Skip to content

পথের দাবী : প্রশ্ন-উত্তর দশম শ্রেণী বাংলা

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন –উত্তর (ভাগ – ০১)

১। কে পুলিশস্টেশনে বসে থাকা বাঙালিদের তদন্ত করেছিলেন ?

উত্তর: পুলিশস্টেশনের সামনের হলঘরে, কিছু বাঙালি তাদের জিনিসপত্র নিয়ে বসেছিলেন। জগদীশবাবু তাদের সকলের টিনের তোরঙ্গ ও ছোটো- বড়ো পুটুলি খুলে তদন্ত করছিলেন ।

২। কাকে, কী সন্দেহে আটকে রাখা হয়েছিল ?

উত্তর: পুলিশস্টেশনের সামনের হলঘরে যারা বসেছিল, তাদের মধ্য থেকেই একজনকে পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে আটকে রাখা হয়েছিল ।

৩। সব্যসাচীর চোখের দৃষ্টি দেখে কী মনে হয়েছিল ?

উত্তর: সব্যসাচীর গভীর জলাশয়ের মতো দৃষ্টির সামনে কোনোরকম খেলা বা চালাকি চলবে না। এই দৃষ্টির গভীরে যে ক্ষীণ প্রাণশক্তি লুকোনো আছে, মৃত্যুও সেখানে প্রবেশ করতে ভয় পায় ।

৪। গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষার বাহার ও পারিপাট্য দেখে নিমাইবাবু কী বলেছিলেন ?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রকে দেখে নিমাইবাবু বলেছিলেন, বেশভূষা দেখে মনে হচ্ছে লোকটির স্বাস্থ্য গেলেও, তার শখ ষোলো আনাই বজায় আছে ।

৫। গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাঁক ও পকেট থেকে কী বার হয়েছিল ?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাঁক থেকে একটি টাকা আর গন্ডা-ছয়েক পয়সা এবং পকেট থেকে একটা লোহার কম্পাস, একটা কাঠের ফুটবুল, কয়েকটা বিড়ি, একটা দেশলাই এবং গাঁজার একটা কলকে বার হয়েছিল ।

৬। “নিমাইবাবু হাসিয়া কহিলেন”-নিমাইবাবু হেসে কী বললেন ?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্র কতটা সদাশয় ব্যক্তি যে অন্যের কাজে লাগবে বলে গাঁজার কলকেটা কুড়িয়ে পকেটে রেখেছেন-নিমাইবাবু হেসে এ কথাই বলতে চেয়েছিলেন ।

৭। ‘তুমি গাঁজা খাও?”-কে, কাকে, কেন এই প্রশ্ন করেছিলেন ?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের পকেট থেকে একটি গাঁজার কলকে পাওয়া গিয়েছিল। তাই নিমাইবাবু তাকে উক্ত প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করেছিলেন ।

৮। বড়োবাবু হাসিতে লাগিলেন।” বড়োবাবুর হাসির কারণ কী ?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের অদ্ভুত পোশাক এবং আচরণ দেখে জগদীশবাবু তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে বড়োবাবু হাসতে লাগলেন।

৯। “এই জানোয়ারটাকে ওয়াচ করার দরকার নেই, বড়োবাবু।’ বস্তার এমন উক্তির কারণ কী ?

উত্তর: সব্যসাচী সন্দেহে অদ্ভুত পোশাক পরা গিরীশ মহাপাত্রকে থানায় আটকে রাখা হয়েছিল। তার চুলে লাগানো লেবুর তেলের গন্ধে থানাসুস্থ লোকের মাথা ধরার উপক্রম হয়েছিল। এমন লোক যে সব্যসাচী হতে পারেন না-এ কথা ভেবেই তাকে জগদীশবাবু ছেড়ে দিতে বলেছিলেন।

১০। তলওয়ারকর অপূর্বকে কী জিজ্ঞাসা করেছিল ?

উত্তর: অপূর্বকে বাড়ি ফিরে অত্যন্ত অন্যমনষ্ক দেখে তলওয়ারকর জিজ্ঞাসা করেছিল সে তার বাড়ি থেকে কোনো চিঠি পেয়েছে কি না এবং তার বাড়ির সবাই ভালো আছে কি না ।

১১। “অফিসের একজন ব্রাহ্মণ পিয়াদা এই সকল বহিয়া আনিত।” -কী বয়ে আনার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: রামদাসের স্ত্রীর তৈরি করে দেওয়া খাবার অফিসের ব্রাহ্মণ পেয়াদা নিয়ে আসত ।

১২। অপূর্বর ঘরে চুরি হওয়ার পর ক্রিশ্চান মেয়েটি কী করেছিল ?

উত্তর: অপূর্বর ঘরে চুরি হওয়ার পর ক্রিশ্চান মেয়েটি অবশিষ্ট জিনিসপত্র গুছিয়ে দিয়েছিল এবং কী চুরি গেছে আর কী যায়নি তার ফর্দ বানিয়েছিল।

১৩। পুলিশে চুরির ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে গিয়ে অপূর্ব কী দেখল ?

উত্তর: অপূর্ব চুরির ব্যাপারে থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে দেখল সেখানকার পুলিশরা পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক ভেবে অন্য একজনকে ধরেছেন। যার অদ্ভুত সাজপোশাক নিয়েই পুলিশস্টেশনে তামাশা চলছে ।

১৪। অপূর্ব কোন্ ঘটনার প্রতিবাদ করেছিল ?

উত্তর: কোনোরকম দোষ না থাকা সত্ত্বেও কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে অপূর্বকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দিয়েছিল। সে এই অন্যায় ঘটনারই প্রতিবাদ করেছিল।

১৫। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় অপূর্বকে কারা কীভাবে হেনস্থা করেছিল ?

উত্তর: অপূর্ব অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে এক সাহেব স্টেশনমাস্টার অপূর্ব ভারতীয় বলে তার সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করে তাকে স্টেশন থেকে কুকুরের মতো দূর করে দেয় ।

১৬। কী কারণে রামদাসের মুখ রাগে আরস্ত হয়ে উঠল ?

উত্তর: অপূর্বর মুখে ফিরিঙ্গিদের তাকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দেওয়া এবং সাহেব স্টেশনমাস্টারের কাছে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা শুনে রামদাসের মুখ রাগে আরক্ত হয়ে উঠল ।

১৭। কী শুনে রামদাসের চোখ ছলছল করে উঠল ?

উত্তর: সাহেবদের কাছে অপূর্বর লাঞ্ছিত হওয়া সত্ত্বেও হিন্দুস্থানের লোকেরা কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি, বরং লাঘির চোটে অপূর্বর হাড়- পাঁজরা ভাঙেনি শুনে খুশি হয়েছিল। এ কথায় রামদাসের চোখ ছলছল করে উঠল ।

১৮। লোকটি কাশিতে কাশিতে আসিল।”- লোকটি কে ?

উত্তর: লোকটি হল পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক।

১৯। অনুমান কতকটা তাই।”-বস্তার কী অনুমান ?

উত্তর: অপূর্ব সন্দেহ করেছিল তেওয়ারিই তার ঘরে চুরি করেছে। বক্তা রামদাসও এই অনুমান করেছিল।

২০। এসব কথা বলায় দুঃখ আছে।”-কোন্ কথা বলায় দুঃখ আছে বলে বস্তার ধারণা ?

উত্তর: অপূর্ব রেঙ্গুনে এসে ভারতীয় বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বস্তা রামদাস মনে করেছিল অপূর্ব সব্যসাচীর কথা বললে ইংরেজদের রোষে পড়তে পারে ।

২১। বড়োসাহেব কী বলার জন্য টেলিগ্রাম নিয়ে অপূর্বর কাছে এসেছিল ?

উত্তর: বড়োসাহেব অপূর্বকে বলেছিলেন ভামোর অফিসে বিশৃঙ্খল অবস্থা। ম্যান্ডালে, শোএবো, মিথিলা এবং প্রোম সব অফিসেই গোলযোগ হচ্ছে। তাই অপূর্ব যেন সব অফিসগুলো একবার নিজে গিয়ে দেখে আসে ।

২২। অপূর্ব ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করার সময় কাকে দেখে কী জিজ্ঞাসা করল ?

উত্তর: ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করার সময় গিরীশ মহাপাত্রকে দেখে অপূর্ব তাকে জিজ্ঞাসা করল, সে তাকে চিনতে পারছে কিনা এবং সে কোথায় যাচ্ছে ।

২৩। দ্বিতীয়বার সাক্ষাতে অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে কী বলেছিল ?

উত্তর: দ্বিতীয়বার সাক্ষাতে অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে বলেছিল যে, সে পুলিশের লোক নয়। সেদিন শুধু তামাশা দেখবার জন্য সে পুলিশস্টেশনে গিয়েছিল ।

২৪। ট্রেনের মধ্যে কী কারণে অপূর্বর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেছিল?

উত্তর: রাতে অপূর্ব শোয়ার পরে প্রায় বার-তিনেক পুলিশের লোকরা তার নাম, ঠিকানা লিখে নেওয়ার জন্য তাকে জাগিয়ে বিরক্ত করায় অপূর্বর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেছিল ।

২৫। আমরও তো তাই বিশ্বাস।”-বস্তার কী বিশ্বাস?

‘উত্তর: গিরীশ মহাপাত্র অপূর্বকে বলেছিল ললাটের লেখা কখনও খণ্ডন করা যায় না। অপূর্বও এই কথা বিশ্বাস করে বলে জানায় ।

২৬। “ইহা যে কতবড়ো ভ্রম তাহা কয়েকটা স্টেশন পরেই সে অনুভব করিল।”-‘ভ্রম’-টি কী?

উত্তর: অপূর্ব ভেবেছিল যে প্রথম শ্রেণির যাত্রী বলে কেউ তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে না। কয়েকটি স্টেশন পরেই তার এই ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয় ।

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন –উত্তর (ভাগ – ০২)

১। ‘বাবুটির স্বাস্থ গেছে কিন্তু শখ ষোলোআনায় বজায় আছে’ – কে কার সম্পকে এই কথা বলেছন? তার সম্পর্ক বক্তার এরূপ উক্তির কারণ কি?

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবি’ রচনাংশে বাংলার দক্ষ পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু, বিপ্লবী সবসাচী মল্লিক সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্র সম্পর্কে একথা বলছেন।
গিরিশ মহাপাত্রের গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি, তার বুক থেকে একটি রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। পরণে বিলাতি মিলের কালো মখমল পড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি, পায়ে সবুজ রঙের ফুলমোজা, বার্ণিশ করা পাম্পসু, হাতে হরিণের শিং -এর হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি। রোগা ক্ষীন দেহি মাথুষটির এই পোশাকের বাহার দেখেই নিমাইবাবু আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।


২। “কি রূপ সদাশয় ব্যক্তি ইনি” – কার প্রতি কার এই উক্তি? এই উক্তির কারণ কি?

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবি’ রচনাংশে বিপ্লবী সবসাচী মল্লিক সন্দেহে ধৃত গিরিশ মহাপাত্রের প্রতি বাংলার দক্ষ পুলিশ অফিসার নিমাইবাবুর এই উক্তি।
গিরিশ মহাপাত্রের জিনিসপত্র তল্লাশি করে একটি গাঁজার কলকে পাওয়া যায়। কিন্তু তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে কলকেটি পথে কুড়িয়ে পেয়েছে। যদি কখনও কারও কাজে লাগে তাদের দেওয়ার জন্য সে নিজের কাছে কলকেটি রেখেছে। তার এই অদ্ভুত পরোপকারের ইচ্ছার জন্য নিমহিবাবু তাকে সদাশয় ব্যক্তি বলেন।


৩। ‘যাঁকে তিনি দেশের টাকায় দেশের লোক দিয়ে শিকারের মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছেন তিনি ঢের বেশি আমার আপনার’ – একথা কে কাকে বলেছেণ ? এই উক্তির কারণ কি?

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবি’ রচনাংশে অপূর্ব, রামদাস তলওয়ারকরকে একথা বলেছেন।
পুলিশের কর্তা নিমাইবাবু ছিলেন অপূর্বর আত্মীয়, অপূব তাঁকে কাকা বলে ডাকে। আর এটাও জানে যে তিনি তার শুভাকাঙ্খী। কিন্তু যাঁকে ধরার জন্য পুলিশর কর্তা এত চেষ্টা করেছেন তিনি আসলে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক। এই সব্যসাচীর দেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশের জন্য তাঁর স্বার্থত্যাগ অপূর্বকে মুগ্ধ করেছিল। অপূর্ব নিজেও স্বদেশকে ভালোবাসে তাই সব্যসাচীর মতো মহাপ্রাণ ব্যক্তি নিজের আত্মীয়ের থেকেও তার অনেক বেশী কাছের।


৪। “কেবল আশ্চর্য সেই রোগা মুখের অদ্ভুত দুটি চোখের দৃষ্টি ” – কার চোখের কথা বলা হয়েছে ? চোখ দুটির বর্ণনা দাও।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবি’ রচনাংশের উদ্ধৃতাংশটিতে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক অর্থাৎ ছদ্মবেশি গিরিশ মহাপাত্রের চোখের কথা বলা হয়েছে।
রুগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারি গিরিশ মহাপাত্রের চেহারার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষনীয় ছিল তার দুটি চোখ ও চোখের দৃষ্টি। সেই চোখ ছোটো কি বড়ো, টানা কি গোল, দীপ্ত কি প্রভাহীন সে বিবরণ দিতে যাওয়া বৃথা। এক গভীর জলাশয়ের অতলতা তাঁর চোখ দুটিকে যেন অন্য মাত্রা দান করেছে। তার কোন অতলে চোখের মালিকের প্রাণ শক্তি লুকিয়ে আছে তা দেখে বোঝা যায় যে, ওই দৃষ্টির সম্মুখে খেলা চলবে না। সাবধানে দূরে সরে দাঁড়াতে হবে।


৫। “বুড়ো মানুষের কথাটা শোন” – বুড়ো মানুষ কে? তার কোন কথা শুনতে বলা হয়েছে?

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবি’ রচনাংশের আলোচ্য উদ্ধৃতিটিতে বুড়ো মানুষ বলতে স্নেহশীল ও পৌঢ় পুলিশ দারোগা নিমাইবাবু নিজেকে বোঝাতে চেয়েছেন।
গিরিশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশি বিপ্লবী সব্যসাচী বর্মায় এলে পুলিশ তাকে আটক করে। তল্লাশিতে তাঁর পকেট থেকে একটি গাঁজার কলকে পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি গাঁজা খাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। কিন্তু দারোগা নিমাইবাবু দেখেই বুঝতে পারেন যে গিরিশ মহাপাত্রের চেহারায় সর্বত্রই গাঁজা খাওয়ার লক্ষণ বিদ্যমান। তাই রুগ্ন স্বাস্থ্যের মহাপাত্রকে পরিণত বয়স্ক নিমাইবাবু স্নেহার্দ্র কণ্ঠে গাঁজা না খাওয়ার পরামর্শ দেন।


৬। গিরিশ মহাপাত্রের চেহারা কেমন ছিল?

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবি’ উপন্যাসের মূল চরিত্র বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক গিরিশ মহাপাত্রের তের ছদ্মবেশে বার্মায় আসেন। তার বেশভুষা ও চেহারা দেখে বিভ্রান্ত হয়ে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। তার খুব ফর্সা গায়ের রং রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে এসেছে। অত্যন্ত রোগা চেহারা, বয়স ৩০-৩২ -এর কোঠায় হলেও সর্বক্ষণ কাশির দমকে হাঁপাতে থাকা মানুষটির আয়ু সম্পর্কে সন্দেহ জাগে। কিন্তু তার উজ্জল ও গভীর চোখ দুটির দৃষ্টি অদ্ভূত। এরই কোনোও অতল তলে তাঁর ক্ষীণ প্রাণশক্তিটুকু লুকোনো আছে। মৃত্যুও যেন সেখানে প্রবেশ করতে সাহস করে না।


৭। “তাছাড়া আমার বড়ো লজ্জা এই যে” – অপূর্বর লজ্জার কারণ কি? সেটি তার কাছে লজ্জার কারণ হয়েছিল কেন?

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র অপূর্বর লজ্জার কারণ ছিল বাংলাদেশের দক্ষ পুলিশ নিমাইবাবু ছিলেন তার বাবার বন্ধু, আত্মীয় স্থানীয়।
দেশপ্রেমিক অপূর্বর চোখে দেশের শত্রু ইংরেজদের বহাল করা পুলিশ বাহিনীর কর্তা নিমাইবাবুর চাকরিটি ছিল দেশদ্রোহিতার। ইংরেজদের নুন খেয়ে তাদের হয়ে দেশের বিপ্লবীদের ধরপাকড় করাই ছিল নিমাইবাবুর মতো পুলিশদের কাজ। যে ইংরেজ প্রতিনিয়ত দেশবাসীকে শোষনে, পীড়নে, অপমানে, অত্যাচারে জর্জরিত করে তুলে সেই ইংরেজদের দাসত্বরত আত্মীয়কে আপন আত্মীয় বলতে অপূর্বর লজ্জাবোধ করেছে।


৮। “তুমি তো ইউরোপিয়ান নও” – কে কাকে বলেছিলেন? এর কারণ কি?

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবি’ পাঠ্যাংশে বার্মা পুলিশের জনৈক সাব ইন্সপেক্টর অপূর্বকে কথাটি বলেছিলেন।
অপূর্ব ট্রেনে করে ভামো নগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। প্রথম শেণীর টিকিট কেটে সে ভেবেছিল নিশ্চিন্ত মনে যাত্রা করতে পারবে, কিন্তু তা হয় নি। বিপ্লবী সব্যসাচীর বার্মা আসার খবর পেয়ে আতঙ্কিত ব্রিটিশ প্রশাসন অ-ইউরেপিয়ান যাত্রীদের নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। অপূর্বকেও বার তিনেক ঘুম ভাঙিয়ে তার নাম ঠিকানা জিজ্ঞেস করে গিয়েছিল। এই ভাবে বার বার পুলিশের লোক বিরক্ত করায় সে যখন প্রতিবাদ করে তখন বর্মার সাব ইন্সপেক্টর কটু কণ্ঠে আলোচ্য মন্তব্যটি করে।


৯। ‘তাছাড় এত বড়ো বন্ধু’ – এত বড় বন্ধু কে? বন্ধুত্বের পরিচয় দাও?

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবি’ রচনাংশে বন্ধু বলতে দরদি এক খ্রিষ্টান মেয়ের কথা বলা হয়েছে।
গতকাল রাতে অপূর্বর ঘরে চুরি হয়। কিন্তু তাঁর উপরের ঘরের খ্রিস্টান মেয়েটির দয়ায় টাকা পয়সা ছাড়া আর সমস্ত বেঁচে গেছে। সে চোর তাড়িয়ে দরজায় নিজে তালা বন্ধ করেছে। অপূর্ব ফিরে এলে চাবি খুলে ছড়ানো জিনিসপত্র গুছিয়ে দিয়েছে এবং কি কি আছে ও কি কি গেছে তার একটা ফর্দ তৈরি করে দিয়েছে। এই জন্য মেয়েটির তৎপরতা, কর্মকুশলতা অপূর্বকে মুগ্ধ করায় সে মেয়েটিকে যথার্থ বন্ধু বলে বিবেচনা করে উদ্ধৃত কথাটি বলেছে।


১০। “পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে নিমাইবাবুর সামনে হাজির করা হয়েছিল” – কাকে কেন নিমাইবাবুর সামনে হাজির করা হয়েছিল?

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত আমাদের পাঠ্য কাহিনী ‘পথের দাবি’ রচনায় রাজনৈতিক সন্দেহ ভাজন সবসাচী মল্লিককে পুলিশ অফিসার নিমাইবাবুর সামনে হাজির করা হয়েছিল।
পুলিশ অফিসারের ধারনা হয়েছিল যে, ছদ্মবেশধারী গিরীশ মহাপাত্রই হল সব্যসাচী মল্লিক। তিনি ছিলেন মহান বিপ্লবী, পরাধীন দেশের রাজ বিদ্রোহী ও মুক্তি পথের অগ্ৰদূত। ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্তির জন্য সমগ্র ভারতবর্ষ ব্যাপী যে আন্দোলন দানা বেঁধে ছিল তার ঢেউ বার্মা মুলুকেও আছড়ে পড়েছে। আর সেই কারণেই পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু সব্যসাচী মল্লিককে পাকড়াও করতে এসেছেন।


১১। “যাঁকে খুঁজছেন তার কালচারের কথাটা একবার ভেবে দেখুন” – বক্তা কে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির কোন কালচারের কথা বলেছেন?

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত আমাদের পাঠ্য কাহিনী ‘পথের দাবি’ রচনার আলোচ্য অংশটির বক্তা স্বদেশ প্রেমিক অপূর্ব।
গিরিশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশে থাকা সব্যসাচীকে যখন পুলিশ অফিসারের সামনে হাজির করা হল তখন তার পোশাক-পরিচ্ছদ, দৈহিক অবস্থা এবং তার ট্যাঁক ও পকেট থেকে পাওয়া জিনিসপত্র দেখে অপূর্ব নিশ্চিত হয় যে, এই ব্যক্তি কিছুতেই সব্যসাচী মল্লিক ধন।। কারণ, সব্যসাচী মল্লিক হলেন একজন মেধাবী, প্রজ্ঞাবান, বিলেত ফেরত, চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রি প্রাপ্ত ব্যক্তি। এই সব্যসাচী মল্লিকের কালচার আর অসুস্থ গিরিশ মহাপাত্রের কালচার যে একেবারেই আলাদা সে কথাই বলা হয়েছে আলোচ্য অংশে।


১২। “সহসা আশঙ্কা হয় সংসারের মেয়াদ বোধ করি বেশিদিন নাই” – বক্তা কে? তিনি কেন এমন উক্তি করেছেন ?

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত আমাদের পাঠ্য ‘পথের দাবি’ রচনায় আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন লেখক স্বয়ং।
রাজবিদ্রোহী সব্যসাচী মল্লিককে রেঙ্গুন পুলিশ আটক করে পুলিশের বড়োকর্তা নিমাইবাবুর কাছে হাজির করা হয়। তার গায়ের অতি গৌর বর্ণ রোদে পুড়ে, যেন তামাটে হয়ে গেছে। বয়স ৩০-৩২ বছরের বেশি না হলেও সর্বক্ষণ কাশির দমকে হাঁপাতে থাকা মানুষটির আয়ু সম্পর্কে সন্দেহ জাগে। ভিতরের কোনো এক অজানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে তার সমস্ত দেহটা দ্রুত বেগে ক্ষয়ের দিকে চলেছে । তাই লেখকের এরকম উক্তি।


১৩। দয়ার সাগর! পরকে সেজে দি, নিজে খাইনে” – আলোচ্য অংশের তৎপর্য লেখ।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবি’ রচনাংশে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে ধৃত গিরিশ মহাপাত্রের প্রতি বাংলার একজন পুলিশ অফিসার জগদীশবাবুর এই উক্তি।
গিরিশ মহাপাত্রের জিনিসপত্র তল্লাশি করে একটি গাঁজার কলকে পাওয়া যায়। কিন্তু তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে কলকেটি পথে কুড়িয়ে পেয়েছে। যদি কখনও কারও কাজে লাগে তাদের দেওয়ার জন্য সে নিজের কাছে কলকেটি রেখেছে। তার এই অদ্ভুত পরোপকারের ইচ্ছার জন্য জগদীশবাবু তাকে দয়ার সাগর বলেন।


১৪। “কই এই ঘটনা তো আমাকে বলেন নি” – বক্তা কে ? কোন ঘটনার কথা বলা হয়েছে ?

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত আমাদের পাঠ্য ‘পথের দাবি’ রচনার সংশ্লিষ্ট অংশটির বক্তা হলেন রামদাস তলওয়ারকর।
স্বদেশ প্রেমিক অপূর্ব রামদাসের সঙ্গে কথোপকথন কালে পরাধীনতার গ্লানিময় দিকের কথা তুলে ধরেছেন। শ্বেতাঙ্গ শাসকদের দ্বারা ভারতবাসী অত্যাচারিত ও লজ্জিত হত, অপূর্ব এদেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তাকে নিজের দেশেই অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। ফিরিঙ্গি যুবকেরা তাকে প্লাটফর্ম থেকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দেয়। অথচ আমাদের দেশের মানুষ দীর্ঘ পরাধীনতার কারণে তার বিন্দু মাত্র প্রতিবাদ করে নি। এই অপমান, অত্যাচারের কথা স্টেশন মাষ্টারকে জানাতে গেলে তিনি তাকে কুকুরের মতো বিতাড়িত করেন। এই ঘটনার কথাই আলোচ্য অংশে বলা হয়েছে।

রচনাধর্মী প্রশ্ন – উত্তর

Loading

Leave a Reply

error: