছিলেন ? 

Ans: দেবলোকে ত্রাস সঞ্চারকারী মহাবলশালী তারকাসুরকে বধ করে ‘ হৈমবতীসূত ’ অর্থাৎ কার্তিকেয় স্বর্গরাজ্য নিষ্কণ্টক করেছিলেন । 

  1. ‘ বৃহন্নলারূপী কিরীটি কে ? 

Ans: ‘ বৃহন্নলারূপী কিরীটি ‘ হলেন বৃহন্নলার ছদ্মবেশধারী তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন । 

  1. গোধন উদ্ধার করতে কিরীটি কাকে সঙ্গে নিয়েছিলেন ? 

Ans: বিরাট রাজাকে বিপন্মুক্ত করতে কিরীটি তথা অর্জুন গোধন উদ্ধারের জন্য বিরাট পুত্রকে সঙ্গে নিয়েছিলেন ।  

  1. অর্জুনকে কিরীটি বলার কারণ কী ? 

Ans: পাণ্ডবশ্রেষ্ঠ অর্জুন দেবরাজ ইন্দ্রের দেওয়া কিরীট বা মুকুট মাথায় পরেছিলেন বলে , অর্জুনকে কিরীটি বলা হয় । 

  1. ‘ শমীবৃক্ষমূলে ‘ কথাটির মধ্যে কোন্ কাহিনির ইঙ্গিত আছে ? 

Ans: ‘ শমীবৃক্ষমূলে ‘ কথাটির মধ্যে বৃহন্নলারূপী অর্জুনের ছদ্মবেশ ত্যাগ করে যুদ্ধসজ্জার প্রসঙ্গের ইঙ্গিত আছে । 

  1. স্বর্ণলঙ্কায় যাওয়ার সময় ইন্দ্রজিতের রথসজ্জার কথা লেখো । 

Ans: ‘ অভিষেক ’ কবিতা অনুসারে স্বর্ণলঙ্কায় যাওয়ার সময় ইন্দ্রজিতের অত্যন্ত দ্রুতবেগসম্পন্ন মেঘবর্ণ রথটির চাকায় ছিল বিজলির ছটা , পতাকা ছিল রংধনুর মতো সাতটি বর্ণে রঞ্জিত । 

  1. ইন্দ্ৰজিৎ যখন স্বর্ণলঙ্কায় যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন তখন কে তার পথ রোধ করে দাঁড়ালেন ? 

Ans: ‘ অভিষেক ‘ কবিতানুসারে ইন্দ্রজিৎ যখন স্বর্ণলঙ্কায় যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন তখন ইন্দ্রজিতের পত্নী প্রমীলা তাঁর পথ রোধ করে দাঁড়ালেন ।

ভাগ ০২

১।‘অভিষেক’ কবিতাটি কোন্ কাব্যগ্রন্থের কোন অংশ থেকে গৃহীত ?

উত্তর –  ‘অভিষেক’ কাব্যাংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘মেঘনাদবধ কাব্য -এর প্রথম সর্গ থেকে গৃহীত।

২।কণক আসন ত্যজি, বীরেন্দ্রকেশরী / ইন্দ্রজিৎ’-ইন্দ্রজিৎ কণক আসন ত্যাগ করলেন কেন ? 

উত্তর – ইন্দ্রজিৎ তার সামনে উপস্থিত ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশিনী শ্রীলক্ষ্মীকে দেখে সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করে কণক আসন ত্যাগ করলেন।

৩। বীরবাহুর মৃত্যু সংবাদ কে কাকে দিয়েছিল ? 

উত্তর – বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ প্রভাষা রাক্ষসীর ছদ্মবেশে প্রমােদ উদ্যানে আসা দেশ লক্ষ্মী মেঘনাদকে দিয়েছিল।

৪।‘রত্নাকর রতল্লাত্তমা’ কার বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ?

উত্তর –  রত্নাকর রত্নোত্তমা স্বয়ং দেবী ইন্দিরা বা লক্ষ্মীর বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

৫।‘যাও তুমি ত্বরা করি ;-কাকে কোথায় যেতে বলা হয়েছে ?

উত্তর – মেঘনাদকে রাক্ষসকুলের মানরক্ষার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বলা হয়েছে। .

৬।‘সাজিছে রাবণরাজা’ রাবণের এমন আচরণের কারণ কী ? 

উত্তর – বীরবাহুর মৃত্যুর খবরে প্রতিশােধ নেওয়ার বাসনায় রাবণরাজা রণসজ্জায় সেজে উঠেছেন। 

৭।‘কিন্তু অনুমতি দেহ;’— কোন্ অনুমতি প্রার্থণা করেছেন ?

উত্তর – সমূলে রাঘবকে নির্মূল করার জন্য মেঘনাদ অনুমতি প্রার্থণা করেছেন। .

৮। মেঘনাদ রাঘবদের ক’বার হারিয়েছিলেন ?

উত্তর – মেঘনাদ রাঘবকে দুবার যুদ্ধে হারিয়েছেন। 

৯। ‘কুম্ভকর্ণ বলী’–কুম্ভকর্ণ কে ছিল ? 

উত্তর – কুম্ভকর্ণ ছিলেন বিশ্বশ্রবা মুণি ও নিকষার মধ্যমপুত্র, দশানন রাবণের ভ্রাতা। 

১০। কোন্ সময়ে রাঘবদের মুখােমুখি হবার কথা বলেছেন রাবণ ? 

উত্তর –  রাঘবের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য রাবণ তার পুত্র মেঘনাদকে প্রভাতে মুখােমুখি হবার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ভাগ ০৩

1. “তারে ডরাও আপনি,রাজেন্দ্র ?”—এই পঙক্তিটিতে কাকে ভয় পাওয়ার কথা বক্তা বলেছেন?

উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশ রাঘব শ্রীরামচন্দ্রকে ভয় পাওয়ার কথা বক্তা বলতে চেয়েছেন।

2. রথীন্দ্রভ’-কথাটির অর্থ কী?

উত্তরঃ ‘রথীন্দ্রভ’ কথাটির অর্থ শ্রেষ্ঠ রথী। যিনি ঋষভ বা বৃষ সদৃশ শক্তি বা বলের অধিকারী। মহাপরাক্রমশালী ইন্দ্রজিৎকে রবীন্দ্রভ বলা হয়েছে।

3. “হাসিবে মেঘবাহন”–‘মেঘবাহন কে?

উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশে ‘মেঘবাহন’ হলেন যিনি মেঘকে বাহন করে ঘুরে বেড়ান অর্থাৎ ‘মেঘবাহন’ হলেন দেবরাজ ইন্দ্র।

4. ‘অভিষেক’ কী?

উত্তরঃ মধুসুদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশে ‘অভিষেক’ কথাটির অর্থ হল রাজসিংহাসনে আরােহণকালীন স্নানাদি অনুষ্ঠান। পাঠ্য পদ্যাংশে রাবণরাজ পুত্র মেঘনাদকে সেনাপতি পদে অভিষিক্ত করবার উদ্যোগের প্রসঙ্গে ‘অভিষেক’ শব্দটি প্রযুক্ত হয়েছে।

5. ‘অভিষেক’ কাব্যাংশটি কোন্ কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত?

উত্তরঃ ‘অভিষেক’ কাব্যাংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘মেঘনাধবধ কাব্য’ কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত।

6. “মহাশােকী রাক্ষসাধিপতি”-রাক্ষসাধিপতি কে?

উত্তরঃ রাক্ষসাধিপতি হলেন লঙ্কার রাজা রাবণ।

7. “সিন্ধু-তীরে/ভূপতিত”—এখানে কীসের কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে গৃহীত প্রশ্নোপ্ত উদ্ধৃতাংশে সিন্ধুতীরে কুম্ভকর্ণের দেহ ভূপতিত থাকার কথা বলা হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

ভাগ ০১

  1. ‘ কনক – আসন ত্যজি ‘ — কে , কেন কনক – আসন ত্যাগ কনক- আসন ত্যাগ করেছিল ? 

Ans: আমাদের পাঠ্য মধুসূদনের ‘ অভিষেক ’ নামক কাব্যাংশে রাবণ ও মন্দোদরীর বীরপুত্র ইন্দ্রজিতের কনক – আসন ত্যাগের কথা বলা হয়েছে । । ইন্দ্ৰজিৎ প্রমোদ উদ্যানে স্ত্রী প্রমীলা ও তাঁর সখীদের নিয়ে প্রমোদবিহারে ব্যস্ত ছিলেন । এমন সময় ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশে দেবী লক্ষ্মী সেখানে উপস্থিত হন । ধাত্রী প্রভাষার এই অপ্রত্যাশিত আগমনের কারণ জানার জন্য ও তার প্রতি খাজ্ঞাপনের জন্য ইন্দ্রজিৎ কনক – আসন ত্যাগ করেছিলেন । মধুসুদনের ইন্দ্রজিৎ এখানে বিয়ে , শ্রদ্ধা ও সৌজন্যবোধের প্রতীকরূপে প্রতিভাত ।

  1. ‘ শিরঃ চুম্বি , ছদ্মবেশী অম্বুরাশি – সুতা / উত্তরিলা – ‘ অম্বুরাশি – সুতা ’ কে ? তাঁর উত্তর কী ছিল ? 

Ans: মধুসূদনের অভিষেক ’ নামক পাঠ্য কাব্যাংশে ‘ অম্বুরাশি – সুতা ’ অম্বুরাশি – সুতা শব্দটি পাই । ইনি আসলে দেবী লক্ষ্মী । দেবতা ও অসুরের সমুদ্রমন্থনকালে জল থেকে উত্থিত বলে তাঁর এমন নাম । 

  দেবী লক্ষ্মী ধাত্রী তাঁকে আসার কারণ প্রভাষার রূপে প্রমোদ উদ্যানে হাজির হলে ইন্দ্রজিৎ ও লঙ্কার কুশল জিজ্ঞাসা করেন । অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে তিনি ( দেবী লক্ষ্মী ) রামের সঙ্গে ভীষণ যুদ্ধে ইন্দ্রজিতের প্রিয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ ও বক্তার উত্তর পুত্রশোকে শোকগ্রস্ত পিতা রাবণের যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতির কথা জানান ।

  1. ‘ মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া ; ’ — ‘ মহাবাহু ’ কে ? তাঁর প্রশ্ন বিস্ময়ের কারণ কী ? 

Ans: মহাবাহুর পরিচয় মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ( মেঘনাদবধ কাব্য : প্রথম সর্গ ) পাঠ্য ‘ অভিষেক ‘ রচনাংশে ‘ মহাবাহু ’ হলেন রক্ষকুলমণি বীরেন্দ্রকেশরী ইন্দ্রজিৎ মেঘনাদ । কবি এখানে ইন্দ্রজিতের প্রবল শক্তি ও পরাক্রমের জন্য তাঁকে ‘ মহাবাহু ‘ বিশেষণে ভূষিত করেন । ( ইন্দ্ৰজিৎ যখন ধাত্রীরূপী দেবী লক্ষ্মীর কাছে রামচন্দ্রের সঙ্গে সম্মুখসমরে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ জানলেন , তখন তিনি অত্যন্ত বিস্ময় প্রকাশ করলেন । কারণ তিনি নিজে রাত্রিকালীন যুদ্ধে রামকে সংহার করেছেন । মৃত ব্যক্তি কীভাবে বীরবাহুকে সংহার করবে এ কথা ভেবেই তিনি বিস্মিত ।

  1. ‘ এ অদ্ভুত বারতা ; —কোন্ বার্তা , কেন অদ্ভুত ? 

Ans: উদ্ধৃত অংশটি মধুসুদন দত্ত রচিত ( মেঘনাদবধ কাব্য : প্রথম সর্গ ) ‘ অভিষেক ‘ নামক পাঠ্য কবিতা থেকে গৃহীত । + কোন বার্তা এবং কেন অদ্ভুত , লক্ষ্মীদেবী ইন্দ্রজিতের ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশে এসে স্বর্ণলঙ্কার সকল সংবাদ তাঁকে জানালেন । সম্মুখসমরে রামের সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধে নিহত হয়েছেন ইন্দ্রজিতের প্রিয় ভাই বীরবাহু । কিন্তু ইন্দ্ৰজিৎ এ সংবাদে অত্যন্ত বিস্ময়াপন্ন হলেন । কারণ তিনি নিজের হাতে রাত্রিকালীন যুদ্ধে রামকে হত্যা করেছেন । আর সেই মৃত রাঘব কিনা তাঁর ভাই – এর হত্যাকারী — এই বার্তাই তাঁর কাছে অদ্ভুত লেগেছে । 

  1. ‘ সীতাপতি ’ কে ? তাঁকে ‘ মায়াবী মানব ‘ বলা হয়েছে । কেন ? 

Ans: পাঠ্য ‘ অভিষেক ’ কাব্যাংশে উক্ত নামের উল্লেখ পাওয়া যায় । সীতাপতি অযোধ্যার রাজা দশরথের জ্যেষ্ঠপুত্র ছিলেন রাম । এই রামচন্দ্রের স্ত্রীর নাম সীতা । এই কারণে রামচন্দ্রকে ‘ সীতাপতি ‘ বলা হয়েছে । ‘ মায়াবী মানব ’ বলার কারণ সীতাপতি রামচন্দ্রকে লক্ষ্মীদেবী ‘ মায়াবী মানব ‘ বলেছেন । কারণ মায়াবী না – হলে প্রবল শক্তিশালী ইন্দ্রজিতের তিরে রামের মৃত্যু হলেও , তিনি কীভাবে পুনরায় দৈবপ্রভাবে পুনর্জীবন লাভ করেন । এই কারণে কাব্যাংশে রামকে ‘ মায়াবী মানব ’ রূপে উপস্থাপনা করা হয়েছে ।

  1. ‘ রক্ষ রক্ষঃকুল মান , এ কালসমরে , রক্ষঃ – চূড়ামণি –বক্তা ‘ রক্ষঃ – চূড়ামণি ‘ বলে কাকে সম্বোধন করেছেন ? ‘ কালসমর বলতে কী বোঝ ? 

Ans: বক্তা ইন্দিরা সুন্দরী অর্থাৎ লক্ষ্মী দেবী ‘ রক্ষঃ – চূড়ামণি ‘ বলে ‘ রক্ষাঃ – চূড়ামণি ’ ইন্দ্রজিৎকে সম্বোধন করেছেন । কালসমর ‘ কালসমর ‘ বলতে বোঝায় কাল রূপ সমর বা ভয়ংকর যুদ্ধ । এক্ষেত্রে রামচন্দ্রের সঙ্গে রাক্ষসদের ভয়ংকর প্রাণঘাতী যুদ্ধকে বোঝানো হয়েছে । ছদ্মবেশী দেবী লক্ষ্মী প্রমোদকাননে ইন্দ্রজিতের সামনে যখন হতাশার সুরে বীরবাহুর মৃত্যু , রাবণের যুদ্ধযাত্রার কথা বলছিলেন তখন তা তাঁর বিশ্বাস হচ্ছিল না । দেবী মায়াবী মানব রামচন্দ্রের জেগে ওঠা ও তাঁর দৈবী শক্তির পরিচয় দিতে শব্দটি ব্যবহার করেছেন । 

  1. ইন্দিরা সুন্দরীর বার্তা পেয়ে ইন্দ্ৰজিৎ কী কী করেন ? 

Ans: ইন্দিরা সুন্দরীর বার্তার প্রভাব উত্তর মাইকেল মধুসুদন রচিত ‘ মেঘনাদবধ কাব্য ‘ – এর ‘ অভিষেক ‘ নামাঙ্কিত পাঠ্য কাব্যাংশে ইন্দিরা সুন্দরীর বার্তা পেয়ে ইন্দ্রজিৎ প্রচণ্ড কোধে কুসুমদাম অর্থাৎ ফুলমালা ছুড়ে ফেললেন এবং সোনার অলংকার দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন । অশোক ফুল গাছের তলায় যেমন আভাময় হয়ে পড়ে থাকে , ঠিক তেমনই ইন্দ্রজিতের সেইসব সোনার অলংকার সোনা शি আভা ছড়িয়ে মাটিতে পড়ে রইল ।

  1. ধিক মোরে — কে , কেন একথা বলেছেন ?

Ans: উদ্ধৃত অংশটির বক্তা মধুসুদনের ‘ মেঘনাদবধ কাবা ’ থেকে গৃহীত ‘ অভিষেক ‘ নামক কাব্যাংশের অন্যতম চরিত্র ইন্দ্রজিতের । মেঘনাদ প্রমোদকাননে বিলাসব্যসনে মত্ত থাকার সময় কে , কেন প্রশ্নোত প্রভাষার ছদ্মবেশে লক্ষ্মী এসে ইন্দ্রজিৎকে তার প্রিয় ভ্রাতা বীরবাহুর মৃত্যু এবং শোকস্তব্ধ রাবণের শত্ৰু রাঘব নিধনে ব্রতী হওয়ার কথা জানায় । লঙ্কার এই দুর্দিনে ইন্দ্রজিৎ প্রমোদকাননে মেয়েদের মাঝে থেকে রাজধর্ম পালনে ব্যর্থ হয়েছেন বলে তাঁর এই আত্মধিক্কার ।

  1. ম ঘুচাব ও অপবাদ ’ — বক্তা কোন্ অপবাদ , কীভাবে ঘোচাতে চেয়েছেন ?

Ans: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি ‘ অভিষেক ’ নামাঙ্কিত কাব্যাংশ থেকে গৃহীত হয়েছে । বক্তা ইন্দ্ৰজিৎ প্রভাষা রাক্ষসীর বেশধারিণী লক্ষ্মীদেবীর মুখে ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ এবং রাবণের যুদ্ধপ্রস্তুতির কথা শুনে দ্রুত প্রমোদ উদ্যান ত্যাগ করে লঙ্কায় যাত্রা করতে উদ্যত হলেন । যখন তিনি বুঝলেন স্বর্ণলঙ্কার ঘোরতর দুর্দিনে তিনি নারীদের মাঝে বিলাসব্যসনে মত্ত , তখন নিজেকে তিনি ধিক্কার জানালেন ও শত্রুকুলের নিধন করবার প্রতিজ্ঞা করে সকল অপবাদ ঘোচাবেন বলে দৃঢ় সংকল্প নিলেন । 

  1. বৃহন্নলারূপী কিরীটি কে ? তাঁর কোন্ কীর্তির কথা পাঠে উল্লিখিত হয়েছে ?

Ans:  মাইকেল মধুসুদন দত্তের ‘ অভিষেক ‘ কাব্যাংশে বৃহন্নলারূপী কিরীটি হলেন তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন । অজ্ঞাতবাসকালে , বিরাট রাজার কন্যা উত্তরার নৃত্য – গীত শিক্ষিকারূপে নিযুক্ত অর্জুন বৃহন্নলাবেশ ধারণ করেন । → অর্জুন যখন বৃহন্নলার ছদ্মবেশে বিরাট রাজার প্রাসাদে ছিলেন , সেসময় দুর্যোধন বিরাট রাজাকে পরাস্ত করে তাঁর সমস্ত কীর্তির পরিচয় গোধন হরণ করেন । তখন অর্জুন রাজপুত্র উত্তরের সারথিরূপে কৌরবদের সঙ্গে যুদ্ধ করে বিরাট রাজাকে বিপদ থেকে মুক্ত করেন । তাঁর সেই গোধন উদ্ধারের কীর্তির কথাই পাঠে উল্লিখিত হয়েছে । 

  1. ‘ সাজিলা রবীন্দ্রর্যত’— ‘ রবীন্দ্রর্যভ ‘ কে ? তিনি কেমন ভাবে সাজলেন ?

Ans: মধুসূদনের ‘ অভিষেক ‘ নামক পাঠ্য কাব্যাংশে ‘ রথীন্দ্রর্যভ ‘ ‘ রণীয় ‘ শব্দটি পাই , যার অর্থ ‘ শ্রেষ্ঠ রথী ‘ । এখানে ‘ রথীন্দ্রর্যভ ‘ বলতে ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে । প্রমোদকাননে মেয়েদের মাঝে ইন্দ্রজিৎ যখন বিলাসব্যসনে মত্ত ছিলেন । তখন লঙ্কার ঘোর দুর্দিনের খবর পেয়ে নিজেকে সালের বর্ণনা ধিক্কার জানান । শত্রুপক্ষকে বিনাশ করতে এই শ্রেষ্ঠ বীর তারকাসুর বিনাশকালে কার্তিকের মতো ও বিরাট রাজার গোধন রক্ষার সময় বৃহন্নলারূপী অর্জুনের মতো রণসাজে সজ্জিত হলেন । 

  1. ‘ ধরি পতি – কর – যুগ ‘ — ‘ পতি – কর – যুগ ধরে কে , কী বলেছিলেন লেখো । 

Ans: মধুসূদনের ‘ অভিষেক ‘ কাব্যাংশে ছদ্মবেশী প্রভাষার কাছে লঙ্কার দুর্দিনের খবর পেয়ে ইন্দ্রজিৎ প্রমোদকানন থেকে লঙ্কার দিকে যাত্রা করেন । ইন্দ্রজিতের বিদায় প্রমীলাকে বিরহ ‘ পতি – কর – যুগ ধরে ব্যথায় আচ্ছন্ন করে । বিরহকাতর প্রমীলা কেঁদে ফেলেন এবং বলেন পতি বিনা কেমন করে তিনি প্রাণ রক্ষা করবেন । গহন বনের মধ্যে হাতিদের দলপতি যেভাবে বনলতাকে পদতলে স্থান দেয় , প্রমীলাও ঠিক সেইভাবে ইন্দ্রজিতের আশ্রয়ে থাকতে চাইছেন । 

  1. ‘ কহিলা কাঁদিয়া ধনি ; ‘ — ‘ ধনি কে ? তিনি কাঁদলেন কেন ? 

Ans: ‘ অভিষেক ‘ কাব্যাংশে ‘ ধনি ‘ বলতে ইন্দ্ৰজিৎ – পত্নী প্রমীলাকে বোঝানো হয়েছে । 

  ধাত্রী প্রভাষা বেশধারী লক্ষ্মী যখন স্বর্ণলঙ্কার দুর্দিন , ইন্দ্রজিতের ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ ও রাবণের যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতির খবর ইন্দ্রজিতের কাছে দিলেন , তখন তিনি প্রমোদকাননে নারীদের ‘ ধনি ‘ কাঁদলেন কেন মাঝে বিলাসব্যসনে মত্ত ছিলেন । স্বর্ণলতা যেভাবে বড়ো গাছকে আঁকড়ে ধরে , সেভাবে প্রমীলা রক্ষকুলনিধি ইন্দ্রজিৎকে আঁকড়ে ধরে , তাঁর পথ রোধ করে কেঁদে ফেলেন । স্বামীর বিচ্ছেদ – বেদনায় পত্নীর কাতা ও ব্যথাতুর রূপটি প্রমীলার মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে । 

  1. ‘ তাজ কি কিঙ্করীরে আজি ? -বক্তা কে ? তার মনে এমন প্রশ্ন জেগে ওঠার কারণ কী ? অথবা , ‘ কেমনে ধরিবে প্রাণ তোমার বিরহে ‘ — কার উক্তি ? কেন এমন উক্তি ?

Ans: মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘ অভিষেক ’ কবিতা থেকে গৃহীত অংশে , ইন্দ্রজিৎ – পত্নী প্রমীলার মনে এই প্রশ্ন জেগেছে । মনে প্রশ্ন জেগে ওঠার কারণ ইন্দ্ৰজিৎ , ধাত্রী প্রভাষা – বেশী লক্ষ্মীর কাছে স্বর্ণলঙ্কার দুর্দিনের খবর পান । এই সংবাদ শুনে , তিনি স্বর্ণলঙ্কার উদ্দেশে রওনা হওয়ার জন্য প্রস্তুত হন । এমন সময় পত্নী প্রমীলা তাঁর পথ রোধ করে দাঁড়ান । প্রমীলা স্বামীর কাছে , তাঁকে ত্যাগ করার কারণ জানতে চান । জানতে চান এই হতভাগিনি ইন্দ্ৰজিৎ – বিনা কেমনভাবে বেঁচে থাকবেন । ব্রততীকে মাতঙ্গ ত্যাগ করলেও যেমন যূথনাথ আশ্রয় দেয় , ঠিক তেমনভাবেই তিনি কোনোক্রমে ইন্দ্রজিতের পদাশ্রয়ে নিজ স্থান খুঁজেছেন । আসলে স্বামীবিরহে বিরহাতুরা এক পত্নীর অন্তরের রূপটি এই উক্তির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে ।

  1. প্রমীলার কথার উত্তরে মেঘনাদ কী বলেছিলেন ? 

Ans: মাইকেল মধুসুদন দত্ত রচিত ‘ অভিষেক ‘ কাব্যাংশে প্রমোদ উদ্যানে প্রভাষার মুখে লঙ্কার দুর্দিনের কথা শুনে ইন্দ্রজিৎ লঙ্কার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে প্রমীলা তাঁর পথ রোধ করেন এবং প্রমোদ উদ্যান পরিত্যাগের কারণ জানতে চান । উত্তরে ইন্দ্রজিৎ বলেন , প্রমীলা মেঘনাদের প্রত্যুত্তর যে দৃঢ় বন্ধনে তাঁকে আবদ্ধ করে রেখেছেন , তা চিরন্তন । তারই কল্যাণে রাঘবকে পরাস্ত করে দ্রুত ফিরে আসবেন বলে বিদায় নেন । 

  1. কাপিলা লঙ্কা , কাপিলা জলধি ! –লঙ্কা কেঁপে উঠল কেন ? 

Ans: পাঠ্য ‘ অভিষেক ’ কাব্যাংশে ছদ্মবেশী প্রভাষার কাছে লঙ্কার দুর্দিনের সংবাদ শুনে প্রমোদকানন ত্যাগ করে ইন্দ্রজিং শত্রুর হাত থেকে লঙ্কাকে রক্ষার্থে লঙ্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন । তাঁর এই আগমনকে আকাশপথে মৈনাক পর্বতের সোনার পাখাবিস্তার করে উজ্জ্বল করে তোলার সঙ্গে তুলনা করেছেন । লঙ্কার কেঁপে ওঠার ক্রুদ্ধ ইন্দ্রজিতের ধনুকের গুণ পরানো ও শর কারণ নিক্ষেপকে মেঘের মাঝে গরুড়ের গর্জনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে । এর ফলেই লঙ্কা ও সমুদ্র কেঁপে উঠেছে । 

  1. ‘ এ মায়া , পিতঃ , —কোন্ মায়ার কথা বলা হয়েছে ? 

Ans: মধুসূদন দত্তের ‘ অভিষেক ’ কাব্যাংশে রামচন্দ্রের মায়াবলে পুনরায় জীবন ফিরে পাওয়ার প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়েছে । ধাত্রী প্রভাষা – রূপী লক্ষ্মী ইন্দ্রজিৎকে লঙ্কার ঘোরতর দুর্দিনের কথা জানান এবং এও বলেন , ‘ মায়াবী মানব সীতাপতি ; তব শরে মরিয়া বাঁচিল । এ সংবাদ শোনামাত্র ইন্দ্রজিৎ প্রমোদ উদ্যান ত্যাগ মায়ার পরিচয় করে লঙ্কায় পিতা রাবণের কাছে উপস্থিত হলেন । রাজা রাবণ তখন নিজেই যুদ্ধযাত্রার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন । এই অবস্থায় ইন্দ্রজিৎ রাবণকে রামচন্দ্রের পুনর্জীবন লাভের কারণ জানতে চাইলেন ।

  1. ‘ এ মায়া , পিতঃ , বুঝিতে না পারি ! বক্তার না – বোঝার কারণ কী ?

Ans: মধুসুদন দত্তের ‘ অভিষেক ‘ কাব্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটির বক্তা ইন্দ্রজিৎ । তিনি পিতাকে জিজ্ঞাসা করেছেন যে , কোন্ মায়াবলে রামচন্দ্র তাঁর তিরে নিথর হয়েও পুনরায় বেঁচে উঠলেন । আসলে পরাক্রমশালী ইন্দ্রজিৎ দু – বার যুদ্ধে রামচন্দ্রের বক্তার না বোঝার কারণ প্রাণনাশের উদ্যোগ করেছিলেন । তাই বারবার রামের পুনর্জীবন লাভ তাঁর কাছে গভীর বিস্ময়ের ব্যাপার । এ কোনো  ি মায়াবল ছাড়া সম্ভব নয় । তাই তিনি এই উক্তির মাধ্যমে অন্তর্মনের বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেছেন । 

ভাগ ০২

1. ইন্দ্রজিতের প্রিয়ানুজকে কে বধ করেছেন ?

Ans: ‘ অভিষেক ’ কবিতা অনুসারে , ইন্দ্রজিতের প্রিয় বৈমাত্রেয় ভাই বীরবাহুকে , রামচন্দ্র সম্মুখসমরে বধ করেছিলেন ।

2. রঘুবরকে ইন্দ্রজিৎ কখন সংহার করেছিলেন ?

Ans: ‘ অভিষেক ’ কবিতানুসারে , লক্ষ্মীর কাছে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর বিস্মিত ইন্দ্রজিৎ তাঁকে জানিয়েছিলেন যে , রাত্রিকালীন যুদ্ধে তিনি রাঘবকে সংহার করেছিলেন ।

3. ইন্দিরা সুন্দরীকে কী কী বিশেষণে ভূষিত করা হয়েছে ?

Ans: পাঠ্য রচনাংশে কবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত ‘ ইন্দিরা সুন্দরী ’ তথা লক্ষ্মীকে ‘ রত্নাকর ’ ও ‘ রত্নোত্তমা ‘ বিশেষণে ভূষিত করেছেন ।

4. ইন্দিরা সুন্দরীর মুখে প্রিয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে মেঘনাদের রোষের বহিঃপ্রকাশ কীভাবে ঘটেছিল ?

Ans: প্রমোদোদ্যানে ছদ্মবেশী লক্ষ্মীর মুখে প্রিয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে মেঘনাদ ফুলমালা ছিঁড়ে , সোনার আভরণ ছুড়ে ফেলে নিজেকে ধিক্কার জানায় ।

5. ‘ হা ধিক্ মোরে ! –বক্তা কেন নিজেকে ধিক্কার দিয়েছিলেন ?

Ans: স্বর্ণলঙ্কা যখন শত্রুপক্ষের ঘেরাটোপে , প্রিয় ভাই যখন নিহত , পিতা যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তখন প্রমোদকাননে মেয়েদের মাঝে বিলাসিতা শোভন নয় — তাই এই আত্মধিকার ।

6. ‘ ঘুচাব ও অপবাদ , বধি রিপুকুলে / অপবাদটি কী ?

Ans: রামচন্দ্রের হাতে লঙ্কার আক্রান্ত হওয়া ও প্রিয়ানুজ বীরবাহুর মৃত্যুকালে মেয়েদের মাঝে প্রমোদোদ্যানে সময় কাটানো এবং কর্তব্যের গাফিলতিকেই ইন্দ্ৰজিৎ অপবাদ বলেছেন ।

7. ‘ সাজিলা রথীন্দ্রষভ বীর – আভরণে ‘ — ‘ রথীন্দ্রর্যভ ’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে এবং তিনি কোন্ কোন্ বীরের মতো আভরণে ভূষিত হয়েছেন ?

Ans: ‘ রথীন্দ্রষভ ‘ বা শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা মেঘনাদ তারকাসুর বধ কালে কার্তিকের মতো ও বিরাটরাজের গোধন রক্ষার্থে বৃহন্নলারূপী কিরীটীর মতো বীর আভরণে ভূষিত হয়েছিলেন ।

8. মায়ারী মানব বলতে কাকে চিহ্নিত করা হয়েছে ?

Ans: ‘ অভিষেক ‘ নামাঙ্কিত পাঠ্য রচনাংশে মায়াবী মানব বলতে লক্ষ্মী , রঘুবর রামচন্দ্রকে চিহ্নিত করেছেন ।

9. ‘ তব শরে মরিয়া বাঁচিল ।’— কার শর প্রয়োগে কে মরে বেঁচে উঠেছিলেন ?

Ans: আলোচ্য ‘ অভিষেক ’ কবিতায় রক্ষকুলবীর ইন্দ্রজিতের তিরের আঘাতে রাঘব মরেও বেঁচে উঠেছিলেন ।

10. ‘ যাও তুমি ত্বরা করি ; ‘ – কে কাকে ‘ ত্বরা করি ’ যাত্রা করতে বলেছেন ?

Ans: ‘ অভিষেক ‘ কবিতানুসারে , স্বর্ণলঙ্কার বর্তমান অবস্থা নিরীক্ষণ করে লক্ষ্মী ত্বরা অর্থাৎ শীঘ্র ইন্দ্রজিৎকে সেখানে যাত্রা করতে বলেছেন ।

11. কালসমরে শব্দার্থ বুঝিয়ে দাও ।

Ans: পাঠ্য ‘ অভিষেক ‘ কবিতায় , ‘ কালসমরে ‘ বলতে রাবণের সঙ্গে রামচন্দ্রের সম্ভাব্য ঘোরতর যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে ।

12. ইন্দ্ৰজিৎকে ‘ রক্ষঃ – চূড়ামণি ‘ বলার কারণ কী ?

Ans: ‘ রক্ষঃ – চূড়ামণি ‘ শব্দের অর্থ রাক্ষসদের মধ্যে কুলশ্রেষ্ঠ বা শিরোমণি । প্রবল শক্তির অধিকারী ইন্দ্রজিৎ রাক্ষসদের মধ্যে বীর যোদ্ধা , তাই তাকে ‘ রক্ষঃ – চূড়ামণি ‘ বলা হয়েছে ।

13. মহাবলী মেঘনাদের কুসুমদাম ছেঁড়ার কারণ কী 

Ans: প্রভাষা ছদ্মবেশধারী লক্ষ্মীর কাছে ইন্দ্রজিৎ স্বর্ণলঙ্কার দুর্দশার কথা এবং রাঘবকে সংহার করা সত্ত্বেও তাঁর বেঁচে থাকার কথা জানতে পেরে মেঘনাদ প্রচণ্ড রোয়ে কুসুমদাম ছিঁড়ে ফেললেন ।

14. ইন্দ্রজিতের কুসুমদাম ছিঁড়ে ফেলা ও অন্যান্য জিনিস ছুড়ে ফেলাকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ?

Ans: ‘ অভিষেক ‘ কবিতায় ইন্দ্রজিতের কুসুমদাম ছিঁড়ে ফেলা ও অন্যান্য জিনিস ছুড়ে ফেলাকে , অশোক গাছের তলায় অশোক ফুলের আড্ডা বিচ্ছুরণের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ।

15. মহাবলী – মেঘনাদ প্রচণ্ড রোয়ে কী কী করলেন 

Ans: ‘ অভিষেক ‘ কবিতা অনুসারে , মহাবলী মেঘনাদ প্রচণ্ড রোষে কুসুমদাম ছিঁড়ে ফেলে , সোনার আভরণ ছুড়ে ফেলে সকল সাজ নষ্ট করলেন ।

16. প্রচণ্ড রোষে মেঘনাদ নিজেকে কী বলে ধিক্কার দিলেন 

Ans: ‘ অভিষেক ‘ কবিতানুসারে , যখন শত্রুরা স্বর্ণলঙ্কা গ্রাস করতে উদ্যত , তখন ইন্দ্ৰজিৎ নারীদের মাঝে প্রমোদরত — এই ভাবনা প্রকাশ করে । তিনি নিজেকে ধিক্কার দিলেন ।

17. ‘ বৈরিদল বেড়ে / স্বর্ণলঙ্কা , – ‘ বৈরিদল ‘ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে ? ‘ বেড়ে স্বর্ণলঙ্কা ’ বলতে কী বোঝ ?

Ans:  এখানে ‘ বৈরিদল ‘ অর্থাৎ শত্রুপক্ষ বলতে রামচন্দ্র ও তাঁর সৈন্যদের বোঝানো হয়েছে । ‘ বেড়ে স্বর্ণলঙ্কা ‘ বলতে বোঝানো হয়েছে । স্বর্ণলঙ্কাকে ঘিরে ফেলা হয়েছে ।

18. ‘ কাঁপিলা লঙ্কা কাঁপিলা জলধি ।’— ‘ লঙ্কা ’ ও ‘ জলধি কেঁপে ওঠার কারণ কী ?

Ans: ‘ অভিষেক ’ কবিতা অনুসারে প্রভাষার মুখে লঙ্কার দুঃসংবাদ শুনে প্রমোদ উদ্যান থেকে যুদ্ধ যাত্রাকালে রথে চেপে আকাশপথে ধাবমান মেঘনাদ ধনুকের ছিলায় যে – টংকার দিয়েছিলেন , তাতে এমন অবস্থা হয়েছিল ।

19. ‘ আন রথ ত্বরা করি ; ’ – ত্বরা করে রথ এনে ইন্দ্ৰজিৎ কী করবেন ?

Ans: পাঠ্য‘ অভিষেক ‘ কবিতা অনুসারে, শীঘ্র রথ নিয়ে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎ প্রমোদকানন ত্যাগ করে স্বর্ণলঙ্কার অভিমুখে যাত্রা করবেন ।

20. হৈমবতীসুত কী করেছিলেন ?

Ans: দেবলোকে ত্রাস সঞ্চারকারী মহাবলশালী তারকাসুরকে বধ করে‘ হৈমবতীসূত ’ অর্থাৎ কার্তিকেয় স্বর্গরাজ্য নিষ্কণ্টক করেছিলেন ।

21. ‘ বৃহন্নলারূপী কিরীটি কে ?

Ans: ‘ বৃহন্নলারূপী কিরীটি ‘ হলেন বৃহন্নলার ছদ্মবেশধারী তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন ।

22. গোধন উদ্ধার করতে কিরীটি কাকে সঙ্গে নিয়েছিলেন ?

Ans: বিরাট রাজাকে বিপন্মুক্ত করতে কিরীটি তথা অর্জুন গোধন উদ্ধারের জন্য বিরাট পুত্রকে সঙ্গে নিয়েছিলেন । 

23. অর্জুনকে কিরীটি বলার কারণ কী ?

Ans: পাণ্ডবশ্রেষ্ঠ অর্জুন দেবরাজ ইন্দ্রের দেওয়া কিরীট বা মুকুট মাথায় পরেছিলেন বলে , অর্জুনকে কিরীটি বলা হয় ।

24. ‘ শমীবৃক্ষমূলে ‘ কথাটির মধ্যে কোন্ কাহিনির ইঙ্গিত আছে ?

Ans: ‘ শমীবৃক্ষমূলে ‘ কথাটির মধ্যে বৃহন্নলারূপী অর্জুনের ছদ্মবেশ ত্যাগ করে যুদ্ধসজ্জার প্রসঙ্গের ইঙ্গিত আছে ।

25. স্বর্ণলঙ্কায় যাওয়ার সময় ইন্দ্রজিতের রথসজ্জার কথা লেখো ।

Ans: ‘ অভিষেক ’ কবিতা অনুসারে স্বর্ণলঙ্কায় যাওয়ার সময় ইন্দ্রজিতের অত্যন্ত দ্রুতবেগসম্পন্ন মেঘবর্ণ রথটির চাকায় ছিল বিজলির ছটা , পতাকা ছিল রংধনুর মতো সাতটি বর্ণে রঞ্জিত ।

26. ইন্দ্ৰজিৎ যখন স্বর্ণলঙ্কায় যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন তখন কে তার পথ রোধ করে দাঁড়ালেন ?

Ans: ‘ অভিষেক ‘ কবিতানুসারে ইন্দ্রজিৎ যখন স্বর্ণলঙ্কায় যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন তখন ইন্দ্রজিতের পত্নী প্রমীলা তাঁর পথ রোধ করে দাঁড়ালেন ।

27. মেঘনাদবধ কাব্যর প্রথম সর্গের নাম কী?

উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত মেঘনাদবধ কাব্যর প্রথম সর্গের নাম ‘অভিষেক’ |

28. “প্রণমিয়াধাত্রীর চরণে,/কহিলা,”—ইন্দ্রজিৎ কী বলেছিলেন?

উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশে ইন্দ্ৰজিৎ লঙ্কার সুসংবাদ জিজ্ঞাসা করেছিলেন এবং সেখানে ধাত্রীমাতা প্রভাষার আসার কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন।

29. “ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সুতা উত্তরিলা;”—‘অম্বুরাশি-সুতা’ কে এবং কেন তাঁর এমন নাম?

উত্তর: ‘অম্বুরাশি’ শব্দের অর্থ জলসমূহ, ‘সুতা’ শব্দের অর্থ কন্যা। সমুদ্রমন্থনের সময় লক্ষ্মীর উত্থান হয়েছিল বলে তাঁকে ‘অম্বুরাশি-সুতা’ বলা হয়েছে।

30.  “ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সুতা”—‘অম্বুরাশি-সুতা’ কার ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন?

উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে নেওয়া। ‘অম্বুরাশি-সুতা’ বা লক্ষ্মী ইন্দ্রজিতের ধাত্রীমাতা প্রভাষার ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন।

31. ‘অম্বুরাশি-সুতা’ কেন ইন্দ্রজিতের কাছে এসেছিলেন?

উত্তর: ‘অম্বুরাশি-সুতা’ অর্থাৎ লক্ষ্মী ইন্দ্ৰজিতের কাছে এসেছিলেন তাঁকে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ দিয়ে যুদ্ধযাত্রায় উৎসাহ দিতে।

32.  “সসৈন্যে সাজেন আজি যুঝিতে আপনি।”—কে সসৈন্যে সাজেন?

উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে গৃহীত। প্রিয়পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুতে লঙ্কেশ্বর রাবণ সৈন্যদল সহ যুদ্ধসাজে সজ্জিত হন।

33. “জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া;”— এই বিস্ময়ের কারণ কী ছিল?

উত্তর: রামচন্দ্রকে খণ্ড খণ্ড করে কেটে ফেলার পরেও কে বীরবাহুকে হত্যা করল—তা ভেবেই ইন্দ্রজিৎ অবাক হয়েছেন।

34. “কে বধিল কবে/প্রিয়ানুজে?”—‘প্রিয়ানুজ’ কাকে বলা হয়েছে?

উত্তর: ‘প্রিয়ানুজ’ বলতে এখানে বীরবাহুকে বোঝানো হয়েছে।

35. ছদ্মবেশী লক্ষ্মী কোন্ সংবাদ নিয়ে এসেছিলেন?

উত্তর: ছদ্মবেশী লক্ষ্মী রাবণপুত্র বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ এবং তাতে রাবণের শোকগ্রস্ত হওয়ার খবর নিয়ে এসেছিলেন।

36. “এ অদ্ভুত বারতা,”—কোন্ ‘বারতা’র কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে নেওয়া। এখানে বীরচূড়ামণি বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদের কথাই বলা হয়েছে।

37.  “শীঘ্র কহ দাসে।— শীঘ্র কী বলতে বলা হয়েছে?

উত্তর: ছদ্মবেশী লক্ষ্মী বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ দিতে এসেছেন মেঘনাদকে। লক্ষ্মী কোথায় সেই মৃত্যুসংবাদ পেলেন তা শীঘ্র বলতে বলা হয়েছে।

38. অর্জুন কোথায় যুদ্ধসজ্জা করেছিলেন?

উত্তর: মহাভারতের বিরাট পর্বে অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন অর্জুন বিরাটরাজের গোধন উদ্ধারের জন্য শমিবৃক্ষমূলে যুদ্ধসজ্জা করেছিলেন।

39.  “ধবজ ইন্দ্রচাপরূপী;”—‘ইন্দ্রচাপ’ কথার অর্থ কী?

উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে গৃহীত| ‘ইন্দ্ৰচাপ’ কথার অর্থ হল দেবরাজ ইন্দ্রের ধনু।

40. “হেন কালে প্রমীলা সুন্দরী,/ধরি পতি-কর-যুগ”—প্রমীলার এই আচরণকে কবি কাঁসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?

উত্তর: স্বর্ণলতার বিরাট বনস্পতিকে জড়িয়ে ধরার সঙ্গে প্রমীলার এই আচরণকে তুলনা করা হয়েছে।

41.  “হেন কালে প্রমীলা সুন্দরী,”—‘হেন কালে‘ বলতে কোন্ সময়কে বলা হয়েছে?

উত্তর: বীরবাহুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য ইন্দ্ৰজিৎ যখন রথে চড়ে বসেছেন, সেই সময়কে বোঝাতেই ‘হেনকাল’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

42. “ব্রততী বাঁধিলে সাধে করি-পদ,”—‘করিপদ’ কথার অর্থ কী?

উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে গৃহীত।‘করি-পদ’ কথার অর্থ হল হাতির পা।

43. “কে পারে খুলিতে/সে বাঁধে?”—এখানে কোন্ বন্ধনের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশটিতে প্রমীলার সঙ্গে ইন্দ্রজিতের সম্পর্কের বন্ধনের কথা বলা হয়েছে।

44. “ত্বরায় আমি আসিব ফিরিয়া…”-কোথা থেকে ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশটিতে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে রামচন্দ্রকে হত্যা করে ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে।

45.  “উঠিছে আকাশে/কাঞ্চন-কণ্ডুক-বিভা।”—কাকে ‘কাঞ্চন-কম্বুক-বিভা’ বলা হয়েছে?

উত্তর: বীরবাহুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে লঙ্কেশ্বর রাবণ যুদ্ধসাজে সেজেছেন। রাক্ষসবাহিনীর রেশমি  পতাকার ঔজ্জ্বল্যকে এখানে ‘কাঞ্চন- কপ্ৰুক-বিভা’ বলা হয়েছে।

46.  “নাদিলা কর্পূরদল…”—কেন ‘কর্পূরদল’ আওয়াজ করেছিল?

উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে সংগৃহীত উদ্ধৃতাংশে মেঘনাদকে দেখে মহাগর্বে সৈন্যদল আওয়াজ করেছিল।

47.  “নমি পুত্র পিতার চরণে,”—পিতা ও পুত্র কে?

উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশটিতে পিতা হলেন লঙ্কাধিপতি দশানন রাবণ এবং পুত্র হলেন রাবণ পুত্র মেঘনাদ।

48.  “এ মায়াপিতঃবুঝিতে না পারি!”—কোন্ মায়া বক্তা বুঝতে পারছেন না?

উত্তর: মৃত্যুর পরেও রামচন্দ্র কীভাবে বেঁচে উঠলেন—সেই মায়ার ছলনা বক্তা মেঘনাদ বুঝতে পারছেন না।

49.  “সমূলে নির্মূল/করিব পামরে আজি!”—কাকে ‘পামর’ বলা হয়েছে?

উত্তর : উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে গৃহীত ৷ এখানে রামচন্দ্রকে ‘পামর’ অর্থাৎ পাপী বলা হয়েছে।

50. . “নতুবা বাঁধিয়া আনি দিব রাজপদে।”—কেকাকে রাজপদে এনে দিতে চেয়েছেন?

উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে গৃহীত। মেঘনাদ রামচন্দ্রকে বেঁধে এনে রাজপদে অর্থাৎ রাবণের পায়ের কাছে দিতে চেয়েছেন।

51.  “নাহি চাহে প্রাণ মম”—বক্তার প্রাণ কী চায় না?

উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে গৃহীত। এখানে মেঘনাদকে যুদ্ধে পাঠাতে লঙ্কেশ্বর রাবণের প্রাণ চায় না।

52.  “কে কবে শুনেছেপুত্রভাসে শিলা জলে,”—কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ পদ্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে রামচন্দ্রের মৃত্যুর পরে পুনর্জীবন লাভ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে।

53. ‘অভিষেক’ কবিতাটি কোন্ কাব্যগ্রন্থের কোন অংশ থেকে গৃহীত ?

উত্তর –  ‘অভিষেক’ কাব্যাংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘মেঘনাদবধ কাব্য -এর প্রথম সর্গ থেকে গৃহীত।

54. কণক আসন ত্যজিবীরেন্দ্রকেশরী / ইন্দ্রজিৎ’-ইন্দ্রজিৎ কণক আসন ত্যাগ করলেন কেন ?

উত্তর – ইন্দ্রজিৎ তার সামনে উপস্থিত ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশিনী শ্রীলক্ষ্মীকে দেখে সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করে কণক আসন ত্যাগ করলেন।

55.  বীরবাহুর মৃত্যু সংবাদ কে কাকে দিয়েছিল ?

উত্তর – বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ প্রভাষা রাক্ষসীর ছদ্মবেশে প্রমােদ উদ্যানে আসা দেশ লক্ষ্মী মেঘনাদকে দিয়েছিল।

56.  ‘ছদ্মবেশী অম্বুরাশি – সুতা’ কেন ইন্দ্রজিতের কাছে এসেছিলেন?

উত্তর- রামচন্দ্রের সাথে যুদ্ধে যখন ধীরে ধীরে লঙ্কাসেনা পরাজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং রাবণ সদ্য পুত্র বিরবাহু-কে হারিয়েছেন, এই সময়ে প্রভাষা-র ছদ্মবেশী রাজলক্ষ্মী রমা ইন্দ্রজিৎ-এর কাছে এসে তাকে যুদ্ধের জন্য প্ররোচিত করার প্রচেষ্টা করেছিলেন।

57.  ‘ধরি পতি-কর- যুগ’ – পতির কর-যুগ ধরে উদ্দিষ্ট ব্যাক্তি কী বলেছিলেন?

উত্তর- ইন্দ্রজিতের স্ত্রী প্রমিলাদেবী তাঁর পতির হাত ধরে তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে না যাবার অনুরোধ করেছিলেন।

58.  ‘শিঞ্জিনী আকর্ষি রোষে’, – ‘শিঞ্জিনী’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তর- ‘শিঞ্জিনী’ শব্দের অর্থ ধনুকের ছিলা।

59. ‘রত্নাকর রতল্লাত্তমা’ কার বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ?

উত্তর –  রত্নাকর রত্নোত্তমা স্বয়ং দেবী ইন্দিরা বা লক্ষ্মীর বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

60. ‘যাও তুমি ত্বরা করি ;-কাকে কোথায় যেতে বলা হয়েছে ?

উত্তর – মেঘনাদকে রাক্ষসকুলের মানরক্ষার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বলা হয়েছে। .

61. ‘সাজিছে রাবণরাজা’ রাবণের এমন আচরণের কারণ কী ?

উত্তর – বীরবাহুর মৃত্যুর খবরে প্রতিশােধ নেওয়ার বাসনায় রাবণরাজা রণসজ্জায় সেজে উঠেছেন।

62. ‘কিন্তু অনুমতি দেহ;’— কোন্ অনুমতি প্রার্থণা করেছেন ?

উত্তর – সমূলে রাঘবকে নির্মূল করার জন্য মেঘনাদ অনুমতি প্রার্থণা করেছেন। .

63.  মেঘনাদ রাঘবদের ক’বার হারিয়েছিলেন ?

উত্তর – মেঘনাদ রাঘবকে দুবার যুদ্ধে হারিয়েছেন।

64.  ‘কুম্ভকর্ণ বলী’–কুম্ভকর্ণ কে ছিল ?

উত্তর – কুম্ভকর্ণ ছিলেন বিশ্বশ্রবা মুণি ও নিকষার মধ্যমপুত্র, দশানন রাবণের ভ্রাতা।

65.  কোন্ সময়ে রাঘবদের মুখােমুখি হবার কথা বলেছেন রাবণ ?

উত্তর –  রাঘবের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য রাবণ তার পুত্র মেঘনাদকে প্রভাতে মুখােমুখি হবার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

66.  ‘অভিষেক’ শব্দটির অর্থ কী?

উত্তর- প্রাচীনকালে রাজার, রাজ সিংহাসনলাভের সময়ের বিশেষ ধর্মানুষ্ঠানকে অভিষেক বলা হত।

67.  “প্রণমিয়াধাত্রীর চরণে,” – ধাত্রীর প্রকৃত পরিচয় কী?

উত্তর- ইন্দ্রজিৎ এখানে ধাত্রী বলতে ‘প্রভাষা’-কে বুঝিয়েছেন, প্রভাষার প্রকৃত পরিচয় হল রাজলক্ষ্মী রমা।

68. ‘ মেঘনাদবধ কাব্য ‘ – এর প্রথম সর্গটির নাম লেখো । কাব্যের মোট ক – টি সর্গ ?

Ans: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘ মেঘনাদবধ কাব্য ‘ – এর প্রথম সর্গের নাম ‘ অভিষেক । এ কাব্যের মোট সর্গ সংখ্যা ন – টি ।

69. ‘ অভিষেক ‘ রচনাংশটিতে কার অভিষেকের কথা বলা হয়েছে ?

Ans: মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘ অভিষেক ‘ রচনাংশটিতে রক্ষরাজ রাবণের পুত্র ইন্দ্রজিতের অভিষেকের কথা বলা হয়েছে ।

70. ইন্দ্ৰজিৎ কে ?

Ans: রাবণ ও মন্দোদরীর সন্তান মেঘনাদ দেবরাজ ইন্দ্রকে জয় করেছিলেন বলে বীরশ্রেষ্ঠ ‘ ইন্দ্রজিৎ ‘ নাম গ্রহণ করেছিলেন ।

71. কাকে বীরেন্দ্রকেশরী বলা হয়েছে ?

Ans: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘ অভিষেক ’ নামাঙ্কিত অংশে বীরেন্দ্রকেশরী বলা হয়েছে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎকে । বীরেন্দ্রকেশরীর অর্থ বীরসিংহ ।

72. ‘ প্রণমিয়া ধাত্রীর চরণে , / কহিলা , – ধাত্রী আসলে কে এবং তাকে কী বলা হয়েছে ?

Ans: মধুসূদনের অভিষেক ‘ কাব্যাংশে প্রভাষার ছদ্মবেশিনী ধাত্রী আসলে দেবী লক্ষ্মী । প্রমোদোদ্যানে মেঘনাদ তাঁকে দেখে সেখানে আগমনের কারণ ও লঙ্কার কুশল জিজ্ঞাসা করেছিলেন ।

73. ইন্দ্রজিৎ ধাত্রীর চরণে প্রণাম করে তাকে কী বলে সম্বোধন করেন ?

Ans: ‘ অভিষেক ’ নামাঙ্কিত রচনাংশে ধাত্রী ছদ্মবেশধারী লক্ষ্মীর চরণে প্রণাম করে তাকে ‘ মাতঃ ‘ বলে সম্বোধন করেন ।

74. ‘ অম্বুরাশি – সুতা কার ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন ?

Ans: মধুসুদনের ‘ অভিষেক ‘ কাব্যাংশে ‘ অম্বুরাশি – সুতা ‘ অর্থাৎ লক্ষ্মী , ইন্দ্রজিতের ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রমোদকাননে এসে ইন্দ্রজিৎকে বীরবাহুর মৃত্যু ও রাবণের যুদ্ধযাত্রার সংবাদ দিয়েছিলেন ।

75. বীরবাহু কে ?

Ans: লঙ্কেশ্বর রাবণ ও গন্ধবর্তনয়া চিত্রাঙ্গদার পুত্র হলেন বীরবাহু । বাল্মীকির রামায়ণে বীরবাহুর উল্লেখ না থাকলেও কৃত্তিবাসী রামায়ণে তাঁর উল্লেখ পাওয়া যায় ।

76. ‘ মহাশোকী রাক্ষসাধিপতি কাকে বলা হয়েছে ?

Ans: পাঠ্য ‘ অভিষেক ‘ কবিতায় ‘ মহাশোকী রাক্ষসাধিপতি ‘ বলতে লঙ্কার অধিপতি রক্ষরাজ রাবণকে বলা হয়েছে । পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুতে তিনি মহাশোকী ।

77. ‘ হায় । পুত্র , কি আর কহিব কনক – লঙ্কার দশা । বক্তা ‘ কনক – লঙ্কার দশা ‘ বলতে কী বুঝিয়েছেন ?

Ans: বক্তা প্রভাষার ছদ্মবেশী ‘ অম্বুরাশি – সুতা ‘ অর্থাৎ লক্ষ্মীদেবী ‘ কনক – লঙ্কার দশা ‘ বলতে বীরবাহুর মৃত্যু এবং সেই কারণে রাবণের সসন্যৈ যুদ্ধযাত্রার কথা বলেছেন ।

78. এবং তার বিস্ময়ের কারণ কী জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া ; – মহাবাহু কে ?

Ans: ‘ মহাবাহু ‘ হলেন ইন্দ্রজিৎ । রামচন্দ্রকে রাত্রিকালীন যুদ্ধে তিরের আঘাতে খণ্ড খণ্ড করে কেটে ফেলা সত্ত্বেও , তাঁরই হাতে বীরবাহু কীভাবে মারা যেতে পারে এ কথা ভেবে তিনি বিস্মিত হয়েছেন ।

79. ‘ তবে  বারতা এ অদ্ভুত বারতা বার্তাটি কী এবং তা অদ্ভুত কেন ?

Ans: বার্তাটি হল রাঘবের হাতে বীরবাহুর মৃত্যু । বার্তাটি অদ্ভুত কারণ ইন্দ্রজিতের তিরের আঘাতে যে – রাঘবের মৃত্যু ঘটেছে , সে কী করে বীরবাহুর হত্যাকারী হয় ।

80. ভগবতীর অপর নাম কী ?

Ans: মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘ অভিষেক ’ নামাঙ্কিত কবিতা থেকে আমরা জানতে পারি , ভগবতীর অপর নাম লক্ষ্মী । ‘

81. রক্ষ রক্ষঃকুলমান , ‘ — বক্তা কে এবং কাকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছেন ?

Ans: বক্তা হলেন প্রভাষার রূপ ধারণকারিণী দেবী লক্ষ্মী । তিনি মায়াবী রামচন্দ্রের হাত থেকে রক্ষঃকুলকে রক্ষার জন্য ইন্দ্রজিৎকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছেন ।

[মান ৩] ভাগ ০১

১। ‘জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া কাকে মহাবাহু বলা হয়েছে ? তাঁর বিস্ময়ের কারণ কী ? 

উত্তর – কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘মেঘনাদবধ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে মহাবাহু বলতে রাক্ষসরাজ রাবণ ও দেবী মন্দোদরীর পুত্র ইন্দ্রজিৎ অর্থাৎ মেঘনাদকে বলা হয়েছে।

তাঁর বিস্ময়ের কারণ হল – বনবাসী রামচন্দ্রকে ইতিপূর্বে সে দুবার যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত করেছিলেন কিন্তু তা সত্ত্বেও কাকতালীয়ভাবে রামচন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধে নাকি প্রিয়ভাই বীরবাহু বীরগতি প্রাপ্ত হয়েছেন এবং আবার সে বেঁচে থাকতে তাঁর পিতা পুত্রহন্তার প্রতিবিধানকল্পে যুদ্ধ সজ্জায় সজ্জিত হচ্ছেন। 

২। “হায়, বিধি বাম মম প্রতি’ বক্তা কে ? তিনি এমন কথা বলেছেন কেন?

মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ থেকে গৃহীত ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা রাক্ষসকুলপতি রাবণ।।

রামচন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধে বক্তা রাবণের বীর যােদ্ধারা একে একে নিহত হন। অথচ একসময় তাদেরই ভয়ে দেবতারা ভীত সন্ত্রস্ত ছিল কিন্তু তারাই আজ একজন সামান্য মানব ও তাঁর বানর সেনার কাছে বীরগতি প্রাপ্ত হচ্ছে একথা তিনি কোনভাবে মানতে পারছিলেন না। তাঁর মনে হচ্ছে বিধাতা তার প্রতি অপ্রসন্ন তাই তাঁর এমন পরিণতি হয়েছে। তাই তিনি এ কথা উচ্চারণ করেছেন।

৩।কহিলা রাক্ষসপতি’– রাক্ষসপতি কে ? তিনি কাকে, কোন কথা বলেছিলেন ? 

উত্তর – প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটিতে রাক্ষসপতি বলতে লঙ্কার অধিপতি রাবণকে বােঝানাে হয়েছে।

তিনি তার পুত্র মেঘনাদকে বলেছিলেন যে বলবান কুম্ভকর্ণকে অকারণে জাগিয়ে তিনি তাকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছেন। বজ্রাঘাতে তরু বা গিরিশৃঙ্গের মত বিশাল বপু সিন্ধুতীরে পড়ে আছে। তাই তিনি মেঘনাদকে আগে ইষ্টদেবকে পুজোয় তুষ্ট করে প্রভাতবেলা যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বস্তুত যুদ্ধে অকালে প্রিয়পাত্রদের এবং পুত্র বীরবাহুকে হারিয়ে ভগ্নহৃদয় রাবণের আর্তি আলােচনাংশে ফুটে উঠেছে। .

৪।‘বিদায় এবে দেহ বিধুমুখী’– বিধুমুখী কাকে বলা হয়েছে ? আললাচনাংশের বক্তা কে ? তিনি কেন বিদায় প্রার্থনা করেছেন ? 

উত্তর – প্রশ্নে উদ্ধৃত আলােচনাংশে বিধুমুখী বলতে মেঘনাদপত্নী প্রমীলাকে বােঝানাে হয়েছে। তাঁর মুখাবয়ব যেহেতু চন্দ্রের মত তাই এরূপ বিশেষণের অবতারণা।

আলােচনাংশের বক্তা হলেন লঙ্কেশ্বর রাবণ ও মহারাণী মন্দোদরীর ইন্দ্রবিজয়ী পুত্র।

 প্রিয় ভাইয়ের হন্তা রাঘবকে শমনভবনে পাঠানাের জন্য পত্নী প্রমীলার নিকট তিনি বিদায় প্রার্থনা করেছেন।

৫। কে কবে শুনেছে লােক মরি পুনঃ বাঁচে?’ – কোন প্রসঙ্গে কে একথা বলেছেন? অথবা, কে কবে শুনেছে পুত্র, ভাসে শিলা জলে – তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।

উত্তর –  মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’-এর অভিষেক নামক প্রথম সর্গের অন্তর্গত অভিষেক শীর্ষক পাঠ্যাংশে রাবণ তার পুত্র ইন্দ্রজিতকে একথা বলেছেন।

যুদ্ধে মেঘনাদ রামচন্দ্রকে হত্যা করে ফিরে আসে কিন্তু দৈব মায়ায় রাম হয়ে বেঁচে উঠে বীরবাহুকে হত্যা করে। লঙ্কার এই দুর্দিনে রাবণ তার। গপত্র মেঘনাদকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যুদ্ধে পাঠাতে প্রস্তুত হন। সেই প্রসঙ্গেই তিনি বলেছেন কে কবে শুনেছে পুত্র, ভাসে শিলা জলে অর্থাৎ মৃত মানুষ কখনাে বেঁচে ওঠে না। রামচন্দ্রের পুনরায় বেঁচে ওঠার ঘটনা যেন জলে প্রস্তরখন্ড ভাসার মতােই অবাস্তব ঘটনা।

 

৬।“সাজিছে রাবণরাজ” – কীভাবে রাবণ সেজেছেন লেখাে। অথবা, রাবণের যুদ্ধ সজ্জার বর্ণনা দাও।

উত্তর – মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্যের অন্তর্গত ‘অভিষেক’ শীর্ষক রচনায় রাবণের যুদ্ধ সজ্জার প্রস্তুতির কথা আছে।।

ইন্দ্রজিতের অস্ত্রাঘাতে মৃত রাম পুনরায় বেঁচে বীরবাহুকে হত্যা করে। এই সংবাদে ক্রুদ্ধ রাবণ বীরমদে মত্ত হয়ে রণসাজে প্রস্তুত হন যুদ্ধে যাবার জন্য। চারদিকে রণবাদ্য বাজছে, শােনা যায় যুদ্ধেমত্ত হাতির বৃংহন, অশ্বের হেষা, পদাতিক সেনার রণহুঙ্কার। সেই সঙ্গে স্বর্ণ আবরণীর মতাে কৌশিকী ধ্বজা। উড়িয়ে প্রস্তুত যুদ্ধের রথ।.

৭।“ছিড়িলা কুসুমদাম রােষে মহাবলী/মেঘনাদ” — মেঘনাদ কেন এরূপ আচরণ করলেন? 

উত্তর – মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদ বধ কাব্যের অন্তর্গত ‘অভিষেক কাব্যাংশে ইন্দ্রজিৎ প্রভাষার ছদ্মবেশী ধাত্রীমাতার কাছে বীরবাহুর মৃত্যু ও রামচন্দ্রের পুনরায় বেঁচে ওঠার সংবাদ শুনে প্রমােদের উপকরণ সব ছিড়ে। ফেলেন।

প্রিয়ানুজের মৃত্যু সংবাদে মর্মাহত ইন্দ্রজিত বুঝতে পারেন লঙ্কার কালবেলা আসন্ন। পিতা রাবণ যুদ্ধে যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাই তিনি পুত্র হয়ে বামাদল মাঝে ফুলের সজ্জায় বিনােদনরত। আত্ম ধিক্কারে তিনি রাগে ক্ষোভে কুসুমদাম সব ছিডে যুদ্ধে যাত্রার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

৮। “নতুবা বাঁধিয়া আনি দিব রাজপদে।” – কে, কী এনে দেবেন? 

উত্তর – মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ পাঠ্যাংশে ইন্দ্রজিৎ পিতা রাবণকে একথা বলেছেন। 

বীরবাহুর মৃত্যুতে শােকস্তব্ধ লঙ্কায় রামের পুনরায় বেঁচে ওঠার সংবাদ বিপন্নতা বাড়িয়ে তােলে। যুদ্ধোন্মুখ পিতা রাবণের কাছে ইন্দ্রজিৎ তাই ক্রুদ্ধ হয়ে যুদ্ধে যাত্রার অনুমতি চায়। সেই সঙ্গে পিতার কাছে প্রতিশ্রুতি দেয় যে রামচন্দ্রকে সমূলে নির্মূল করে দেবেন কিংবা পিতা রক্ষোরাজ রাবণের রাজপদে শত্রু রামচন্দ্রকে বেঁধে নিয়ে উপস্থিত করবেন বিচারের জন্য।

[মান-3] ভাগ ০২

1. “জিজ্ঞাসিল মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া”—মহাবাহু কে, কার কাছে তিনি কী জিজ্ঞাসা করেছিলেন?

উত্তরঃ মহাবাহু : মেঘনাদবধ কাব্যের প্রথম স্বর্গ অভিষেক নামাঙ্কিত কাব্যাংশে মহাবাহু হলেন মেঘনাদ অর্থাৎ ইন্দ্রজিৎ মহাবাহুর জিজ্ঞাসা : ছদ্মবেশধারী লক্ষ্মীর কাছে ইন্দ্রজিৎ লঙ্কার কুশল সংবাদ জিজ্ঞাসা করেছিলেন। প্রমােদ উদ্যানে হঠাৎ জননী স্থানীয়া ধাত্রীর আগমন অপ্রত্যাশিত। তাই ইন্দ্রজিৎ তার কাছে লঙ্কার সংবাদ জানতে চান। ইন্দ্রজিৎকে ছদ্মবেশধারী দেবী জানান বীরবাহ নিহত হয়েছেন ও রাবণ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই দুটি সংবাদ শুনে মহাবিস্ময়ে ইন্দ্রজিৎ প্রশ্ন করেন—কে হত্যা করল বীরবাহুকে? কারণ তিনি নিজেই রামচন্দ্রসহ শত্রুদলকে সংহার করেছেন।

2. “কে কবে শুনেছে পুত্র ভাসে শিলা জলে”।—এমন উপমা দেওয়ার কারণ লেখাে।

উত্তরঃ উপমার কারণ : অভিষেক কবিতার রাক্ষসরাজ রাবণ এমন উপমা প্রয়ােগ করেছেন। রামচন্দ্রের পুনরায় বেঁচে ওঠা সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে এমন প্রশ্ন করেছেন। রাবণ পুত্র ইন্দ্রজিৎ রামচন্দ্রকে দুবার যুদ্ধে পরাজিত করেছেন। দুটি ক্ষেত্রেই রামচন্দ্রের মৃত্যু নিশ্চিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে বিপরীত ঘটনা ঘটে। রামচন্দ্র দুবারই পুনঃজীবন লাভ করে। রাবণ নিজের জীবন অভিজ্ঞতা থেকে জানাচ্ছেন। শিলা বা পাথরের যেমন জলে ভাসা কঠিন, তেমনই কোনাে মানুষ মরে গিয়ে তার বাঁচা কঠিন। আসলে রাম মায়াবী মানব। তাই এটা সম্ভবপর হয়েছে। এমনটাই মনে করে ইন্দ্রজিৎ।

3. “নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ কর”—নিকুম্ভিলা যজ্ঞ কেন করা হত?

উত্তরঃ : নিকুম্ভিলা যজ্ঞ করার কারণ : নিকুম্ভিলা লঙ্কার কুলদেবী। রাবণের বিশ্বাস ইন্দ্রজিৎ আরাধ্য অগ্নিদেবতার পূজা সঠিকভাবে সুসম্পন্ন করলে তার সিদ্ধিলাভ নিশ্চিত। রামচন্দ্রকে পরাজিত করবার ক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন। স্বর্ণলঙ্কার দেবী নিকুম্ভিলা অতিশয় গুপ্ত জায়গায় থাকেন। এখানে ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধ যাত্রার পূর্বে পূজা। অর্চনার মাধ্যমে কুলদেবীকে তুষ্ট করতে আসেন।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

ভাগ ০১

1. ‘ অভিষেক ’ কবিতাটি কোথা থেকে গৃহীত ? কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো । 

Ans: ‘ অভিষেক ’ কবিতাটি মাইকেল মধুসূদনের ‘ মেঘনাদবধ কাব্য ’ গ্রন্থের ‘ প্রথম সর্গ ’ থেকে গৃহীত । এক্ষেত্রে উল্লেখ্য কবির দেওয়া প্রথম সর্গটির নামও ‘ অভিষেক । ‘ নামকরণের সার্থকতা ‘ অংশটি দ্যাখো । 

2. ‘ জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া ‘ — ‘ মহাবাহু ’ কে ? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তার বিস্ময়ের কারণ উল্লেখ করো ।  

Ans: মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘ মেঘনাদবধ কাব্য ’ – এর প্রথম সর্গ থেকে সংকলিত আমাদের পাঠ্য ‘ অভিষেক ’ নামক কাব্যাংশে ‘ মহাবাহু বলতে রাবণ ও মন্দোদরী পুত্র ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে । প্রবল পরাক্রমী বীরত্বের জন্য তাঁকে এই বিশেষণে বিশেষিত করা হয়েছে । প্র প্রমোদ উদ্যানে যখন ইন্দ্রজিৎ বিলাসমত্ত , ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশধারী দেবী লক্ষ্মী তখন সেখানে আসেন । ধাত্রীকে দেখে ইন্দ্ৰজিৎ কিছুটা হতচকিত হয়ে পড়েন এবং সিংহাসন ত্যাগ করে বিনম্র চিত্তে তাঁর আগমনের কারণ ও লঙ্কার কুশল জিজ্ঞাসা করলেন । ছদ্মবেশী দেবী তাঁর শিরঃচুম্বন করে কনকলঙ্কার দুর্দশার ইঙ্গিত দেন । তিনি আরও জানান , এক ভীষণ যুদ্ধে ইন্দ্রজিতের প্রিয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যু ঘটেছে এবং শোকাহত রাবণ সেইজন্য সসৈন্যে যুদ্ধযাত্রার আয়োজন করছেন । এসব শুনেই মহাবাহু ইন্দ্রজিতের এমন বিস্ময়ের উদ্রেক ঘটেছে । রামের হাতে প্রিয় ভ্রাতা বীরবাহুর মৃত্যু ঘটেছে এ কথা শুনে তাঁর মনে বিস্ময় জেগেছে , কারণ ইন্দ্রজিৎ ইতিপূর্বে বিস্ময়ের কারণ রাত্রিকালীন যুদ্ধে রামকে তিরের আঘাতে টুকরো টুকরো করে কেটে হত্যা করেন । অথচ সেই রামের হাতেই বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে । ব্যাপারটা তাঁকে বিস্মিত করেছে । তাই ইন্দ্রজিৎ ভগবতীর কাছে অত্যন্ত বিস্ময়ের সঙ্গে এর বাস্তবতা জানতে চেয়েছেন ।

3. ‘ রত্নাকর রত্নোত্তমা ইন্দিরা সুন্দরী / উত্তরিলা — ‘ ইন্দিরা সুন্দরী ‘ কে ? তাঁর উত্তরটি কী ছিল ? উত্তরে মেঘনাদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল ? 

Ans: মধুসূদনের ‘ মেঘনাদবধ কাব্য ’ – এর প্রথম সর্গ থেকে সংকলিত ‘ ইন্দিরা সুন্দরী কে ? আমাদের পাঠ্য ‘ অভিষেক ‘ নামক কাব্যাংশে ইন্দিরা সুন্দরী ‘ বলতে বিরুপত্নী লক্ষ্মীদেবীকে বোঝানো হয়েছে ।

  ধাত্রী প্রভাষার ছদ্মবেশে দেবী লক্ষ্মীর মুখে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে ইন্দ্ৰজিৎ বিস্মিত হয়েছিলেন , কারণ তার দ্বারা পরাস্ত ও নিহত রামের হাতে বীরবাহুর কীভাবে মৃত্যু হতে পারে । ইন্দ্রজিতের কাছে এই বার্তা অদ্ভুত বলে মনে হয়েছে এবং বার্তার উৎস জানতে চাইলে লক্ষ্মীদেবী সীতাপতি রাঘবকে মায়াবী মানব বলে অভিহিত করেন ও ইন্দ্রজিৎকে এই কালসমরে লঙ্কাকে রক্ষার আহ্বান জানান । ইন্দিরা সুন্দরীর মুখে ইন্দ্রজিৎ মায়াবী মানব সীতাপতির পুনরুজ্জীবনের কথা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন । তিনি গলার ফুলের মালা ছিঁড়ে , হাতের সোনার বালা ও কানের অলংকার সমস্ত ছুড়ে ফেললেন । অশোক গাছের মেঘনাদের প্রতিক্রিয়া তলায় অশোক ফুল যেভাবে পড়ে থাকে সেভাবেই ইন্দ্রজিতের সমস্ত অলংকার তাঁর পদতলে শোভা পাচ্ছিল । তীব্র আত্মধিক্কারে তিনি নিজেকে প্রশ্ন করেন — যখন শত্ৰুদল স্বর্ণলঙ্কা ঘিরে ফেলেছে তখন তাঁর মতো বীরের পক্ষে কি নারীদের মাঝে বিলাসমত্ত থাকা শোভা পায় ? তীব্র ক্রোধ ও আত্মগ্লানির বশবর্তী হয়ে ইন্দ্রজিৎ অনুচরদের যুদ্ধযাত্রার জন্য রথ প্রস্তুত করতে বলেন এবং শত্রুপক্ষকে বধ করে অপবাদ ঘোচানোর অঙ্গীকার করেন ।

4. ‘ যথা নাশিতে তারকে মহাসুর ; কিম্বা যথা বৃহন্নলারূপী কিরীটি , ’ — ‘ বৃহন্নলারূপী কিরীটি ‘ কে ? তার বৃত্তান্তটি বর্ণনা করো । ‘ নাশিতে তারকে মহাসুর — বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? 

Ans: কবি মধুসূদন দত্তের ‘ মেঘনাদবধ কাব্য ’ – এর প্রথম সর্গের অন্তর্গত পাঠ্য ‘ অভিষেক ’ কাব্যাংশ থেকে উপরোন্ত উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত । ‘ বৃহন্নলারূপী কিরীটি ‘ হলেন পাণ্ডবশ্রেষ্ঠ অর্জুন । তিনি দেবরাজ ইন্দ্রের দেওয়া কিরীট বা মুকুট মাথায় ধারণ করতেন বলে তাঁর আর এক নাম কিরীটি । পাঠ্যে উল্লিখিত ‘ বৃহন্নলারূপী কিরীটি ’ তথা তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন , বিরাট বৃত্তান্তের বর্ণনা রাজার গৃহে অজ্ঞাতবাসে থাকার সময় রাজকন্যা উত্তরাকে নৃত্যগীতাদি শিক্ষাদানের জন্য বৃহন্নলা ছদ্মনাম গ্রহণ করেন । সেই সময় কৌরব ভ্রাতৃবর্গ বিরাট রাজার গোধন অপহরণ করে বিরাটকে পরাজিত ও বন্দি করেন । রাজপুত্র উত্তরের সারথিরূপে এবং বৃহন্নলারূপী অর্জুন যুদ্ধে কৌরবদের সম্মুখীন হন এবং গোধনসমূহ উদ্ধার করে , শত্রুদের পরাজিত করে বিরাট রাজাকে বিপদ থেকে মুক্ত করেন । ‘ অভিষেক ’ কবিতায় কবি মধুসূদন অত্যন্ত সচেতনভাবেই দুই শ্রেষ্ঠ যোদ্ধার পরাক্রম বোঝাতে ধনুর্ধর অর্জুনের সঙ্গে ইন্দ্রজিতের সাহসিকতার তুলনা করেছেন । নাশিতে তারকে মহাসুর ‘ — মূল অর্থ → নাশিতে তারকে মহাসুর বলতে , দেবসেনাপতি কার্তিকেয়র হাতে তারকাসুর বধের প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়েছে । তারকাসুর একসময় স্বর্গরাজ্য অধিকার করে দেবলোকে ত্রাসের সঞ্চার করেছিল । পার্বতী ও মহাদেবের পুত্র দেব সেনাপতি কার্তিকেয় স্বর্গরাজ্য নিষ্কণ্টক করার জন্য তারকাসুরকে বধ করে দেবতাদের রক্ষা করেন । স্বাজাত্যবোধ ও স্বাদেশিকতায় উদ্দীপিত পিতৃভক্ত বীর ইন্দ্রজিৎকে কবি দেবসেনাপতি কার্তিকের সঙ্গে তুলনা করেছেন ।

5. সাজিলা রথীন্দ্রভ বীর – ‘ আভরণে’— ‘ রথীন্দ্রষভ ’ তে কাকে বোঝানো হয়েছে । তাঁর এই বীর আভরণে সজ্জিত হওয়াকে কাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে , ঘটনা উল্লেখ করে তা বর্ণনা করো ।

Ans: মধুসূদনের ‘ মেঘনাদবধ কাব্য ’ – এর প্রথম সর্গ থেকে গৃহীত পাঠ্য ‘ অভিষেক ’ নামক কাব্যাংশে আমরা ‘ রথীন্দ্রভ ‘ রথীন্দ্রবর্ষ কে ? শব্দটি পাই , যার অর্থ শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা । এক্ষেত্রে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিতের বীরত্ব বোঝাতে ‘ রথীন্দ্রভ ’ শব্দটি কবি ব্যবহার করেছেন । 

  ইন্দ্ৰজিৎকে শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা হিসেবে বর্ণনা করতে গিয়ে কবি তাঁকে দেবসেনাপতি কার্তিক ও বৃহন্নলারুপী তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনের বীরত্বের সাথে তুলনা করেছেন । স্ত্রী প্রমীলা – সহ নারীদের মাঝে তুলনীয় বিষয় ও বিলাসমত্ত ইন্দ্রজিৎ ছদ্মবেশী লক্ষ্মীদেবীর মুখে যখন ঘটনার উল্লেখ শুনলেন , তার প্রিয় ভাই বীরবাহু রাঘবের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন এবং পিতা রাবণ শোকাহত অবস্থাতেই যুদ্ধযাত্রার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন , তখন তিনি নিজেকে তীব্র ধিক্কার জানান । শত্রুপক্ষকে বধ করেই তিনি এই অপবাদ ঘোচাতে চান । বীরসাজে সজ্জিত ইন্দ্রজিতের পরাক্রম বোঝাতেই কবি এই দুই শ্রেষ্ঠ যোদ্ধার সাহসিকতার সঙ্গে ইন্দ্রজিতের সাহসিকতার তুলনা করেছেন । তারকাসুর স্বর্গরাজ্য অধিকার করে দেবলোকে ত্রাসের সঞ্চার করেছিল । পার্বতী ও মহাদেবের পুত্র কার্তিকেয় তাকে হত্যা করে স্বর্গরাজ্য দেবতাদের ফিরিয়ে দেন । বৃহন্নলারুপী কিরীটি অর্থাৎ অর্জুন অজ্ঞাতবাসকালে বিরাট রাজকন্যার নৃত্যগীতাদির শিক্ষক ছিলেন । সেই সময় দুর্যোধনরা বিরাটের গোধন অপহরণ করলে প্রবল পরাক্রমী অর্জুন তথা বৃহন্নলারূপী কিরীটি তা রক্ষা করেন ।

6. প্রমীলা কে ? ইয়াজিতের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন নিজের ভাষায় লেখো । 

Ans: পাঠ্য ‘ অভিষেক ‘ নামাঙ্কিত কাব্যাংশে মধুসুদন ইন্দ্রজিতের শ্রমীলার পরিচায় স্ত্রী হিসেবে প্রমীলাকে উপস্থিত করেছেন । বাল্মীকি রামায়ণে না থাকলেও আমরা কৃত্তিবাসী রামায়ণে তাকে পাই । এখানে প্রমীলা কবির নিজস্ব পরিকল্পনা । 

  প্রমোদ উদ্যানে বিলাসে মত্ত থাকাকালীন প্রভাষা – রূপী ছদ্মবেশী দেবী লক্ষ্মী মুখে রাঘবের হাতে বীরবাহুর মৃত্যু ও শোকাহত রাবণের যুদ্ধনাত্রার কথা শুনে ক্রুদ্ধ ইন্দ্রজিৎ নিজেকে ধিক্কার জানিয়ে রণসাজে সজ্জিত হয়ে যখন বীরদর্পে যুদ্ধে গমনোদ্যত , তখন প্রমীলার দেখা পাওয়া যায় । তিনি তখন স্বামীর দুটি পা ধরে কেঁদে জানতে চান , ইন্দ্ৰজিৎ তাঁকে রেখে আজ কোথায় চলেছেন ? স্বামীর বিরহে কীভাবে তিনি দিনপাত করবেন ? এ প্রসঙ্গে প্রমীলার বক্তব্য গভীর জঙ্গলে ইন্দ্রজিৎ ও প্রমীলার হাতির দল বনলতার আকর্ষণ ছিন্ন করলেও , দলপতি কথোপকথন তাকে পদতলে স্থান দেয় । তিনিও এটুকুই চান । আজ কেন ইন্দ্ৰজিৎ এই সেবিকাকে ত্যাগ করে যাচ্ছেন ? স্বামী – স্ত্রীর চিরন্তন বন্ধনের কথা মনে করিয়ে ইন্দ্রজিৎ যত দ্রুত সম্ভব ফিরে আসার অঙ্গীকার করেন । কারণ হিসেবে তিনি বলেন , প্রমীলাই তো ইন্দ্রজিতের কল্যাণী । তাঁর মঙ্গল কামনার জোরে এই যুদ্ধে ইন্দ্রজিৎ রাঘবকে অনায়াসে নাশ করতে পারবেন । প্রমোদকানন থেকে লঙ্কায় যাত্রাকালে ইন্দ্রজিৎ এভাবেই প্রমীলার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন ।

7. ‘ নমি পুত্র পিতার চরণে , করজোড়ে কহিলা ; – পিতা ও পুত্রের পরিচয় দাও । পাঠ্যাংশ অবলম্বনে পিতা ও পুত্রের কথোপকথন নিজের ভাষায় লেখো ।

Ans: মধুসূদনের ‘ মেঘনাদবধ কাবা ‘ – এর প্রথম সর্গ থেকে গৃহীত পাঠ ‘ অভিষেক ‘ কাব্যাংশের উদ্ধৃত অংশটিতে পিতা পিতা ও পুত্রের পরিচয় হলেন লঙ্কাধিপতি রাবণ এবং পুত্র হল রাবণপুত্র ইন্দ্ৰজিং । 

  পিতা রাবণকে প্রণাম জানিয়ে ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধযাত্রার অনুমতি চান । তাঁর হাতে নিশারণে নিহত রাম পুনর্জীবন লাভ করেছেন শুনে , রামের মায়া না বুঝলেও ; তিনি রাঘবকে বায়ুঅস্ত্রে ভস্ম করার কিংবা রাজপদে বেঁধে আনার সংকল্প করেন । পুত্রের কথায় পুত্রবৎসল এক পিতার হৃদয়ের প্রকৃত স্বরূপটি ফুটে ওঠে । সেখানে ধ্বনিত হয় স্নেহ – হাহাকার ও অসহায়তা । রক্ষোকুলের শ্রেষ্ঠ সম্পদটিকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাতে তাঁর মন চায় না । তিনি পিতা – পুত্রের কথোপকথন চান না স্বর্ণলঙ্কার শেষ কুলপ্রদীপটি নির্বাপিত হোক । কারণ স্বয়ং বিধাতাও রাবণের প্রতি বিরূপ । না – হলে শিলা যেমন জলে ভাসে না , তেমনই মৃত কখনও পুনর্জীবন পায় না । অথচ এক্ষেত্রে তাই ঘটেছে । কিন্তু পৌরুষ ও সৎসাহসে উদ্দীপ্ত ইন্দ্ৰজিৎ অগ্নিদেবকে রুষ্ট করতে কিংবা পরাজিত ইন্দ্রদেবের হাসির পাত্র হতে পারেন না । তাই তিনি দ্বিতীয়বার রাঘবকে পরাজিত করার জন্য পিতার আব্বা চান । রাবণের অন্তর ক্ষতবিক্ষত মানসিক টানাপোড়েনে তিনি আকুল – অস্থির । তাঁর দৃষ্টির সামনে ভূপতিত পর্বতসম কুম্ভকর্ণ । তিনি প্রাণাধিক প্রিয় ‘ বীরমণি ‘ – কে প্রথমে ইস্টদেবের পূজা ও তারপর নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ করে পরদিন সকালে যুদ্ধযাত্রা করতে বলেন । কিন্তু দ্বিধা – দ্বন্দ্ব প্রশমিত করে যথাবিধি মেনে সেনাপতি পদে ইন্দ্রজিতের অভিষেক ঘটান । এখানে এক ভাগ্যবিড়ম্বিত শোকাহত ও নিঃসঙ্গ পিতার পাশে , সাহস – অহংকার আর বীরধর্মে উজ্জীবিত পুত্রের আশ্চর্য ছবি তুলে ধরেছেন কবি মধুসুদন । 

8. পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে ইন্দ্রজিতের চরিত্র আলোচনা করো , অথবা , ‘ অভিষেক করিলা কুমারে — পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে ‘ কুমার ‘ – এর চরিত্রবিশ্লেষণ করো । 

Ans: আমাদের পাঠ্য কাব্যাংশ ‘ অভিষেক ‘ – এ কেন্দ্রীয় চরিত্র মেঘনাদ বা ইন্দ্রজিৎ । পাঠ্যাংশের স্বল্প পরিসরে তাঁর চরিত্রের বেশ কিছু দিক ফুটে ওঠে । 

বীরত্ব : বীর ইন্দ্রজিৎ নিজের বাহুবলের ওপর যথেষ্ট আস্থাশীল । বীরবাহুর মৃত্যু ও পিতার যুদ্ধযাত্রার কথা শুনে তাঁর বীরসত্তা জেগে ওঠে । বীরোচিত সাজসজ্জা করে তিনি লঙ্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন । 

আত্মপ্রত্যয় : ইন্দ্ৰজিৎ আগে দু – বার রামচন্দ্রকে পরাজিত করেছেন , এমনকি তাঁকে নিহতও করেছেন । তবু কোনো এক মায়া বলে আবার জীবন ফিরে পেয়েছেন রাম । কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি যখন রামচন্দ্রকে বন্দি করে রাবণের পদতলে নিয়ে আসার কথা বলেন , তখন তাঁর মধ্যে আত্মপ্রত্যয় ও দৃঢ়তা লক্ষ করা যায় । 

কর্তব্যবোধ প্রমোদকাননে বিলাসে মত্ত থাকাকালীন প্রভাষা – রূপী লক্ষ্মীর কাছে লঙ্কার দুর্দিন এবং পিতার যুদ্ধযাত্রার কথা শোনামাত্রই ইন্দ্রজিৎ লঙ্কায় উপস্থিত হন । যোগ্য সন্তান থাকা সত্ত্বেও পিতার যুদ্ধযাত্রাকে তিনি নিজের কলঙ্ক বলেই মনে করেন । 

দেশপ্রেম ও আত্মসমালোচনা : স্বর্ণলঙ্কা শত্রুসেনা দ্বারা আক্রান্ত অথচ তিনি প্রমোদকাননে বিলাসে মত্ত এ কথা জেনে ইন্দ্রজিৎ নিজেকে ধিক্কার দেন । এর থেকে তাঁর দেশপ্রেমের যেমন পরিচয় পাওয়া যায় , তেমনই বোঝা যায় আত্মপ্রত্যয়ী প্রয়োজনে নিজের সমালোচনা করতেও তিনি পিছপা নন । 

→ পত্নীপ্রেম স্ত্রী প্রমীলার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তাকে আশ্বস্ত করে ইন্দ্রজিৎ বলেন ভালোবাসার যে , দৃঢ় বন্ধনে তাঁরা আবদ্ধ তা ছিন্ন হওয়ার নয় । এ তাঁর পত্নীপ্রেমেরই পরিচয় । এভাবেই মহাকাব্যের খলনায়ক মধুসূদনের লিখনকৌশলে হয়ে উঠেছে । কবির পছন্দের নায়ক ।

9. ‘ তবে কেন তুমি , গুণনিধি , ত্যজ কি কিরীরে আজি ? ‘ — ‘ কিঙ্করী ’ কে ? তাঁর চরিত্রবৈশিষ্ট্য আলোচনা করো । 

Ans: মধুসূদনের ‘ অভিষেক ‘ কাব্যাংশে কিঙ্করী হলেন প্রমীলা ।। ‘ কিঙ্করী ‘ শব্দের অর্থ দাসী । স্বামীর বিরহে কাতর । এক স্ত্রীর আকুতি প্রমীলার এই উক্তির মধ্য দিয়ে বিনীর পরিচয় প্রতিফলিত হয়েছে ।। চরিত্ৰবৈশিষ্ট্য প্রমীলা রাবণের পুত্রবধূ মেঘনাদের স্ত্রী । মহাকাব্যে চিত্রিত প্রমীলা চরিত্র কবির কল্পনাপ্রসূত । মূল বাল্মীকি রামায়ণে এই চরিত্র সম্পর্কে উল্লেখ না থাকলেও কৃত্তিবাসী রামায়ণে এই চরিত্রের উল্লেখ আছে । প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সাহিত্যের সংমিশ্রণে মধুসুদন তাঁর এই মানসকন্যাকে অঙ্কন করেছেন । যা বাংলা সাহিত্যে বিরল । 

পতিবিরহে কাতর : পাঠ্যে আমরা প্রমীলাকে পাই এমন এক নারী হিসেবে যে যুদ্ধগামী পতিকে বিদায় দিতে অনিচ্ছুক । একজন কুলবধূর পক্ষে তাই স্বাভাবিক । তিনি পতিপ্রেমে মুগ্ধ , তাই সাময়িক পতিবিরহ যে তার পক্ষে অসহনীয় তার উল্লেখ তাঁর উক্তিতেই পাওয়া যায় ।

 যোগ্য পত্নী : প্রমীলা মেঘনাদের সুযোগ্য পত্নী । সর্বজয়ী প্রেমে সে মেঘনাদকে জয় করেছেন । মেঘনাদের উক্তিতেই তা স্পষ্ট , ইন্দ্রজিতে জিতি তুমি , সতি , / বেঁধেছ যে দৃঢ় বাঁধে , কে পারে খুলিতে / সে বাঁধে ? ‘ — এ কেবল মুখের কথা নয় , এ এক পরমসত্য । নারী যে বিচিত্র রূপ ধরতে পারে , তা প্রমীলার মধ্যে দেখা যায় । যেভাবে তিনি দেব – দৈত্য – নর – ত্রাস রণরঙ্গে মত্ত বীরকে নিজের প্রেমে আবদ্ধ করেছেন তা তুলনাহীন ।

10. রাবণ চরিত্র আলোচনা করো ।

Ans: মধুসূদনের রাবণ এক ভাগ্যবিড়ম্বিত নায়ক । পাঠ্যাংশে আমরা তাঁকে পাই একজন স্নেহশীল পিতা , দৈবাহত রাজা , দায়িত্ববান শাসক , ভ্রাতৃপ্রেমী অগ্রজ , সমরবিশেষজ্ঞ এবং ধর্মভীরু হিসেবে । 

স্নেহশীল পিতা : বীরবাহুর মৃত্যুতে শোক এবং ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে পাঠাতে না চাওয়া লঙ্কেশ্বর রাবণের অকৃত্রিম পুত্রস্নেহের পরিচায়ক । 

দৈবাহত রাজা : রাবণের রণসজ্জার মধ্যে তাঁর তেজোদৃপ্ত রাজসিক ভাব যথেষ্ট প্রকাশিত হলেও এই রাজাকেই আমরা নিয়তির কাছে অসহায় ভাবে আত্মসমর্পণ করতে দেখি । তিনি ‘ বিধি বাম ’ বলে ইন্দ্রজিতের কাছে অসহায়তা প্রকাশ করেন । 

দায়িত্ববান শাসক : কুম্ভকর্ণ ও বীরবাহুর মৃত্যুতে লঙ্কাপুরী যখন বীরশূন্য তখন দেশকে বাঁচাতে রাজা রাবণ স্বয়ং যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নেয় । তাঁর এই উদ্যোগ রাজা হিসেবে তাঁর দায়িত্বকেই প্রকট করে । 

স্রাতৃপ্রেমী অগ্রজ : দেশের সুরক্ষার স্বার্থে রাবণ কুম্ভকর্ণকে অকালে জাগিয়ে যুদ্ধে পাঠান এবং যুদ্ধে কুম্ভকর্ণের মৃত্যু হয় । এজন্য তিনি শুধু শোকগ্রস্তই হন না বরং নিজেকে দায়ীও মনে করেন । 

সমর বিশেষজ্ঞ লঙ্কেশ্বর দেশের স্বার্থে যোগ্য বীর ইন্দ্রজিৎকে সেনাপতি পদে বরণ করে নেন । তবে তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে তিনি ইন্দ্রজিৎকে রাতে যুদ্ধে যেতে নিষেধ করেন । 

ধর্মভীরু : ইন্দ্ৰজিৎকে সেনাপতি পদে অভিষিক্ত করার সময় রাবণ শাস্ত্রবিধি মেনেই তা করেন । এমনকি যুদ্ধে যাওয়ার আগে তিনি ইন্দ্রজিৎকে ইষ্টদেবতার পূজা করার উপদেশ দেন । এ তাঁর ধর্মভীরুতারই প্রকাশ ।

11. ‘ যেন উড়িলা মৈনাক শৈল ‘ — পৌরাণিক আখ্যানটি লেখো । পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে ইন্দ্রজিতের লঙ্কাযাত্রার বর্ণনা দাও । 

Ans: পাঠ্য ‘ অভিষেক ‘ কাব্যাংশে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত উত্ত প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন । কৈলাসের দক্ষিণে অবস্থিত মৈনাক পর্বত হিমালয় ও মেনকার পুত্র । পুরাণ অনুসারে পূর্বকালে পর্বতদের পাখা থাকত । পাখির মতো তাঁরা পৌরাণিক আখ্যান চারদিকে আকাশপথে ভ্রমণ করতে পারতেন । দেবতা ও ঋষিরা এই পর্বতদের সর্বদা ভয় করতেন । ইন্দ্ৰ একবার ক্রুদ্ধ হয়ে সব পর্বতের পক্ষচ্ছেদ করেছিলেন । কিন্তু মৈনাক পবনদেবের সাহায্যে সাগরে আশ্রয় নিয়ে ইন্দ্রের আক্রমণ থেকে রক্ষা পান । হনুমানের সাগর পার হওয়ার সময় পবনদেবের উপকারের কথা স্মরণ করে তাঁর বিশ্রামের জন্য মৈনাক পর্বত জল থেকে উঠে এসে হনুমানকে তাঁর উপর বিশ্রাম নিতে বলেন । হনুমান তাঁকে স্পর্শ করে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে যান । রামায়ণে আমরা এই কাহিনির উল্লেখ পাই । → প্রভাষা ধাত্রীর ছদ্মবেশধারী লক্ষ্মীর কাছে স্বর্ণলঙ্কার ঘোরতর দুর্দিনের কথা শুনে , ইন্দ্রজিতের প্রমোদকানন ত্যাগ করে স্বর্ণলঙ্কার উদ্দেশে যাত্রাকে ইন্দ্রজিতের লঙ্কাযাত্রা কবি মৈনাক শৈলের হৈমপাখা বিস্তার করে সমস্ত আকাশময় ঘুরে বেড়ানোর সঙ্গে তুলনা করেছেন । ক্রুদ্ধ ইন্দ্রজিতের ধনুকের টংকার যেন মেঘমাঝে গরুড়ের প্রবল গর্জন । ইন্দ্রজিতের এই প্রবল প্রতাপে স্বর্ণলঙ্কাসহ সমুদ্র বারবার কেঁপে উঠতে থাকে । 

12. “ কি ছার সে নর , তারে ডরাও আপনি , / রাজেন্দ্র ? থাকিতে দাস , যদি যাও রণে — ‘ রাজেন্দ্র ‘ কে ? তাঁর প্রতি বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ আলোচনা করো । 

Ans: আমাদের পাঠ্য মধুসূদনের ‘ অভিষেক ’ নামক কাব্যাংশে ‘ রাজেন্দ্র ’ বলতে লঙ্কাধিপতি রাবণকে বোঝানো হয়েছে । অসুরারি রিপু ইন্দ্রজিৎ তাঁর পিতাকে এ নামে অভিহিত করেছেন । 

  বক্তার প্রশ্নোদৃত মন্তব্যের কারণ প্রভাষার ছদ্মবেশধারী লক্ষ্মীর মুখে রামের হাতে বীরবাহুর মৃত্যু এবং লঙ্কার এই ঘোর দুর্দিনে শোকাহত রাবণের যুদ্ধযাত্রার কথা শুনে নিজেকে । তীব্র ধিক্কার জানিয়ে প্রমোদকানন ত্যাগ করে ইন্দ্রজিৎ লঙ্কায় আসেন । রামের মায়া না বুঝলেও ইন্দ্রজিৎ তাঁকে ভস্ম করার কিংবা বেঁধে আনার অঙ্গীকার করে পিতার কাছে । যুদ্ধের অনুমতি চান । বিধাতার কাছে পরাজিত পুত্রবৎসল পিতা রাবণ লঙ্কার রাজবংশের শেষ প্রদীপকে নির্বাপিত করতে চান না । তাই তিনি ইন্দ্ৰজিৎকে যুদ্ধের অনুমতি দিতে নারাজ । কিন্তু পৌরুষের মাহাত্ম্যে উজ্জ্বল দেবরাজ ইন্দ্রকে যিনি পরাস্ত করেছেন তিনি । যুদ্ধে না – গিয়ে পিতাকে পাঠালে ইন্দ্র হাসবেন এবং অগ্নি রাগ করবেন । তাই পিতার ভেঙে পড়া মানসিকতা ও নিজের বীরদর্পকে উজ্জীবিত করার জন্য গভীর আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে ইন্দ্রজিতের এমন মন্তব্য ।

13. ‘ তারে ডরাও আপনি , —বক্তা ও শ্রোতা কারা ? বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ কী ? শ্রোতাকে বস্তুা কী বলে আশ্বস্ত করেন ? 

Ans: মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘ অভিষেক ‘ কাব্যাংশ থেকে আলোচ্য প্রশ্নোদৃত অংশটি গৃহীত । উক্ত অংশে বক্তা হলেন রাবণতনয় ইন্দ্রজিৎ এবং শ্রোতা হলেন রক্ষরাজ রাবণ । 

প্রভাষার ছদ্মবেশধারী লক্ষ্মীর কাছে ইন্দ্রজিৎ স্বর্ণলঙ্কার ঘোরতর দুর্দিনের সংবাদ – সহ আর একটি অবিশ্বাস্য সংবাদ পেলেন , বস্তার মন্তব্যের কারণ পরাজিত ও মরণোন্মুখ রামচন্দ্র পুনরায় বেঁচে উঠে , ভাই বীরবাহুকে হত্যা করেছেন । ক্লোধে প্রমোদকানন ত্যাগ করে ইন্দ্ৰজিৎ স্বর্ণলঙ্কায় এসে উপস্থিত হলেন এবং পিতাকে আশ্বস্ত করে স্বয়ং শত্রুনিধনের উদ্দেশ্যে যুদ্ধযাত্রার বাসনা প্রকাশ করেন । 

  পুত্রবৎসল পিতা রাবণের পুত্রকে যুদ্ধে পাঠাতে মন সায় দেয় না । বক্তার আশ্বস্ত করা কথা । ইন্দ্রজিৎ রাবণকে আশ্বস্ত করে বলেন — রামচন্দ্র একজন সামান্য মানুষ , তাই তাকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ তিনি দেখেন না । ইন্দ্রজিতের মতো সেবক থাকতে পিতা যদি যুদ্ধে যান তবে তা কলঙ্কের সমান । এই ঘটনায় মেঘবাহন ইন্দ্র হাসবেন , আর অগ্নিদেবও ক্রোধান্বিত হবেন । পর পর দু – বার শত্রুকুলকে মৃতপ্রায় করে যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী হয়েছেন ইন্দ্রজিৎ । এবার তিনি দেখতে চান কোন ওষুধের বলে রাঘব পুনরায় প্রাণ ফিরে পায় । এই বিশ্বাস নিয়ে তিনি রাবণরাজাকে আশ্বস্ত করে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি চাইলেন । 

14. ‘ ঘুচাব ও অপবাদ , বধি রিপুকুলে— ‘ ও অপবাদ ’ বলতে বক্তা কোন অপবাদের কথা বলেছেন ? সেই অপবাদ ঘোচাতে বক্তা কী করেছিলেন ?

Ans: মাইকেল মধুসূদনের ‘ অভিষেক ’ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটির * ও অপবাদ বক্তা রক্ষোকুলের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা ইন্দ্রজিং । তিনি প্রমোদকাননে বিলাসব্যসনে মগ্ন অবস্থায় প্রভাষা রূপী লক্ষ্মীর কাছে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ এবং পিতা রাবণের যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতির কথা শোনেন । লঙ্কার এমন ঘোর দুর্দিনে নিজের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট ইন্দ্রজিৎ আত্মধিক্কার দেন । সেইসঙ্গে যুদ্ধে শত্রুকুলের আমূল বিনাশ ঘটিয়ে সমস্ত অপবাদ মুছে ফেলার সংকল্প করেন । 

  অপবাদ ঘোচাতে বক্তা যা করেছিলেন → ইন্দ্রজিতের নির্দেশে দ্রুত গগনচারী রথ এসে উপস্থিত হয় । তিনি রণসাজে সজ্জিত হন । তাঁর যোদ্ধা রুপ শুধু দেবসেনাপতি কার্তিক এবং বৃহন্নলারূপী অর্জুনের সঙ্গে তুলনীয় । এ সময় স্ত্রী প্রমীলা তাঁর পথ রোধ করে দাঁড়ালে ইন্দ্রজিতের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ভালোবাসা আর আত্মবিশ্বাসের উদ্দীপ্ত বাণী । তারপর প্রাণাধিক প্রিয় ‘ বিধুমুখী ‘ – র কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি আকাশপথে লঙ্কাপুরীতে এসে পৌঁছোন । তাঁর ধনুকের ছিলার টংকারে সমগ্র জলধিসহ লঙ্কা কেঁপে ওঠে । ইন্দ্রজিৎকে দেখে সমস্ত রাক্ষসসৈন্যদল সাহস ও অহংকারে রণহুংকার দিয়ে ওঠে । মধুসুদনের ইন্দ্রজিতের মধ্যে সাহস , সততা এবং বিনয়ের এক আশ্চর্য সংমিশ্রণ দেখা যায় । এই সমস্ত গুণের সাহায্যেই তিনি অসহায় পিতাকে আশ্বস্ত করেন । আর দ্বিতীয়বার রাঘবকে বধ করার জন্য রাবণের কাছে অনুমতি চান । পিতা রাবণ প্রথমে ইষ্টদেবতার পূজা সাঙ্গ করে পরদিন সকালে তাঁকে যুদ্ধযাত্রার পরামর্শ দেন এবং যথানিয়মে ইন্দ্রজিৎকে সেনাপতি পদে বরণ করে নেন ।

ভাগ ০২

 
1. অভিষেক কবিতা অবলম্বনে ইন্দ্রজিৎ চরিত্রের পরিচয় দাও।
 
উত্তরঃ
ভূমিকা : বাল্মীকি বা কৃত্তিবাসের মতাে ইন্দ্রজিৎকে দেখেননি মধুসূদন। ইন্দ্রজিৎ কবির মানসপুত্র। কবি এই চরিত্র সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছেন তার মধ্যে দুটি বক্তব্য এই চরিত্রের গুরুত্বকে চিনিয়ে দেয়। (ক) ইন্দ্রজিৎ হলেন Glorious son of Ravana। (2) He was a noble fellow.
দুর্জন সাহস : প্রমােদ উদ্যানে ধাত্রী প্রভাসার ছদ্মবেশে রাজলক্ষ্মীর মুখে মহাবলী বীরবাহুর মৃত্যু সংবাদ শুনে তিনি অবাক হন। তৎক্ষণাৎ যুদ্ধে যাওয়ার সংকল্প গ্রহণ করেন। গভীর সাহসের সঙ্গে রামচন্দ্রকে হত্যা করার কথা ভাবেন।
অগাধ পত্নী প্রেম : প্রমীলার সঙ্গে ইন্দ্রজিতের দাম্পত্য সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। প্রমীলা ইন্দ্রজিতকে ছাড়তে না চাইলে ইন্দ্রজিৎ প্রমীলাকে বলেছে তার দৃঢ় বন্ধন থেকে ছিন্ন করার ক্ষমতা কারাের নেই।
সরল পিতৃভক্তি ও কর্তব্য বােধ : ইন্দ্রজিৎ শুধুমাত্র পিতার প্রতি ভালােবাসা দেখাননি, তার কর্তব্য সম্পর্কে সে সজাগ তাই পিতাকে বলেছে পুত্র বেঁচে থাকতে পিতার যুদ্ধ করতে যাওয়া কলঙ্কের কথা।
দেশের প্রতি ভালােবাসা : মধুসূদন দত্তের ইন্দ্রজিৎ লঙ্কাকে গভীরভাবে ভালােবাসেন। তাই লঙ্কার দুর্দিনে লঙ্কাকে মুক্ত করার সংকল্প সে গ্রহণ করেছে।
আত্মবিশ্বাস : ইন্দ্রজিৎ চরিত্রের সব থেকে বড়াে বৈশিষ্ট্য তার আত্মবিশ্বাস। তাই ছদ্মবেশী লক্ষ্মীর কাছে লঙ্কার সর্বনাশ শুনে সে বলেছে সমূলে শত্রুকে বিনাশ। করবে।
মূল্যায়ন : মধুসূদনের কাছে ইন্দ্রজিৎ ছিলেন favourite। তাই তার বীরত্ব ও বংশ মর্যাদাকে কৃতিত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। ইন্দ্রজিৎকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চরিত্র হিসাবে গড়ে তুলেছেন তিনি।

2. অভিষেক কবিতায় প্রমীলার চরিত্রটি উল্লেখ করাে।
 
উত্তরঃ
ভূমিকা : সীতা চরিত্র পরিকল্পনায় মধুসূদন দত্ত আদি কবি বাল্মীকিকে অনুসরণ করেছে কিন্তু প্রমীলা চরিত্র নির্মাণে কবি পাশ্চাত্য নারীকে তুলে ধরেছেন। সীতা যেমন বাল্মীকির মানস দুহিতা। প্রমীলা তেমন মধু কবির মানস প্রতিমা।
অসামান্য চরিত্র : নারী সম্পর্কিত চরিত্রগুলিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও তৎকালীন সময়ের প্রেক্ষাপটে নির্মাণ করেছেন। প্রমীলার মতাে বীরাঙ্গনা চরিত্র শক্তি ও সুন্দরতার সমন্বয়। তাই এই চরিত্রটি অসামান্য।
সুযােগ্য পত্নী : প্রমীলা ইন্দ্রজিতের সুযােগ্য পত্নী। ইন্দ্রজয়ী ইন্দ্রজিৎকে তিনি জয় করেছেন প্রেমের পবিত্র পরশে। ইন্দ্রজিৎ তাই বলেছেন, প্রমীলা তাকে শক্ত ভাবে ধরে রেখেছেন।
বিরহীনি নায়িকা : সাময়িক পতি বিরােহ প্রমীলার পক্ষে অসহনীয় অভিষেক নামাঙ্কিত এই কবিতায় দেখা যায়। প্রমীলার বিপুল শুন্যতা বােধ। স্বামী যুদ্ধে যেতে চাইলে প্রমীলা অস্থির হয়ে ওঠে।
পতি প্রেমে মুগ্ধা : নারী যে স্বামীকে গভীরভাবে ভালােবাসে তার প্রমাণ হল প্রমীলা। তাই ইন্দ্রজিতের মতাে শক্তিশালী বীরকে তিনি প্রেমের আবেশে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
দাম্পত্য প্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত : প্রমােদ কাননে ইন্দ্রজিৎ প্রমীলার হাস্য উজ্জ্বলময় দাম্পত্য প্রেমের যে ছবি আমাদের মধ্যে ভেসে ওঠে তাতে প্রমাণিত হয় তারা দাম্পত্য প্রেমের এক সুখী দম্পতি।
মূল্যায়ন : অভিষেক কবিতার সামান্য পরিসরে প্রমীলা চরিত্রটি অসামান্য। স্বামীর প্রতি ভালােবাসা ও চিরন্তনতায় প্রমীলা অসাধারণ।

পি ডি এফ (PDF) – এর মাধ্যমে কিছু গুরুত্বপূর্ন্য প্রশ্ন উত্তর

Model Test – মডেল টেস্ট

Loading

Leave a Reply

error: